Friday, January 29, 2016

সেই দিন

আসবে সেসব দিন, শীঘ্রই, প্রতীক্ষা তাদেরই
কৃত্রিম আবরণ খসে যেতে হয় না বেশী দেরী
এ মোহ সমূলে যবে উৎসাদিত হবে সে সময়
ক্ষোভ মনে পুঞ্জিভূত করো না যা যথোচিত নয়।
যখন দেওয়ার শেষ, কামনা যা কুণ্ডলীভূত
যেটুকু চয়িত ছিল তাও সময়ের স্রোতে স্রুত
যখন ধূসর কাল শুষে নেবে সম্পূর্ণ আমায়
তখন গল্পের শেষে আর কি চাইবে বিছানায়?
হাসি নয় রঙ্গ নয় শুধু রিক্ততার অঞ্জলি
প্রেমালাপ পরাহত শুধু বাস্তবের কথাকলি,
আধিক্লিষ্ট বর্ণহীন ভবিষ্যৎ সে গল্পই বলে
তাতেই আশ্বস্ত হলে এরপরও কথা কওয়া চলে।

Thursday, January 28, 2016

অজানা কিছু দিনের কথা

আমাদের জীবনে অনেক মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে, তার মধ্যে হাতে গোনা কিছু মানুষ প্রভাব বিস্তার করে আপাতভাবে আমাদের উপর। এছাড়াও কিন্তু প্রতিনিয়তই অজস্র মানুষের সাহচর্য পাই যা আমাদের অন্তরে রয়ে যায় নগণ্য ভূমিকার অধিকারী হিসাবে। এর মধ্যে থাকে হয়তো আমাদের নিকটাত্মীয় অনেক মানুষ, যারা চাইলেও আমাদের পরমাত্মীয় হয়ে উঠতে পারেননি কিছুটা আমাদেরই গাফিলতিতে। কিছু তাদের প্রভাব আমরা আমাদের জীবনে যতই অস্বীকার করতে যাই, হাসেন অন্তর্যামী। কিছু প্রভাব সুস্পষ্ট, কারণ তাতে মিশে আছে বলপ্রয়োগ, কিছু প্রভাব সূক্ষ্ম, কিন্তু তা অযত্নশীল এবং তাই আমাদের উপেক্ষার পাত্র হয়েই রয়ে যায় চিরদিন, যদিও আমাদের মননে তারই সংখ্যাধিক্য। তেমনই কিছু মানুষের গল্প মাঝেমাঝে আমাদের চোখের সামনে আচম্বিতেই ঝলক লাগিয়ে আমাদের অবাক করে দেয়, যদিও আপাতদৃষ্টিতে তা তেমন কিছু আশ্চর্যজনক নয়। হয়তো সেই কারণেই বিস্মিত হই এতো বেশী।

অনুভূতি, জীবনদর্শন, ইতিহাস, সব অস্তাচলে নিমগ্ন হয়ে যায় প্রতিনিয়ত, আমাদের চোখের সামনেই অথচ অগোচরে। বিবিধের মাঝে মহানের খোঁজ করা ছেড়ে এসেছি কতকাল পূর্বেই। অথচ এই সামান্য কিছু অসামান্য কাহিনী আমাদের বলে দেয় কত ভালোবাসার, কত সাম্যের কথা, কত পূর্ণতার কথা। অতীতের এই উপাখ্যান কে অস্বীকার করে নেয়, তার প্রতি কিছু সহানুভূতি নিয়ে যদি আমরা একটু পথচলার চেষ্টা করতাম, তাহলে হয়তো জীবনের অনেক দুঃসহ গাঁথার সমাধান অনেক সহজেই প্রাপ্ত হতাম।

তেমনই গল্পের রসদ পাই আমাদের ঠাকুমা দিদিমাদের থেকে, যাদের দেখে আসছি ছোট থেকেই এবং দূরে ঠেলে আসছি সময়ের সাথে সাথে আরও দূর্বার গতিতে। তেমনই এক ঠাকুমার কথা বলার জন্য এত ভণিতা, যিনি জন্মেছিলেন এক রাজপরিবারে। অস্থির সময়, ধর্মের রাজনীতি তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল তার ধনসম্পদের সাথে সাথে তার পরিচয়টাও, তার শৈশব কৈশোর সবকিছুই চিহ্নিত হয়েছে অলীক কুনাট্য হিসাবে, এমনকি তার কাছের মানুষের থেকেও। একা হয়ে গিয়েছেন ক্রমশ নিজের দুনিয়ায়, তবু সযত্নে লালন করেছেন সেই স্মৃতিকেই। দুঃস্বপ্নের যন্ত্রণা বলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়তো সহজ কাজ, অন্তত সময়ের স্রোতে ভেসে চলার জন্য তাই আমাদের বর্তমান রীতি, তবু বিশ্বাসের উপর ভর করে বেঁচে চলার প্রত্যয় সার্বজনীন না হলেও সম্পূর্ণ অবলুপ্ত নয়।

রাজপরিবার সম্পর্কে আধুনিককালে অনেকের মনেই একটি সন্দেহ এবং ঘৃণার ভাব প্রকট হয়, ঐশ্বর্যের সাথে সাথে এই বাস্তবের সাথেও তাদের হয়তো বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে। অত্যাচারী যে তারা একেবারেই নন এমন দাবী করাও হয়তো চলে না, অথবা অর্থের অপচয় যে তারা করেননি এমনও হলফ করে বলা চলে না। তবু নিজেদের মত করে উন্নয়নের চেষ্টাও যে তারা করেননি এমনও নয়। হাতিশালে হাতি ঘোড়াশালে ঘোড়ার সাথে সাথে শিক্ষাঙ্গনের উন্নতির প্রতিও তারা কিঞ্চিৎ মনোযোগ অবশ্যই দিয়েছেন, এমন সেখানে রাজপরিবারের সন্তানদের পাশাপাশি প্রজাদের বঞ্চিত করে রাখার প্রচেষ্টা বিদ্যমান ছিল না। আর দশটা সাধারণ বাঙ্গালী পরিবারের তুলনায় জীবনধারণে বাত্যয় ছিল না, হাসিকান্না ভালোবাসা রাজকীয়তার সাথে লোপ পায় এমন ধারণা আমরা যদি করে থাকি তাহলে তা বাস্তবের সাথে তেমন সাযুজ্য রাখে না। নারী হিসাবে প্রাচুর্যের মধ্যেও অবশ্য অপ্রাপ্তির অন্ত নেই সেই যুগের সাথে তাল মিলিয়েই, খাওয়া দাওয়া শিক্ষা ইত্যাদির ক্ষেত্রে, আবার সেই সাথে খুনসুটির গল্পও। তবে বুর্জোয়াদের আয়েশি গল্পের সাথে তা মেলে না, বরং  স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধারণা এমন সুস্পষ্ট করে কম মানুষের মধ্যেই দেখেছি, পারিবারিক নানা অশান্তির কারণেও যা ত্যাগ করেননি তিনি আদর্শ হিসাবে। বর্তমানের কাঁচ চোখ থেমে নামিয়ে ফেললে যেন চলে আসে আশ্চর্যজনকভাবে অনেক বেশী স্বচ্ছতা। 'দূর'দৃষ্টিসম্পন্ন যে আমরা এখনো হয়ে উঠিনি এতোটুকু তা আবার অনুভব করতে হয়, সে যতই তা নিয়ে গর্ববোধ করি না কেন। বর্তমানে কেবল অতীতকে অযৌক্তিক ঘৃণা করাই নয়, বরং  তার থেকেও বেশী আমরা নিজেরাই পিছিয়ে গিয়েছি অনেক দিক থেকে সেই অতীতের চেয়েও। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের এই হালের শাইন করার বিষয়ে খেদোক্তি দেখে যতই আমরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি না কেন, তার প্রতি মুখ ফিরিয়ে থাকা বোধকরি সম্ভব নয়। 

Tuesday, January 26, 2016

দেশের কথা

বাৎসরিক পতাকার উত্তোলন হল ধীরে ধীরে 
সাড়ম্বর আয়োজন, রাষ্ট্র করে প্রভাব বিস্তার 
সাজো সাজো রব শেষে ফিরে যাওয়া পুরনো তিমিরে 
মাঝে স্বাদবদলের জন্য কিছু ষোড়শোপাচার।   

এভাবে থাকব ভুলে, যোগ দেব আত্মপরিচয়ে
শিল্পনৈপুণ্যেতে গড়া ক্রমান্বয়ে কৃত্রিম সাজ
ক্রমশ আত্মস্থ করা প্রতিটি প্রতীক, ধীর লয়ে, 
ক্রমশ মানিয়ে নেওয়া বিরচিত পরিচয় আজ।     

ভাঙতে চাই আখ্যায়িকা, আমার কথাকে স্থান দিতে।  
অসম লড়াই, লড়ি, প্রতিক্ষণে অবস্থ হারাই;   
তবুও কর্ষণ চলে প্রস্তরীভূত সে জমিতে,  
নিজেকে যতই ভুলি তবুও তো প্রতিবাদ চাই। 

Thursday, January 21, 2016

তি-রোহিত

আজও দেখি মৃত্যু নিয়ে আসে কত নব বিনির্মাণ, দাঁড়িপাল্লা বাটখারা, কিলোদরে কেনা বেচা প্রাণ সর্বত্র সে গড়ে চলা আধুনিক নন্দিত শ্মশান ।
কাটাছেঁড়া শেষ হল, কোন এক দিকে পাল্লা ভারি যদিও তা অনিবার্য, খরস্রোতে কে বা দেবে পাড়ি অতএব সেজে ওঠে হুডখোলা শববাহী গাড়ি ।
অন্ধকার দিন শেষে বুঝি এলো এক কণা আলো, পেয়েছে শরীর এক, ব্যবচ্ছেদ করা যাবে ভালো জীবনে সে যাই পাক মরণটা হোক জমকালো।
আগুন নিয়েছ হাতে, খেলা যাবে, যথেচ্ছ মন্ত্রণা ঘৃতাহুতি, নইলে যে খাণ্ডব দহন হবে না!! জ্বলবে তুমিও, জানি সেই ভয়ে তবু পিছাবে না!
এভাবেই জয় ভাবো সমাজকে ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে পাক্ষিক মানবতা, উত্তর-আধুনিক রঙে রেঙে ধ্বস্ত তোমারই হাতে ফিরছ যে সহিষ্ণুতা মেগে।
নিয়মও আছে সে গড়া, যার ফাঁদে রিক্ত কণ্ঠস্বর আত্মগ্রাহী, তাই বুঝি চিরায়ত নব-কলেবর। বিপ্লব? সে পথেও একা হাঁটা বড়ই দুষ্কর!

Saturday, January 16, 2016

লিখি

লিখছি অনেকদিন, একেক সময় বেগ আসে আবার ঝিমিয়ে পড়ি।
 হয়তো পরিবর্তন এসেছে শব্দাবলীতে, চিন্তাগুলিতে, জ্ঞানের থলীতে;
হয়তো আসেনি --
বিচারকের আসনে কেবল আমিই,
আমির কাছে আমি থেকে গিয়েছি সেই এক বিন্দুতে; পরিবর্তন আসুক বা না আসুক।

পরিচিত সত্ত্বাকে চেনা স্বস্তিদায়ক,
আরামদায়ক, অক্লান্তিকর,
নিরর্থক অতীতের ঝাঁপিতে হাত ঢোকানো আর হয়ে ওঠে না তাই।
কোন গুপ্ত কালসাপ হয়তো ফণা তুলে অপেক্ষারত সেই গোপন কুলুঙ্গিতে।
তার বিষের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এক আমির কাছে,
যার কাছে ফিরে যেতে পারি কেবল একটাই শর্তে।
সেই শর্ত কিছুই না, কেবল স্বাভাবিকতা।

কোন নৌকা চরব না, কোন মেট্রো ধরব না, কারো ধাক্কায় নড়ব না।
 তাও যদি পৌঁছে যাই অচিনপুরে তবে
 খুশিমনেই মেনে নেব আমার প্রারব্ধকে।
পরিত্রাণ সাধ্যের অতীত, এক সে হতে পারে আত্মহননের মাধ্যমে।
তবে সেই পরিশ্রমটুকু যদি মেনে নিই তবে তো আরো কত কিছু,
কত ফেলে আসা বাঁক, কত ঝুরঝুরে টিলা, কত ভাবনার অছিলা--
 ঘুরে দেখে আসবো নাকি আরেকবার?
প্রতিটা পদক্ষেপ, ফেলে দেখব নাকি অন্য ভাবে?
কবে এসে ফিরতে পারবো এই বন্দরে?
হয়তো অনেক সোজাপথে চলে এলাম আবার জীবনের এই দোরগোড়ায়।
আশ্চর্য তো কম হলাম না এই জীবনে,
আশ্চর্য হই-- অভ্যস্ত হই,
তবু পুনরায় আশ্চর্য হই বৈচিত্র্যের কাছে।
পরাবর্তন হয় না, সেই বৈচিত্র্যেরই কাছে।  

Thursday, January 7, 2016

আত্মসংবরণ

অনুভূতি আসছে থরে থরে, আছড়ে পড়ে ঢেউয়ের প্রমাণ  
কিন্তু আমি তীরবর্তী নই ভিজব না সে সিদ্ধান্ত নেওয়া  
ঝাপটাগুলো সয়েছি অনেক, অত্যাধিকই, ভীষ্মের সমান 
শরশয্যা, যন্ত্রণার ভিড়ে, ছুঁতে কিছু ছিল যা আলেয়া।  

শ্রমজীবী যেন প্রাত্যহিক দিনগত কর্মযজ্ঞে নামে,   
সঙ্কলিত হতে থাকে কোথা রাসায়নিক বিরক্তি বিক্রিয়া,
অপেক্ষায় তারপর থাকা, বিস্ফোরণ সেই শান্তিধামে।
জানি আমি বুর্জোয়ার দলে, তবু বুঝি জমে প্রতিক্রিয়া ।।

আত্মসংবরণে তাও চলি, কেউ বুঝি প্রক্রিয়া থামায়।
বিপ্লবেতে অধিকার আমারও, যদিও তা মানবিক রূপে 
হয়তো তাই বাধ সাধে কিছু, নিষ্ঠুর প্রকাশ ভঙ্গিমায়
সংগ্রামের ইচ্ছা যাই হোক, সরে গেছি নিজেই নিশ্চুপে । 

Saturday, January 2, 2016

পুনরায়

এতদিন ধরে লালিত করেছি স্নেহভরা অভিমানে, কখনো হয়েছে বোঝা কখনো বা নিষ্ঠুর পরিহাস, টুঁটি চেপে ধরে কখনো, কখনো মুক্তির অভিলাষ, তবুও এখনো অস্ত্র আমার অবলা পরিত্রাণে। ঘৃণা ভরে তবু চাইতে পারি না বিচ্ছেদ বিষবৎ, স্মৃতির পাতায় যা ছিল আজকে তাতেই বুলাই হাত, ক্ষণে ক্ষণে তবু জমা হয় কিছু দ্বন্দ্ব অকস্মাৎ, খেয়ালী বিধির বিচরণই দেখে কাটাব ভবিষ্যৎ।
এই ছিল বুঝি এই গেল চলে জোনাকির মত জ্বলে, অনিশ্চিতের আহ্বান, তবু তার মাঝে খুঁজি দিশা, এরই মত কিছু প্রশ্ন যাদের লক্ষ্য নয় জিগীষা, তারাই তোমার ডাক বয়ে আনে অপলক হিল্লোলে। 


আহ্বান শুনি, ক্ষণেকে ভুলাই, প্রতিরোধ ছারখার, যদিও আবার এই পথে যাব পুনরায় তাও জানো, অচেনা তবুও চেনা পথ, স্মৃতি স্বচ্ছতায় নিকানো,
তাই বুঝি পাই আকর্ষণের নিশিডাক প্রতিবার।