Saturday, December 26, 2015

হারায়ে খুঁজি

অনেকদিন স্বপ্ন দেখিনা
অবশ্যম্ভাবী ভাবে রঙিন স্বপ্নও দেখা হয় না তাই
দুঃখ হয়, আকাশকুসুম কল্পনায় বড় আত্মতৃপ্তি লাভ করতাম যে একদিন
অবশ্য শূন্যতা গ্রাস করতো হঠাৎ করে স্বপ্নভঙ্গ হলে
যেন আপ্রাণ আঁকড়ে ধরার চেষ্টা, আর একটু দেখতে দাও স্বপ্নটা
এখনো চাই না জাগরণ, প্রাণপণ লড়াই প্রায়ই হেরে যেতাম,
হতাশাব্যঞ্জক, তবু আজকের মত শূন্যতা নয়।

অথবা হারিয়ে যাচ্ছে সব স্মৃতি থেকে
অ্যামনেশিয়ার করালগ্রাসে পতিত হলাম নিজের অজান্তেই
হয়তো জানতাম, কিন্তু তাও হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকূপে
স্বপ্ন আর জাগরণের মাঝে যে দুঃসময় সেই খাদে ঝাঁপ দিতে হবে উদ্ধার করতে সেই অমূল্যরতন
কিন্তু সেই পথ এখনো অজানা, হয়তো কোন গুপ্ত সঙ্কেত
একদিন আসবে আমার কাছে, কিন্তু ধন্দ হয়
একবার সেই পথে যাত্রা করলে ফিরতে পারব কি?

নতুনত্বের প্রতি আকর্ষণ কিন্তু এখনো দূর্বার
নতুন স্বপ্ন, নতুন দর্জা, নতুন শূন্যতা
তবু অতীতকে পরিত্যাগ করতে এখনো এখনো সাহস পাই না, কিছুটা রক্ষণশীল বলেই,
লড়াই টা তাই লড়ব কি লড়ব না, সামনের সিঁড়িতে পা দেব কি দেব না,
চিন্তাজগতে ঘুরতে ঘুরতেই দেখি কখন ধাপটা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গিয়েছে, প্রস্তুতিপর্বেই
তারও যে প্রতিস্থাপন আসবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত
তবে সেই অচেনা পথে ঝাঁপিয়ে পড়ব তখন এমন প্রত্যয়প্রাপ্ত হইনি এই মুহূর্তেও।

Friday, December 25, 2015

মেরি ক্রিসমাস

বড় ছোট না, এমনি আরেকটা দিন। স্মৃতিমেদুর হওয়ার সুযোগ যে এই দিন নিয়ে জীবনে এমনও নয়, বস্তুত এই দিনটা মাঝে বহুদিন তেমনভাবে খেয়ালই করা হয়নি শুভ'র। তবে আজ বুঝি সমাপ্তি ঘটবে এই একঘেয়েমির। সত্যি শুভ চায় আজকের দিনটা যেন হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড়, সময়কালের গণ্ডী অতিক্রম করে এই সন্ধ্যাতেই ডুবে থাকুক সে ও অন্তরা। ছোট ছোট ধাপে শুরু হয়ে আজ পালা একটা বড় পদক্ষেপের। যীশুবাবা পার করেগা বলে মারের সাগর পারি দিয়েই ফেলল শুভ।

মেট্রো থেকে নেমে এশিয়াটিক সোসাইটি পেরিয়ে যেতে যেতে যেন এক অচেনা জায়গায় পা ফেলবার উপক্রম। ক্রিসমাস কার্নিভালে তার এই প্রথম আসা, অবশ্য উপলক্ষ অন্য। ক্রিশ্চান স্কুলে পড়াশোনা করেছে ১২ ক্লাস অবধি, তবে বারতি কোন উৎসাহ নেই এই অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে। আর বাজারের দ্বারা চালিত হওয়া বা আনন্দজোয়ারে ভেসে যাওয়া, কোন কিছুতেই তেমন রুচি নেই তেমন। সে ঘরকুনো বাঙ্গালী, কালী থেকে কার্নিভাল সব কিছুকেই দূর থেকে নিরীক্ষণ করাকেই শ্রেয় বলে মনে করে এসেছে এতকালের একাকীত্বের জীবনে। তাই ঈষৎ উত্তেজনা এবং অনুকম্পার মাঝেই হেঁটে চলেছে ম্যাগ্নোলিয়া ছাড়িয়ে অজস্র ভীরের মাঝে প্রিয় দুটি চোখ খুঁজে নিতে। খুব ছোট বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে চার্চে যাওয়ার সঙ্গে অবশ্য প্রচুর তফাৎ, তখন প্রতিটা পদক্ষেপেই ছিল প্রত্যয়, নিবিড় আশ্রয়ের মধ্যে থাকার কারণেই।

প্রায় তিনমাস হতে চলল আলাপ নেহাতই কাকতালীয় ভাবে ফেসবুকের একটি সাহিত্যের গ্রুপে আনন্দমেলার আলাপচারিতায়। তারপর অতীতের সরণী বেয়ে কখনো কাকাবাবু, কখনো মিতিনমাসীর হাত ধরে সমুদ্রসৈকতে শিহরিত  বা পাহাড়চূড়ায় আতঙ্কিত হওয়া। সাহিত্যরস গ্রহণ হিসাবে হয়তো তেমন বুদ্ধিজীবী শ্রেণীতে পড়ার দাবী করতে পারে না তারা, কিন্তু হৃদয়রসের দিক দিয়ে সেই শূন্যতা ভরাট করে দিয়েছিল তাদের ঐকান্তিক আবেগ। সাহিত্য থেকে গান, সিনেমা, ছবি দেওয়া নেওয়া, কারণ ছাড়াই এরপর কেটে যেতে থাকতো সময়। নিজের অজান্তেই কত স্বপ্নজাল বুনে ফেলা, প্রশ্রয়হীন এমনও বলা চলে না।
চারিদিকে অজস্র টুপির মাঝে তিন চারবার ফিরে এলো শুভ, ক্রমেই অধৈর্য হয়ে পড়ছে সে। ক্যারম টুর্নামেন্টে পাড়ার নাম ডুবিয়ে সেই কল্যাণী থেকে হাজির হয়েছে আজ সে কত আশা নিয়ে, সত্যি বল ভুল করল শুভ। অনলাইন ফ্রেন্ডশিপ কেবল ওই অবাস্তবের দুনিয়াতেই রাখা উচিৎ সীমাবদ্ধ, কত পোড়খাওয়া দাদা, বন্ধুদের মুখে শুনে এসেছে চিরকাল। কিন্তু সে তো অন্তরাকে অন্যরকম ভেবেছিল। হ্যাঁ খুব বেশী কিছু নিজেদের বিষয়ে কেউই জানেনা তারা। এবং অজানাই রাখতে চেয়েছিল শুধু এই দিনটার জন্য দুজনেই। ফোন নাম্বার না, কোন কিছুই না, আজ মনে হচ্ছে সব ভুল। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ, তবু আজ ব্লক বাটনটা টিপতে হাত কাঁপল না শুভ। ফিরে চলল তিন মাসের স্মৃতিটা ভিড়ের মাঝে ফেলে রেখে দিয়ে। তখন অন্তরা ক্রিসমাসের কেকের অর্ডার ঘরে ঘরে পৌঁছতে ব্যস্ত, মা'কে হাসপাতালে ভর্তি করে এসে। টাকাগুলো জোগাড় করে জমা দিতে হবে শীঘ্র, ডাক্তারের কড়া নির্দেশ অপরেশন আজকেই হওয়া চাই।

যেন ব্যঙ্গ করেই বেজে চলেছে পিছনে "উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস, অ্যান্ড আ হ্যাপি নিউ ইয়ার"।

Wednesday, December 23, 2015

পাপবোধ

অন্তঃসারশূন্যতার কামনায় একা যাই চিলেকোঠা ঘরে,
সোঁদা গন্ধ চেপে ধরে টুঁটিখানা তবু বসি মেঝের উপরে।
প্রাণহীন কত স্মৃতি জমে আছে, একদিন ছিল যা আত্মজ, 
আরো কিছু জমবে আজ, প্রাত্যহিক অবক্ষয় হয় যেন রোজও।
মনচক্ষে উঁকি দেয় এই ফাঁকে অজানা সে কত ভৈরবী,
নিজেকে জাগাতে ফের আজও আঁকি তোমাদের এলোমেলো ছবি।
মুক্তি দিই, তাও কেন তারা খোঁজে ফের কোন আয়েশি আশ্রয়
ক্ষুদ্র এই জীবনে সে এইটুকু বুঝে ফেলে - পৃথিবী নির্দয়।
বোধন হল না তবু বিসর্জনের পালা আসে ফিরে ফিরে
যদিও বা বাধা হই, তবুও তো উঁকি দেয় অতন্দ্র তিমিরে
বাধ্য হই, ক্লান্ত হই, সজ্ঞানেই ঘটে যায় কত শত জেনা
অন্ধকার কুঠুরিতে যার কথা কেউ বুঝি জানতে পারবেনা।

Monday, December 14, 2015

অনাম্নী

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বর্ণময় গতিশীল তাও তো ফ্যাকাসে
কলরোল, বহুভোগ, অগুনতির মনোযোগ, তবুও একা সে
অন্তহীন সমাহার, সবে আছে অধিকার, অপ্রাপ্য দীনতা
শুধু বুঝি তারই ফাঁকে নিশ্চুপ আওয়াজে ডাকে লুপ্ত স্বাধীনতা।

হারিয়েছে হয়তো আরো বেরঙিন চশমায় যা আছে লুকোনো
সমস্ত তারুণ্য বুঝি ব্লিচিংয়েতে ধৌত হয়ে সজোরে নিংড়নো 
নর্দমায় বয়ে গেল সে অশেষ সম্পদ, শুধে চেয়ে থাকা
যেমন অস্থির কালে কালো মেঘে উড়ে যায় দূরের বলাকা

তেমনি আকাশ ছিল অন্ধকার বলরুমে উদ্দামের মাঝে
যদিও সেটার নাম অন্য কিছু আমাদের ঘুমন্ত সমাজে।

Thursday, December 10, 2015

ভাল ছেলে

আমি আসলে কেবল ভাল হতে চেয়েছিলাম
কিন্তু ভাল হওয়া অত সহজ নয়
ভাল হতে চাইলেও কিন্তু অনেকখানি খারাপ হতে হয়
সহজ ইকুয়েশন, কিন্তু আরও বেশী সহজ করতে গিয়েই বুঝি জটিল হয়ে গেল জীবনবৃত্তি।

সব কিছু নিখুঁত হবে, নিশ্ছিদ্র নৈতিকতা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি
এই নৈতিকতার বেড়াজাল, আর আকুলিবিকুলি করতে থাকা অনৈতিক মন
চোখের সামনে ধরে থাকা আইডিয়ালগুলো আবার করতে চায় বিভ্রান্ত
সোশ্যাল কন্ডিশনিং এইভাবেই বিষিয়ে দিয়েছে স্বন্তন্ত্র চিন্তার প্রয়াসী মস্তিষ্ককে।

আর আছে দৈবত্বের লোভ, শ্রেষ্ঠত্বের এই অনুভূতি হার মানায় অফুরন্ত জহরতকে
তাই রচে যাই কখনো বা ভিক্টিমহুডের গাঁথা, সকলকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে
আনন্দ, আত্মতৃপ্তি, জয়, সব কিছুই মিশে থাকে সেই মর্মস্পর্শী উপাখ্যানে
শুধু সত্যিটা ছাড়া, কারণ তাকে স্পর্শ করতে চাইলেও যে একটু খারাপ হতে হবে।

Tuesday, December 8, 2015

শুদ্ধির কাব্য

যখন চারপাশ দেখি, অবিন্যস্ত
দিগভ্রান্ত, হাতড়াই দিগ্বিদিক
অন্ধকার আরো গাঢ় বুঝি
চলে গেল কিছু যা প্রান্তিক।
রয়ে গেল কিছু চিন্তারাজি
অফুরন্ত সময়কাল কাটে
অজান্তেই অচেনা নমাজি
ধাক্কা দিল সহসা সপাটে।
এইভাবেই বুঝি কিছু শুরু
সংজ্ঞাহীন, ধিকিধিকি জ্বলে
সে আগুনে শুদ্ধ হই কিছু
আর কিছু ভস্ম সে অনলে।

Saturday, December 5, 2015

দ্বিচারিতা

সংগ্রাম শুধু অস্তিত্বের, নীতির প্রশ্ন নরকে
কিছু স্বপ্ন সে চোরাবালিতেই ডুবে মরে এক পলকে
রয়ে যায় শুধু স্মৃতিচিহ্নের ফলক ক্ষুদ্র আলেয়া
কিছু কাস্তের দর বাড়াতেই রক্তেতে শান দেওয়া ।

তর্কের নীতি একমাত্রিক, রাস্তায় হাঁটা দস্তুর
বিপরীতগামী পথ মারালেই ওড়ে খিস্তির মাস্তুল
আবেগ পেয়েছে বুর্জোয়া ছাপ ট্রটস্কাইটের জাঙিয়া,
কিছু কাস্তের দর বাড়াতেই রক্তেতে শান দেওয়া ।

অবিশ্রান্ত স্রোতের মিছিল, বিশ্রাম নেই জনতার 
যতদিন আছে সামনে ও পিছে উৎস আসল ক্ষমতার 
অভ্যাসগত হয়ে গেছে বুঝি, আপনি জাগায় সমীহা 
মাঝে শুধু চলে জঙ ছাড়াতেই  রক্তেতে শান দেওয়া । 

Wednesday, December 2, 2015

সাধ্যাতীত

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কবিতার সাধ্যের অতীত, সবকিছু ছেড়ে তাই অসীম অনন্তপথ ধরি। আসলেতে বল্গাহীন, তবু আজ ফিরেছে সম্বিৎ, স্পর্শসুখ ছিল কিছু অব্যক্ত, অস্পষ্ট, অশরীরী।

আজ সেই পারি বেয়ে বুঝি কোন অনুশোচনা নেই, প্রত্যেক কণায় কিছু রয়ে গেছে রঙের মিশ্রণ;
কাটাকুটি খেলা শেষে শূন্যস্থান পুরি বাস্তবেই ,
তবু কেন নতমুখে ছুঁল কোন উষ্ণ প্রস্রবণ?
তীব্রতার ঊর্ধ্বে উঠে সোনাঝরা শুকনো মাটি ছুঁয়ে পৌঁছে গেছি দূর গাঁয়ে, যেইখানে রক্তজবা ফোটে- অনুভূতি কিছু থাক ভালোবাসা শোণিতেতে নুয়ে আর থাক কিছুখানি লিখে রাখা অক্ষয় তুলোটে।