Wednesday, August 26, 2015

ছাত্ররাজনৈতিক অভিজ্ঞতা

ছাত্র রাজনীতির সাথে সেভাবে কোনদিন যুক্ত ছিলাম না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিকরণের পক্ষে কোনদিন ছিলাম না। তাই হয়তো সারা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির যে কদর্য রূপ আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে এসেছে এবং আসছে তা হয়তো অবচেতনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে অনেকাংশে।
কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করার জায়গা নেই যে বিভিন্ন সময়ই কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অন্যায় অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অসংগঠিত ছাত্রেরা হৃদয়ভরা আবেগ, দুচোখ ভরা স্বপ্ন এবং ঋজু মেরুদণ্ড সত্ত্বেও উড়ে যায় খড়কুটোর মত। আমার ভেতরের কোন এক অজানা প্রতিষ্ঠানবিরোধী সত্ত্বা তাই ছাত্ররাজনীতিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে পারে না।
ছাত্ররাজনীতির যে দিকটা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিত করে তোলে এবং যা হয়তো অনেককেই এর থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য করে তা হল এর বিশৃঙ্খলা। এছাড়া নীতিহীনতা, খবরদারী ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই। সংগঠন বৃদ্ধির তাগিদে এমন মানুষকে সঙ্গে আনা যারা হয়তো আদর্শের দিক দিয়ে এর ধারে কাছে নেই, অথবা বলপূর্বক মানুষকে সংগঠনে যুক্ত করা।

আজ অনেকদিন বাদে একসাথে দুইটি ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটলো নিজের অজান্তেই। একটি এস এফ আই, অন্যটি ডি এস ও। অতীতে তাদের অনেক সংঘর্ষ(হয়তো একপক্ষের মদতে) সম্পর্কে  আমরা জ্ঞাত হয়েছি, তবে আজ তেমন কিছু চোখে পড়ল না। কিন্তু তাদের পথচলতি মানুষের সামনে নিজেদের উপস্থাপনের ভঙ্গি নিঃসন্দেহে একটা তফাৎ স্পষ্ট করে দিল।

মহাত্মা গান্ধী রোডে আটকে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে বাস ছেড়ে নেমে এলাম পথে, গন্তব্য কলেজ স্ট্রিট। দেখি অগণিত ছাত্র, কলেজ, স্কুল বা তাও নয়, বিপ্লবের সংলাপ সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত করতে করতে এগিয়ে চলেছে এমন কোন নতুন দিনের স্বপ্নের কথা জানাতে যা ইতিপূর্বে তাদের রাত্রিকে আলোকিত করেছে কিনা সন্দেহ। ভবিষ্যতের কথাও তথৈবচ। এবং খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রাপ্তির ভাণ্ডারে থাকছে পথচলতি মানুষের হয়রানিজাত শাপশাপান্ত।

সেই মিছিলের জ্বালায় সেঁধিয়ে গেলাম আনন্দের শোরুমে, উদ্দেশ্য অবশ্যই বিনামূল্যে একটু হাওয়া খেয়ে নেওয়া। খানিকক্ষণ বাদে কানে ভাসতে থাকল গীটার সহযোগে কিছু গান যা, অস্বীকার করব না, বেশ শ্রুতিমধুর ঠেকছিল। এগিয়ে গেলাম উৎসসন্ধানে ঔৎসুক্যের সাথে। দেখলাম একটা সুসংগঠিত কর্মসূচি। গানের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতাও যেন কোন এক শৃঙ্খলার ইঙ্গিত বহণ করে।
গানের ভক্ত আমি এমনিতেও, আবার মোহিত হলাম যেন বেশ কিছু চেনা, কিছু অচেনা সুর কথার সাথে পরিচিত হয়ে। চলে এলাম, তাদের কর্মসূচির দাবীদাওয়ার কথা না জেনেই, তবু তার মাঝে কেন জানি মনে হল উপস্থিত অনেকেই কিন্তু সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যা খুব জরুরী অন্তত আমার মতে। টিভির মাধ্যমে চেনা এক মুখ দেখলাম সেখানে, ঝালমুড়ির ঠোঙা হাতে বোধকরি। আলোড়ন ফেলেছিলেন তিনি আচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করে। এই ঝালমুড়ির কথা কেন প্রাসঙ্গিক জানি, কিন্তু কেন জানিনা এসব কিছু জিনিস বোধকরি অবচেতনেই কোন বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠে।
কর্মসূচির সব কিছুই হয়তো সংগঠিত হওয়ার ফলস্বরূপ। পুরো বক্তব্য হয়তো নিছক কিছু দৃশ্য এবং তৎসম্পর্কিত নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে, যাতে অবশ্যম্ভাবী ভাবে মিশে আছে কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ, এবং মিশে আছে হয়তো রাজনৈতিক অজ্ঞতা এবং অপরিপক্কতা। অনেকে বলবেন হয়তো এতেও আছে কোন শ্রেণিগত বিশ্লেষণ, তবে অধিকাংশ জনের মতামত তো এই ধরণের ছুটকো আপাত অসার কিছু ঘটলাবলীর ভিত্তিতেই তৈরি হয়।

Monday, August 24, 2015

অদৃষ্ট


ভ্রূক্ষেপ নেই কিছুতেই। 
তবু যন্ত্রণা শুধু এই, 
অবসরহীন জীবনযাপনে যদি ওঠে ঝড় দুর্বার, 
সহসা আঘাতে বিশ্বের সাথে
কালরাত্রীর কঠিন কড়াতে হয় বিশ্বাস চুরমার।

আলোড়ন মাঝে স্থিতধী
আমি তো কখনো সে নহি
দ্বন্দ্বের ফের পরিবর্তনে গিয়েছি জীবনে পিষ্টে 
এখন আমার সময় থামার
আলো করি ফের পশুর খামার, লেখা যা ছিল অদৃষ্টে।

হয়তো আমার বিনির্মাণেই
অস্থির কাল রয়ে গেছে সেই
অসাবধানতা অবলম্বনে আচম্বিতেই স্তব্ধ, 
তবুও সহজে মেনে নেওয়া সাজে
এই বিশ্বাসটুকু সাথে নিয়ে আজে, আসলে সবই প্রারব্ধ।



Saturday, August 22, 2015

যুক্তির বয়ান

যুক্তি দিয়ে তর্কাতর্কি তাতেই ছিলাম ব্যস্ত 
সময় গেল অতর্কিতে অজানা কোন প্রান্তে
যুক্তিরাজির সমস্ত দায় আমার পরেই ন্যস্ত
সঙ্গী করে তাকেই কেবল হারিয়েছি বনান্তে।

নিঃস্ব এখন রয়েছে সাথে কেবল কিছু যুক্তি
খুঁজতে যে চাই অন্য কিছু, করেছি যার সৎকার
এখন বুঝি সে হতাশাই করতে চাই দ্বিরুক্তি
নিজের কাছে নিতেই হবে নিজের হাতের দায়ভার।

ভালবাসার কাঙালি আজ, অবশেষেই অস্থির
কী বা আশা তবুও করা শুকনো স্বীকারোক্তি
আসলে এ শুধুই বিলাপ, করছি না ফের তদ্বির
শেষের কথা বলে খালাশ ছিল এতোই শক্তি। 



Wednesday, August 12, 2015

আটপৌরে

আটপৌরে ভাবনা কেবল,
এক ফোঁটাও সে অতীন্দ্রিয়ের কল্পনা নেই
তবুও বুঝি খোলামকুচির 
নোটের তরে কাগজ কালি গচ্চা যাবেই।

আটপৌরের দল ভারী সেই
তবুও যেন তাদের কথা ভীষণ রেয়ার
তাই তো লিখি তাদের কথা
নইলে সে সব গল্পগুলো কে বলে আর।

ছন্দবয়ান মকশো করে,
অসংলগ্ন কথার তোরে বৃথাই ভ্রমণ
মগজ যতই আশকারা দিক
সংগোপনে উলটো পথে যাচ্ছিল মন।

নিজেই বুঝি দুভাগ হলাম
অবশ্য তা মন্দ কি আর, ডবল রোলে
কত লোকেই সারা জীবন
কাটিয়ে দিল, এটারই আজ বাজার বলে।

Monday, August 3, 2015

ইয়াকুব

ইয়াকুব মালিক-- হয়তো বা কিছু মানুষের কাছে ছিল স্মৃতির গভীরে, কিছু মানুষের কাছে সততই মগজের ক্যানভাসে ভেসে ওঠা একটা নাম। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ কিন্তু আদপে একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা হতে পারে, কেউ হয়তো তার আপনজন, কেউ তার আপনজনের হত্যাকারী হিসাবে মনে রাখে ইয়াকুবকে। এদের ছেড়ে দিলেও ভারতের অসংখ্য জনসাধারণের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল ইয়াকুব ভারতের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ঘটনার আইনি পরিণতির রূপ হিসাবে।
ফাঁসির আদেশ তাকে নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত সবাই শুনিয়েছে বেশ কিছুদিন যাবৎ, এমন কি রাষ্ট্রপতি ক্ষমাভিক্ষার অর্র্জি ফিরিয়েছেন তাও কিছুদিন হল।  অবশেষে সেই শেষ সময় কাছাকাছি আসার সাথে সাথে আবার বেশ কিছু চর্চা শুরু হল, যা হয়তো আগেও হয়েছে কিছু কম মাত্রায়। এমনিতে ভারতে ইদানিংকালে মৃত্যদন্ড খুব বেশি কার্যকর হয়নি, যাও বা হয়েছে তাও খুব চুপচাপ অনেকের অজ্ঞাতসারে। কিন্তু এই ঘটনাটি হয়ে উঠল বহুলচর্চিত একটি বিষয়।
মৃত্যুদন্ডের উপযোগিতা নিয়ে অনেকদিন যাবৎ আলাপ আলোচনা চলছেই, প্রায় প্রতিটি মৃত্যুদন্ডের সময় আবার তা মাথাচাড়া দেয়।  স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে বিভিন্ন দেশের কথা যারা এই প্রথা বর্জন করেছে। কিন্তু সেই অর্থে এই বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়না, বা হলেও তা থেকে যায় সাধারণ নাগরিকের কাছে অজানা। ভারতের ক্ষেত্র আলাদা করে পর্যালোচনা করে, বিশেষ করে সীমান্তপারের সম্পর্ক, এবং জঙ্গি হামলার ইতিহাস পর্যালোচনা করে, বা ভারতের ভূমন্ডলে এই শাস্তির মনস্তাত্ত্বিক ফল অপরাধপ্রবণতার উপর কেমন প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার এখনো অভাব রয়ে গেছে।
অবশ্য অনেকে আছেন যারা এই মৃত্যুদন্ডের বিরোধিতা না করেও ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার পক্ষে। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হল ইয়াকুবের আত্মসমর্পণ। তার সপক্ষে তারা ভারতের প্রাক্তন গোয়েন্দা বি রমনের ২০০৭ সালে রচিত একটি প্রবন্ধ উল্লেখ করছেন। সমস্যা হল তিনিও দাবি করেছেন যে ইয়াকুব একদা আত্মসমর্পণ করার বাসনা নিয়ে নেপাল এলেও আইনজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সে বাসনা ত্যাগ করে ফের পারি দিচ্ছিলেন করাচীতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার এবং তার পরিবারের ভারতীয় পাসপোর্টের কারণে তিনি ধরা পরে যান। তিনি অবশ্য অনেক প্রামান্য নথী নিয়ে রেখেছিলেন নিজের কাছে, যা পরে তদন্তে সাহায্য করে।  কিন্তু যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণের বাসনা ত্যাগ করেই ফেলেছিলেন তখন কাজেই সেই যুক্তিতে ফাঁসির বিরোধিতা টেকে না।
দ্বিতীয় বক্তব্য হল তদন্তে সাহায্যের। এ কথা অনস্বীকার্য যে ইয়াকুব তদন্তকারীদের অনেক সাহায্য করেছিলেন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই। কিন্তু যেমন একজন ডুবন্ত মানুষ শেষ কাঠের টুকরো আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করে তেমনই ছিল হয়তো ইয়াকুবের এই চেষ্টা। নিজের শাস্তি কমানোর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা ছাড়া আর কোন উপায়ান্তর তার ছিল কিনা সেটাও ভেবে দেখার মতো ব্যাপার।
এছাড়া অনেকে এই যুক্তি উপস্থাপন করছেন যে তার সহযোগী অনেকে এই মামলায় যাবজ্জীবন বা তার থেকেও কম শাস্তি পেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজে হাতে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। কিন্তু ভারতের আদালত চিরকাল মূল চক্রান্তকারীদের সাজার ব্যাপারে বেশি কঠোর থেকেছে সৈনিকদের থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রমান যে কথা বলছে তা হল এই সমস্ত কিছুর পিছনে অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে অস্ত্রের যোগান, সব হয়েছে ইয়াকুবের হাত ধরে, যে অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে ইয়াকুব।
ইয়াকুব শেষ পর্যন্ত বলে এসেছে সে নির্দোষ, কিন্তু আদালত কাজ করে প্রমানের উপর ভিত্তি করে। ইয়াকুবের তার ভাইয়ের ব্যবসায় সাহায্য থেকে শুরু করে নিজের গাড়ি তাদের ব্যবহারের জন্য দিয়েছে কোন ইতস্ততা ছাড়াই। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে সে আসল ঘটনা সম্পর্কে ছিল সম্পুর্ন অজ্ঞ, এবং তার অজান্তেই সমস্ত কিছু ঘটে গেছে তার মাধ্যমে তাহলেও কিন্তু এর জন্য দোষ দেওয়া চলে না ভারতের আদালতকে, বরং দোষ বর্তায় তার নিজের ভাই টাইগার মেমনের উপরেই, এবং কিছু অংশে ইয়াকুবের নিজের উপরেও।  এবং সে কথা সে বুঝতে পেরেছিল বলেই হয়তো সে আত্মসমর্পণের সংকল্প ত্যাগ করেছিল।