Monday, October 8, 2018

নাদিয়া

কাফের বলেই ধর্ষণ করেছিলে,
কাফের বলেই চিনিয়ে দিয়েছ জাত,
কাফের বলেই অস্তিত্বের মাঝে 
তোমার আমার দ্বিধাহীন সংঘাত।

কাফের বলেই নিকাহনামার আগে 
সৃষ্টি হয়েছে অনাহূত পরিচয়,
কাফের বলেই আদিম সমাজে ফেরার 
চাবিকাঠি আজও সহজলভ্য হয়। 

কাফের বলেই তুমিও আজকে বিজয়ী,
বন্ধুমহলে গর্ব করতে তৈরি,
কাফের বলেই এখনও দুই প্রকোষ্ঠের 
দুই তরফেই তাজা রয়ে গেছে বৈরী।

Wednesday, September 5, 2018

কলকাতার কবিতা

দারুণ দুর্দিন চলছে বহুদিন বাংলা কবিতার,  
কানাগলি, ছেঁড়াতার- ঠিক যেন কলকাতা শহর, 
চাপা দুর্গন্ধগুলো মুক্তি পেল ডানা মেলবার, 
আছে আর কী বা পড়ে, চারদিকে শব্দের কবর। 

কিছুই দেবার নেই তোমার ওই প্রাচীন শ্মশানে,  
গোঙানির মত তার কণ্ঠস্বর মৃদু থেকে ক্ষীণ।  
ত্যাগ করে এসেছি সে কত যুগ কাছারি ফরমানে, 
এবার সুশীঘ্র হোক অবয়ব পঞ্চভুতে লীন। 

অতীতকে অতিক্রম কঠিন তা বুঝি বারে বারে, 
তাই একাকীত্বের সঙ্গী আজ, স্বেচ্ছায় তো নয়
এগোব তবুও পথে, তোমার সমাজের অগোচরে,  
তোমাদের অভ্যাস আমার অনর্থক অপচয়। 

Tuesday, February 27, 2018

কলম

তোমার কলম চলে সামাজিক দায়ের প্রকোষ্ঠে
আমারও কিছুটা হয়তো, আমাদের যুগে যেমনি হয়, 
গড়েছে যেমন করে চিন্তারীতি ভাবধারা মেপে, 
শিক্ষাব্যবস্থার আজ হয়তো কদাচিৎ পরাজয়।

অবারিত ভাবনার শ্রেণীভুক্তকরণ প্রক্রিয়া, 
শুরু হয়েছে হয়তো বা সাহিত্যের সূচনার আগে। 
সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী নাহলে কি জয়যুক্ত হয়; 
অতন্দ্র প্রহরীর শ্যেনদৃষ্টি প্রত্যেক বিভাগে। 

কত গবেষণা করা, কত প্রুফ-রিডিংয়ের আসর, 
কত ক্ষুরধার যুক্তি, আভিধানিক ইঙ্গিত, দ্যোতনা।  
এই যে আমরা লিখি বিস্তর আত্মতৃপ্তি-যোগে 
না লিখলে সাহিত্যের ক্ষতিবৃদ্ধি কিছুই হত না। 

Friday, February 9, 2018

অপেক্ষায়

শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে যৌবন, কত বদলেছে দিনগুলি,
তপ্ত পিচ আর কংক্রিট বুঝি অধিকার করে বাকি কিছু রাঙাধূলি। 
আকাশ দেখিনা, নেই সেসবের তরে সঞ্চিত এতটুকু অবকাশ,  
জলাশয়গুলো আমার জীবনে আজীবন আনে নিরম্বু উপবাস।   

চাতক ডাকে না বুকফাটা ডাক, পরিশ্রান্ত শুষ্ক কণ্ঠ তার, 
পিয়ালের শাখে থাকে না চড়াই, ঈগল নিয়েছে সব স্বত্বাধিকার। 
বদলেছে আরো কত কিছু বুঝি, অত হিসাবের আগ্রহ নেই মনে, 
বাঁধাগত ছেড়ে বহুদিন আমি পাড়ি জমিয়েছি অন্য অন্বেষণে। 

তবু ফিরে আসে কাশফুলগুলো, তবু ফের ভাসে শিউলিরাজির ঘ্রাণ, 
হৃদিমন্দিরের ঈশানকোণেতে ঢাকের বোলের আগমনী আখ্যান।  
সেই একইভাবে দিন বয়ে চলে, জীবনের মানে অল্পই পাল্টায়।  
বঙ্গজীবন দুইভাবে কাটে, পুজোয়, অথবা পুজোর অপেক্ষায়। 

শেষ পর্যন্ত

শান্তি কোথায় খুঁজে পাব বল শ্মশানের পরিবর্তে, 
তবে সবকিছু বিনিময় হবে ঠিকানা পাওয়ার শর্তে। 
নিয়মাবলীর ফাঁকে থাকবে না কোন ফাঁকি দেওয়া অজুহাত, 
নিঃশ্ব হওয়ার ইচ্ছাপত্রে দস্তখতের অভিঘাত
আনবে না কোন বাকবিতণ্ডা, বিশ্বাস ভাঙ্গা অভিযোগ; 
প্রতারক নই, আমার জন্য পোয়াতে হবে না দুর্ভোগ। 
প্রবঞ্চনায় বারবার ঠকা, তবু খুঁজে চলি প্রত্যয়, 
যেন কোন এক বিস্ময়ে হবে আমার পৃথিবী বাঙ্ময়। 
দিকনির্ণয় করা নেই, তবে ভরসা রয়েছে অদ্ভুত 
বিস্ময়বলে, আমার সামনে তুমিই এখন দেবদূত। 
চুল্লীতে বুঝি জার শুরু হল, ধুনিটাও পরিলক্ষিত।  
আমকে আসিনি,  শেষটুকু ঠিক নিশেঃষ হবে নিশ্চিত। 
শান্তির জ্বালা সয়ে নেব, আজ যতই হোক সে বিষবৎ 
এইটুকু আমি শিখেছি আমার জীবনযুদ্ধ মারফ।   
অগ্নাশয় আজ অগ্নিসাৎ, ধমনী মিশবে ধূলিতে, 
তারানাথ ফের চায়ের আসর বসাবে টাটকা খুলিতে। 
তিলেক দাঁড়াই এই শেষবার চোখ মেলি, আজ মুক্তি!  
শান্তি কোথায়? বৈতরণীর স্রোতে ভেসে যায় যুক্তি।



Thursday, January 18, 2018

ফুসমন্তর

বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, স্বপ্নের হাভেলি,
মাঝেমধ্যে ভাঙছি মাত্রা, খেই হারিয়ে ফেলি,
দিবারাত্র আকাশকুসুম, নিত্য ডানা মেলি,
স্বর্গপুরের প্রবঞ্চনা, এটাই রুটিন ডেইলি।

ভাঙলে নেশা ফের দুচুমুক, মেহফিল নশেলী,
তা না হলে কয়েকছত্র কিটস কিম্বা শেলি,
তাতেও বাধা? তবে নাহয় অন্তিম সহেলী,
সাত সতেরো সুরের সাথে অসাধ্য পহেলি।

সেই আমেজে নিত্যলীলা, অথবা জলকেলি,
মনের মধ্যে মনের সাথেই মজার খেলা খেলি,
বিরক্ত হয় নিজের ওপর, কষ্ট করেই ঝেলি,
জীবন বলে দিনের শেষে কী বা এমন পেলি!