Sunday, May 10, 2015

রবিগুরুর চর্চা

হে নূতন দেখা দিক আরবার, জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। কিন্তু আক্ষেপ এই যে এই শুভক্ষণের পুনরাবৃত্তি আমাদের জীবনে সহজলভ্য নয়। তোমায় নতুন করে পাব বলে সেই যে একবার হারালাম, সেই বুঝিয়ে হারিয়েই ফেললাম চকিতে। বিরহে বিলীন হওয়াই বোধকরি আমাদের বিধিতে, তাকে মধুরাতে মধুর করার মত, সেই বাঁধন কাটার মত শক্তিমান বুঝি রয়ে গেল কেবল কবিতার খাতাতেই। 
কবিগুরুর সিঁড়ি বেয়ে চলার শুরু সেই 'শিশু'কালেই। তখন সে ছিল আমার সহজপাঠের কবিগুরু, আমার কুমোরপাড়ার কবিগুরু। তখন জোড়াদিঘির মাঠ পেরিয়ে যেতাম ক্ষণেক্ষণেই, টগবগিয়ে রাঙা ঘোড়া ছুটিয়ে, তাই ছিল আমার আনন্দরাজি।
স্কুলে বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করতে হত, এবং প্রথমেই বলতে হত কবির নাম। 'লিখেছেন কবি ...', যে কেন হঠাৎ 'লিখেছেন কবিগুরু' সে প্রশ্ন সেই ছোট্ট মনেই বারবার ঘুরে ফিরে আসতো। কিছু প্রশ্নের উত্তর বোধহয় সময় আমাদের দেয়।
তারপর শুরু হল বোধহয় কিঞ্চিৎ মানঅভিমানের পালা, জানি না সে নবীন পান্থের মনে বিরহবেদনার সঞ্চারণ তুমিই করেছিল, যার জন্য হয়তো সে তখন অপ্রস্তুত ছিল। মৃত্যুকে সহজে মেনে নিতে তখন অসম্মত ছিল সে। তাই পৃথিবীকে কেবল সুন্দর হিসাবে কল্পনার বাসনায় ডুরে ঠেলে রাখা তোমার গল্পগুচ্ছকে। এবং তুমিও তোমার বন্ধনহীন গ্রন্থির দ্বারা সহজেই আমায় ছেড়ে দিলে, মনের বাঁধনে জড়িয়ে রেখেও। ভাল করেই জানতে যে আমি ফিরব, ফের আসতে হবেই।
সেই ফিরে আসা কি প্রকৃতির জানি না, কিন্তু প্রেমভাবনার স্বরূপ যা জেনেছি, সে ভাবনা বোধহয় কোন চলতি হাওয়ায় ভেসে কোনদিন অনুধাবন করতে পারতাম বলে বিশ্বাস হয়না। জানি না তোমায় মানুষ কত ভাবে কত আঙ্গিকে দেখে, কিন্তু আমার কাছে এই এক ভাব, যা এখনো রয়ে গেল মনের মণিকোঠায়। 

রবীন্দ্রচর্চা করিনি তেমনভাবে, ঠাকুরপুজো তো দূরে থাক। তবু পাকা ফলারের সুবন্দোবস্ত চিরকালই পেয়েছি তোমার কলের কাছে গেলে। এখনো সমৃদ্ধ হতে থাকি নিজের অগোচরেই। এই অধমের তোমার সাথে দূরত্বের ব্যবস্থা যত অচলায়তনই করুক না কেন, সমস্ত বাঁধ ভেঙ্গে যেন তুমি বেরিয়ে এসেছ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়। তোমাই চাইনি হয়তো আকুল হয়ে কোনদিনই, তবু পেয়েছি কারণ তুমি তো 'না চাহিলে যারে পাওয়া যায়'। যতবার সেই ধনকে আমি পেয়েছি আঁধার রাতে, যেন নিজের মধ্যে থেকেই কত অনুভূতি তুমি বের করে এনেছ আমার চোখের সামনে। তুমি বলেছিলে 'আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবেনা', সেখানে আমিই বা কি করে তোমায় জানার ধৃষ্টতা দেখাতে পারি। 
বিরহের গীত এত আনন্দধারা বওয়াতে পারে এই ভুবনে সে উপলব্ধিও তো তোমা হতেই লব্ধ। তাই এতো সহজে হাজার দুঃখের মাঝেও এই দুনিয়ার মারের সাগর পারি দেওয়ার সাহস জোগাড় করতে পারি । তোমার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হলে নিজেকে ধনয় মনে করতাম হয়তো, তবে সে তো কেবল মৃন্ময় রূপ। যদি চিন্ময়ের সামান্য কিছু ছোঁয়া মিলে থাকে তাহলে তার কাছে সে চোখের দেখা সামান্যই । যদিও মন মাঝে মাঝে বেয়াদব হয়ে অন্য দাবী করে । তোমার দেখা জানি এ জীবনে পাব না, তাতে হতাশা বা দুঃখের জায়গা রাখি না, সেখানেই থাক ইতি। আজকে হয়তো সবাই আবাহনের সুর শুনবে, কিন্তু তোমার কাছে যেটুকু শিক্ষা পেয়েছি তাতে এইদিনও সেই একই ভাবে বলব 'হে বন্ধু বিদায়'।

No comments:

Post a Comment