Monday, June 1, 2015

রহমানিয়া, এক আশা নিরাশার উপাখ্যান

সঙ্গীতের প্রতি বহুদিন যাবৎ আকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য খুব বেশি  মেলেনি এই জীবনে। যে কটিও বা, হয় কোন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বা রবীন্দ্রসঙ্গীত মূলত। অল্প কিছু একক বা সম্মিলিত প্রচেষ্টা যা আস্বাদন করার সৌভাগ্য হয়েছে তা নেহাত মন্দ লাগেনি, তবে তার কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা চলে না এ আর রহমানের, অন্তত নাম বা খ্যাতির দিক দিয়ে। অন্য মাপকাঠির প্রসঙ্গ ক্রমশ প্রকাশ্য।

এই দূরদেশেও অবশ্য রহমানের শ্রোতার কোন ঘাটতি নেই, যা পরিষ্কার হল টিকিট ক্রয় করার সময় তার চাহিদা দেখে। অবশ্য এই খ্যাতি কতটা স্লামডগ মিলিয়নেয়রজাত তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হল ৩০ মে'র জন্য। হাজার হোক শিকাগো শহরে ভারতীয়দের আনাগোনা তো সর্বজনবিদিত, এবং সেই ১৮৯৩ সাল থেকেই যে তাদের হুজুগেপনার অন্ত নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই রহমানসাহেব যে মাছি তাড়াবেন না একথা সকলের গোচরেই ছিল।

রহমানের গানের দ্বারা বিন্দুমাত্র উদ্বেলিত নয় এমন ভারতীয় মেলা ভার। শুধুমাত্র দেশপ্রেমের টানে যে তার পরিবেশনা দেখতে  ১০০ ২০০ মেইল দূর থেকে দর্শক ছুটে আসবে এমন কথা তার ঘোর নিন্দুকেও বলবে না। বিশেষ করে তার সঙ্গীতজীবনের প্রথম ভাগের গানের কথা ভাবলে নিঃসন্দেহে অধিকাংশ ভারতীয় আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। সেই কারণেই হয়তো আমার এবং বন্ধুজনের মধ্যে। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উপস্থিত হল সেই মুহূর্ত, যা ইতিপূর্বেই অনেকের মনে হয়ে উঠেছিল উজ্জ্বল। মঞ্চে এলেন তিনি সপার্ষদ, যার মধ্যে কেউ যে তেমন পরিচিত মুখ এমন নয়।  অবশ্য দর্শক সেসবের প্রত্যাশীও ছিল না যা তাদের হাবেভাবেই বেশ স্পষ্ট ছিল।

 শুরু করলেন তিনি আমাদের সেই নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে - রোজা, বোম্বে, সাথিয়া, তাল ইত্যাদি এবং আমরাও হারিয়ে গেলাম সেই তালের সাথী হয়ে।  একই সাথে বাহবা দিতে হবে তাদের পেশাদারিত্বের, রহমানের পাশাপাশি আর যার নাম করব তিনি হলেন যোনিতা গান্ধী, এক অনাবাসী ভারতীয় গায়িকা। অবশ্য গানের মধ্যে কখনো প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ ছিল না যে তিনি আদপে ভারতীয় নন। অনুষ্ঠান যে বেশ সুষ্টভাবে পরিকল্পিত তা নিয়ে সংশয় নেই।  তবু যেন অভাব রয়ে গেল কিছু। 

গানের ক্ষেত্রে অনেকেই সুরের মূর্ছনাকে অনেক উপরে স্থান দেন কথার মাধুর্যের থেকে, অস্বীকার করব না যে আমিও তাই দিয়ে থাকি। তবু কেন জানি না অসংখ্য তামিল তেলুগু গানের মাঝখানে কেমন যেন অতীষ্ট হয়ে উঠছিলাম থেকে থেকেই। প্রথমে তাও এমন গান যা আমার পূর্বপরিচিত, অর্থাৎ কিছু হিন্দি গানের তামিল সংস্করণ দিয়ে শুরু হয়েছিল এই পথ চলার, যা আপাত অজানা হলেও মন্দ লাগছিল না নেহাত। ক্রমশ অজানার গলিতে আরো অনুপ্রবেশ, এবং শুরু হল অস্বস্তির। নিজের আত্মিক বা পরিচিত ভাষার গুরুত্ব যেন আরো বেশী করে অনুভব করলাম আবার। সেই কারণেই হয়তো সামান্যতম সুযোগ পেলেই বাংলার কাছে ছুটে যেতে চাই বারবার। 'আমি বাংলায় হাসি, বাংলায় ভাষী বাংলায় জেগে রই'। এছাড়া এ কথা না মেনেও উপায় নেই যে সে গানের সুর এমন কিছু আহামরিও ছিল না যা করে রাখে মন্ত্রমুগ্ধ। তদুপরি এই ছাত্রবৃত্তির সামান্য সঞ্চয় থেকে যেটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম তাতে রহমান না পারার মাচার গেনুদা এ তফাৎ করা সম্ভব ছিল না বললেই চলে। কাজেই হতাশা বিরক্তি ইত্যাদি, এবং তা যে কেবল আমার নয় তা স্পষ্ট হল আমার সামনের সারির এক দর্শকের ফোনের দিকে নজর দিয়ে। সময় কাটানোর ফাঁকে তাকিয়ে দেখি তিনি লিখে পাঠিয়েছেন কাউকে 'উই আর অ্যাট দ্য এ আর রহমান শো। ইউ আর রাইট, ইট সাকস' স্পষ্টভাবে স্বল্পকথায় মত ব্যক্ত।