Wednesday, May 27, 2015

আরো খানিক

জীবন কি কোনদিন পূর্ণ হবে?
জীবনের পূর্ণতাপ্রাপ্তির সম্ভাবনায় নির্নিমেষ হেঁটে চলা
যদিও এ চলার পথ এখনো রয়েছে অজানা, চিরদিনই থাকবে,
তাই এই চলায় কোন ক্লান্তি নেই।
যখন আর চলতে চাইবে না, মনে হবে এসেছি কাঙ্খিত লক্ষ্যে,
তখন খোঁজার শেষ, কিন্তু একই সাথে জীবনের ইতি।
আমি তাই খুঁজে যেতে চাই,
অনন্তকাল ধরে, অনন্ত জিজ্ঞাসা যার উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারো
অন্তত আমার পরিচিতের মধ্যে, সেই ভেবেই প্রশ্ন সাজানো, হয়তো দ্বিচারিতা
তবু অনন্তের পথে থাকা
ফ্রিকশনের বাধাগুলো এভাবেই মুছে নিয়ে চলা, নিজস্ব গতিতে
আসলে যা কেবল বাঁচার আকুতি।
ইতি চাইনি কোনদিন, ক্লান্তি পাইনি কোনদিন
অতীতের ইতিহাসে ভবিষ্যৎ বর্তমান সবকিছু এক করে দিয়ে
নিজের দর্শন সৃষ্টি, অজস্র ভুলচুক থাকবে জানি, তোমাদেরও আছে
আমাদের উপলব্ধি হয়নি আজও
দুই একটা উপলব্ধিতেও ভুলভ্রান্তি তবু রয়ে যাবে
অতএব ভ্রান্তযুক্তি শিরোধার্য, আরো কিছু হাঁটি।


Monday, May 25, 2015

বিপত্তি

রাতবিরেতে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে প্রবাসী,
আগামীকাল কর্মীসভায় মিলছে না কো দোভাষী,
জাপানি যে স্পিকার ছিল খুইয়েছে সে কিমোনো,
মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে ঘুচলো বুঝি জীবনও।

মনের দুখে পাড়ার মোড়ে করতে গেল মাংসাহার
পোড়ারমুখো দোকানি কয় আজকে হনুর জন্মবার ।
উঠন্ত সে মুলোর গতিক চেনায় বলে পত্তনে,
বুঝেছি সে চিরটাকাল পাল্য বাম সমর্থনে ।

সন্ধ্যাবেলা ফুচকা খেতে গিয়ে আবার বিপত্তি
মিষ্টি তেঁতুল জলের চোটে হাসপাতালে সে ভর্তি
গুজ্জু ব্যাটা দেশটাকে হায় করেই দিল গো-বলয়
হাসপাতালে তাকে এখন ফাফড়া লোচো গিলতে হয়।






Friday, May 15, 2015

শেষ অপেক্ষা

আমার অঙ্গন আজ দগ্ধ হবে তোমাদের প্রেরিত শিখায়
জানি তার আঁচ থেকে তুমি সেই ঠিকই আজ ফের রক্ষা পাবে
আমার কলমখানা স্তব্ধ আজ, রুদ্ধ কণ্ঠস্বরটুকু হায়
বিকৃত হয়েছে সব, তোমাদের গোলামিতে মৃত্যুপথে যাবে।

লেলিহান শিখাটুকু বয়ে এনে ছুঁড়ে দেবে আমার কুটিরে
চোখের পলকে সব ছাই হয়ে গেল তবু হাতখানা বাঁধা
যখন গর্জন চাই তখন আশ্রয় খুঁজি মানুষের ভীরে
যা আমার প্রাপ্য ছিল তার ক্ষুদ্র অংশ পেতে পায়ে ধরে সাধা ।

নন্দিত হয়েছ তুমি, নিন্দিত হওয়ার ছিল, অস্বচ্ছ দৃষ্টিতে
আমিও সে বন্দনায় অংশ নিয়ে আপ্লুত, নান্দনিক রূপে
সমগ্র দেশের থেকে সুচাগ্র মেদিনী আজ আশ্রয় ভিটে
নিক্ষিপ্ত হবার শেষ অপেক্ষা সে,  নিঃস্ব হয়ে, অন্ধকার কূপে ।




Sunday, May 10, 2015

রবিগুরুর চর্চা

হে নূতন দেখা দিক আরবার, জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। কিন্তু আক্ষেপ এই যে এই শুভক্ষণের পুনরাবৃত্তি আমাদের জীবনে সহজলভ্য নয়। তোমায় নতুন করে পাব বলে সেই যে একবার হারালাম, সেই বুঝিয়ে হারিয়েই ফেললাম চকিতে। বিরহে বিলীন হওয়াই বোধকরি আমাদের বিধিতে, তাকে মধুরাতে মধুর করার মত, সেই বাঁধন কাটার মত শক্তিমান বুঝি রয়ে গেল কেবল কবিতার খাতাতেই। 
কবিগুরুর সিঁড়ি বেয়ে চলার শুরু সেই 'শিশু'কালেই। তখন সে ছিল আমার সহজপাঠের কবিগুরু, আমার কুমোরপাড়ার কবিগুরু। তখন জোড়াদিঘির মাঠ পেরিয়ে যেতাম ক্ষণেক্ষণেই, টগবগিয়ে রাঙা ঘোড়া ছুটিয়ে, তাই ছিল আমার আনন্দরাজি।
স্কুলে বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করতে হত, এবং প্রথমেই বলতে হত কবির নাম। 'লিখেছেন কবি ...', যে কেন হঠাৎ 'লিখেছেন কবিগুরু' সে প্রশ্ন সেই ছোট্ট মনেই বারবার ঘুরে ফিরে আসতো। কিছু প্রশ্নের উত্তর বোধহয় সময় আমাদের দেয়।
তারপর শুরু হল বোধহয় কিঞ্চিৎ মানঅভিমানের পালা, জানি না সে নবীন পান্থের মনে বিরহবেদনার সঞ্চারণ তুমিই করেছিল, যার জন্য হয়তো সে তখন অপ্রস্তুত ছিল। মৃত্যুকে সহজে মেনে নিতে তখন অসম্মত ছিল সে। তাই পৃথিবীকে কেবল সুন্দর হিসাবে কল্পনার বাসনায় ডুরে ঠেলে রাখা তোমার গল্পগুচ্ছকে। এবং তুমিও তোমার বন্ধনহীন গ্রন্থির দ্বারা সহজেই আমায় ছেড়ে দিলে, মনের বাঁধনে জড়িয়ে রেখেও। ভাল করেই জানতে যে আমি ফিরব, ফের আসতে হবেই।
সেই ফিরে আসা কি প্রকৃতির জানি না, কিন্তু প্রেমভাবনার স্বরূপ যা জেনেছি, সে ভাবনা বোধহয় কোন চলতি হাওয়ায় ভেসে কোনদিন অনুধাবন করতে পারতাম বলে বিশ্বাস হয়না। জানি না তোমায় মানুষ কত ভাবে কত আঙ্গিকে দেখে, কিন্তু আমার কাছে এই এক ভাব, যা এখনো রয়ে গেল মনের মণিকোঠায়। 

রবীন্দ্রচর্চা করিনি তেমনভাবে, ঠাকুরপুজো তো দূরে থাক। তবু পাকা ফলারের সুবন্দোবস্ত চিরকালই পেয়েছি তোমার কলের কাছে গেলে। এখনো সমৃদ্ধ হতে থাকি নিজের অগোচরেই। এই অধমের তোমার সাথে দূরত্বের ব্যবস্থা যত অচলায়তনই করুক না কেন, সমস্ত বাঁধ ভেঙ্গে যেন তুমি বেরিয়ে এসেছ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়। তোমাই চাইনি হয়তো আকুল হয়ে কোনদিনই, তবু পেয়েছি কারণ তুমি তো 'না চাহিলে যারে পাওয়া যায়'। যতবার সেই ধনকে আমি পেয়েছি আঁধার রাতে, যেন নিজের মধ্যে থেকেই কত অনুভূতি তুমি বের করে এনেছ আমার চোখের সামনে। তুমি বলেছিলে 'আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবেনা', সেখানে আমিই বা কি করে তোমায় জানার ধৃষ্টতা দেখাতে পারি। 
বিরহের গীত এত আনন্দধারা বওয়াতে পারে এই ভুবনে সে উপলব্ধিও তো তোমা হতেই লব্ধ। তাই এতো সহজে হাজার দুঃখের মাঝেও এই দুনিয়ার মারের সাগর পারি দেওয়ার সাহস জোগাড় করতে পারি । তোমার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হলে নিজেকে ধনয় মনে করতাম হয়তো, তবে সে তো কেবল মৃন্ময় রূপ। যদি চিন্ময়ের সামান্য কিছু ছোঁয়া মিলে থাকে তাহলে তার কাছে সে চোখের দেখা সামান্যই । যদিও মন মাঝে মাঝে বেয়াদব হয়ে অন্য দাবী করে । তোমার দেখা জানি এ জীবনে পাব না, তাতে হতাশা বা দুঃখের জায়গা রাখি না, সেখানেই থাক ইতি। আজকে হয়তো সবাই আবাহনের সুর শুনবে, কিন্তু তোমার কাছে যেটুকু শিক্ষা পেয়েছি তাতে এইদিনও সেই একই ভাবে বলব 'হে বন্ধু বিদায়'।

Friday, May 8, 2015

নাট্যচর্চা

জীবনের রঙ্গমঞ্চে অনেকদিনের অভিনয়ের অভ্যাস, সেই অভিনয় করায় যে স্বতস্ফুর্ততা দেখিয়ে আসি এতদিনের অভ্যাসের পর তা কখনো মেকি রঙ্গমঞ্চে দেখাতে পারব বলে মনে হয়না, তবে অনেকে পারেন। মঞ্চস্থ নাটক দেখবার উদ্দেশ্য অবশ্য এমনটা এ কথা আমি দাবী করছি না।  বস্তুত সবকিছুই যে কোন একরকমের মঞ্চ সে কথা আদৌ মনে থাকে বা আর কতক্ষণ। আমরা তো সেই পাইকারী হারে আপেক্ষিকতাকেই বেশি মূল্য দিয়ে এসেছি বংশগত বা সমাজগত ভাবে। আর তাই মাঝে মাঝে বুঝি সেই সংস্কৃতির চরকায় তেল দিতেই ঘুরে আসি এদিক সেদিক, রুচিকে আর একটু পরিশুদ্ধ করতে।
কাল গেলাম অপেরা শুনতে। হঠাৎ চলে গেলাম, যাব যাব করে যাওয়া হয় না, শেষ অঙ্কে কষ্টে ল্যাদ কাটিয়ে এতদিনে গেছি, এই ধরণের কোন ব্যাপারই না। খুব তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল মনের মধ্যে, এরকম কথাও বলতে পারি না। তবু চলে গেলাম, ঠিক যেমন করে দেখতে গিয়েছিলাম কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের 'মেয়েটি', তা প্রায় বছর পাঁচেক আগে । নাটক তার আগেও দেখেছি, কিন্তু সেই নাটকটা যেন নতুন করে নাটকের সাথে আমার সম্পর্কের সূচনা ঘটায়। তেমন অবশ্য ঘটালো না 'দ্য বুক অফ মরমন', তবু একটা ঘটনা।
সুসজ্জিত মঞ্চ, ব্রডওয়ে থিয়েটার, দারুন আলোকসজ্জা, এদেশে নাট্যচর্চার রূপ নিঃসন্দেহে বেশ উন্নত। মাঁচা বেঁধে দিন আনি দিন খাই অবস্থার সাথে তার তুলনা চলে না। সেই মোহন রূপে কে রয় ভুলে। পানীয়ের সুব্যবস্থা, আরামদায়ক আরামকেদারা, অজস্র গ্যালারী, ড্রেস সার্কেল, এবং নিশ্চিতভাবে সেসবের জন্য যথেষ্ট পরিমান পকেট হালকা করতে হবে। আমি অবশ্য যেটুকু না দিলেই নয় তার বাইরে হাঁটবার তেমন সাহস দেখাতে পারিনি, রক্তের গুণ যাবে কোথায়।
নাটক বা গীতিনাট্য যাই বলি, তাদের পেশাদারিত্ব অবশ্যই সন্দেহাতীত, দক্ষ অভিনেতা সে নিয়েও সন্দেহ নেই। সেই গুণাবলীর কারণেই হলিউডের দৌরাত্ম্যের মধ্যেও নিজেদের স্থান ধরে রাখতে সক্ষম এদেশের মঞ্চ। এছাড়া অবশ্যই সংলাপ, সঙ্গীত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাদের প্রতিভা অতুলনীয়। দর্শক আসন মূলত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত দর্শকে পরিপূর্ণ। তাদের মনোরঞ্জন করার ক্ষেত্র খুব সুন্দর ভাবে প্রস্তুত ছিল সমগ্র নাটিকা জুড়ে। কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও একটা ব্যাপার যেন আমাকে আমার মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকল, তা হল সাহসিকতা।
আমি এদেশে রয়েছি কেবল এক নিঃসঙ্গ দ্বীপ হিসাবে, তাই মতামত ব্যক্ত করাও হয়তো নির্বুদ্ধিতা, কোন সমালোচনা হয়তো হঠকারী সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যে বর্তমান সময়ের মধ্যে আমি বিচরণ করছি এবং তারা বিচরণ করছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে। ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি নির্মোহ চিন্তা থেকে উদ্ভূত এমন দাবীও আমি রাখছি না, এবং আপোষহীন অবস্থান হয়তো কেবল রোমান্টিকতাই, তাতে কোন উন্নতিসাধনের লেশমাত্র স্ফুলিঙ্গ লুকায়িত নেই, এই জাতীয় দাবীর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নাহলে তার যৌক্তিকতা উপেক্ষা করতে পারি না । তবু হয়তো, কিছুটা 'অবাঞ্ছিত' জাতীয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গির 'কুফল' স্বরূপ, এই প্রচেষ্টার মধ্যেও শোধনবাদিতার চিহ্নই বেশী দৃশ্যমান হয় তার কাছে, ভারতের সমতুল্য প্রচেষ্টাগুলোর চেয়ে অনেকাংশে বেশী। নিঃসন্দেহে ধর্মীয় অনুভূতি অনেক সহজে আহত হয় আমাদের দেশে, এই জাতীয় অতিসাধারণিকৃত বক্তব্যের জোয়ারে ভেসে যেতে আমি আমি অরাজি। যীশু এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত নতুন যুগের সন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে আমি নিতান্ত অজ্ঞ, কিন্তু তাদের বক্তব্যের অযৌক্তিকতার কথা তুলে ধরা হয়েছিল সুচারু ভাবে। সেই উপস্থাপনা ছিল নান্দনিক, এবং হাস্যরসে পরিপূর্ণ। কিছু ভণ্ড ইমারৎ খসে পড়ার দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষ করতে করতে উৎফুল্ল হয়ে উঠছিলাম আনন্দে, কিন্তু সেই চিরাচরিত মীমাংসাসূত্র।
ভাবছিলাম আমাদের দেশের কথা, সেখানে ধর্মানুভূতি আহত হয়ে থাকে মাঝে মাঝেই, কিন্তু ব্যাঙ্গাত্মক নির্দেশনার ক্ষেত্রে কি আমরা অনেক বেশী সহনশীল নই? কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোন আপোষে আসার কি কোন প্রয়োজন থাকে? বিভিন্ন প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ হয় না এমন নয়, কিন্তু নিছক হাস্যরস পরিবেশনার ক্ষেত্রে কি সত্যি কোন প্রয়োজন থাকে শেষ মুহূর্তে ধর্মীয় গ্রন্থকে কেবল রূপক হিসাবে দেখানোর? এক অর্থে হাস্যরসের ভিত্তি কি তাতে আহত হয়না খানিকটা? জানি না, জানার অনেক কিছু আছে, সংস্কৃতিকে চেনার আছে, মানুষের মনস্তত্ত্ব, তার অস্তিত্বসঙ্কট, তার অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, এবং সেই থেকে উদ্ভূত রফাসূত্রের খোঁজ। সত্যি আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।