Thursday, February 26, 2015

মুক্তমনের বিদায়

আজও তবু রক্ত চাই
দিয়েছি তো বহু যুগ ধরে
অজস্র শতাব্দী জুড়ে সারা বিশ্বে এখানে ওখানে
অবিশ্বাসী মুছে গেছে
একে একে পৃথিবীর বুকে
অবিশ্বাসের পাড়ি তবু চলে স্রোতের উজানে ।

রক্তবীজের ঝাড়
রক্ত দেখে ভয় পেলে চলে ?
কলমে ভরব তাই, লিখে যাব, দ্বিগুণ প্রত্যয়
রক্ত দেব ততদিন
যতদিন শ্বাসরুদ্ধ নয়
মুক্তমনের ক্ষেত, রক্তে আরো উর্বরাই হয় ।


কবিতার সাথে আমি কখনো কোন  কথা লিখিনা । আজ লিখছি কারণ কিছু মানুষকে চোখে আঙ্গুল না দিয়ে বোঝানো যায় না, দিলেও কতটুকু যায় সে সন্দেহ থেকেই যায় । অভিজিৎ রায়ের লেখা যে অনেক পড়েছি এমন নয় । থেকে থেকে যা চোখে পড়েছে, তিতুমীর কে নিয়ে লেখা, হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার নিয়ে লেখা ছাড়াও প্রেমের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ অথবা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কে নিয়ে লেখাও । যে শ্রেণীর মানুষের অভাব আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি, কোন রকম বাছবিচার না করে সত্যকে বলিষ্ঠভাবে পরিবেশন করা ।

বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদের প্রসার এবং প্রসার সম্বন্ধে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিলাম সম্পূর্ণ অজ্ঞ । তসলিমার জীবনকে  দুর্বিষহ করে তোলার যে প্রয়াস বাংলাদেশের মৌলবাদীরা করেছিল, সে কথা জেনেছি অনেক বড় হয়ে ।  হুমায়ূন আজাদের উপর হামলা ইত্যাদির সময়ও তেমন কিছু জানতে পারিনি কোনদিন । প্রথম ভাসা ভাসা আভাস পাই শাহবাগ আন্দোলনের সময় । থাবা বাবার কথা জানতে পারলেও তার লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না সেই অর্থে । আসিফ মহিউদ্দীনের লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি, কিন্তু তাও তাঁর উপর হামলার পরেই । অভিজিৎ রায় আমার দেখা প্রথম বিশ্বাসের বলি, যিনি চোখের সামনে এই ছিলেন এই নেই, শুধুমাত্র তাঁর অবিশ্বাসের কারণে । যুক্তির বিরুদ্ধে এই একটিই তো পন্থা অবলম্বন করে এসেছেন  যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীর নানা মতের নানা ধর্মব্যবসায়ীরা ।

এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশ ভারতকে অনেকে উদারপন্থী বলে থাকেন, কিন্তু কিছুদিন পূর্বের ইতিহাস ঘাঁটলেই তো আমরা দেখতে পাব নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যা । আমরা দেখতে পাব কি ভাবে ভারতীয় যুক্তিবাদী সংস্থার প্রধান সনল এডামারকুকে, কিছু বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার কারণে, নিজের দেশ ছেড়ে ফিনল্যান্ডে কাটাতে হচ্ছে, ধর্ম অবমাননার দায়ে । অতীত ইতিহাস এরকমই আর অজস্র ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে আছে, শুধু আমাদের দেশে নয়, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ।

এই হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি দাবী জানাচ্ছি ফাঁসীর, না এই মৌলবাদী হত্যাকারীদের নয় কেবলমাত্র; এই সমগ্র মৌলবাদের । এই পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে ফেলার দাবী জানাচ্ছি এই চিন্তার, এই মানুষের কণ্ঠরোধ করার ভাবনার, যেই মতবাদের উপর ভিত্তি করে কলমের মাধ্যমে প্রকাশিত সত্যের উপাসক মুক্তমনাদের হত্যার নিদান দেওয়া যায়, তার । এই দাবী কয়জন শাসক মেনে নেবে সারা বিশ্ব জুড়ে সে ব্যাপারে অবশ্য আমি যথেষ্ট সন্দিহান । কাজেই এই গুরুদায়িত্ব পালনের ভাঁড় বর্তায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ওপরেই । 


লড়াই কিন্তু এভাবে থেমে যায় না, যতই হত্যাকারীদের দল আশাবাদী হন না কেন । অভিজিতের প্রতিটি রক্তের কণা থেকে জন্ম নেবে আরো শত সহস্র সত্যবাদী, স্পষ্টবক্তা । সেই রক্ত দিয়েই লিখবে সত্যের কথা । মৃত্যু মানে থেমে যাওয়া নয়, এগিয়ে যাওয়া সত্যকে আরো দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে, কারণ সত্যই হবে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র, যাদের বসবাস মিথ্যার দ্বারা সৃষ্ট মায়ার প্রাসাদে ।
"আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ।"






Wednesday, February 25, 2015

ভালবাসার হালুইকর

হবে না আর এমনি করে পদ্য লেখা,  
ছন্দ দিয়ে,  
কোথায় যেন হারিয়ে গেল, তীব্রতাটা, 
এই তো ছিল,  
যখন ছিলাম মগ্ন, কথায়, সেই সময়ে ।  
এখন বুঝি দায়িত্ব ফের, আবার বোঝা 
চাপল মাথায়, নিপুণভাবে শব্দচয়ের । 
অথবা বা সময় এলো বোধ উদয়ের।  

কেমন করে বাঁধব কিছুই বুঝছি না যে,  
ভরসা খুঁজি 
লোকের মাঝে, যদিও তাদের মনস্তত্ব 
বেদম ঘোলা।   
মিলছে বৃথাই শান্তনা আজ, কেমন করে 
বুঝব কখন সঠিক মাপে, হয়েছে পাক 
ভালবাসার, এতটুকু কম বেশি নয়, 
উনুন থেকে কড়াইখানা তোলার সময়।    

Sunday, February 22, 2015

বিমানযাত্রার রোমাঞ্চ

বিমানযাত্রা, তার মধ্যে আবার রোমাঞ্চ- প্রথমেই যেন অলীক কুনাট্য ! আধুনিক যুগে যখন বিমানযাত্রা মানুষের কাছে জলভাত, তখন তার মধ্যে রোমাঞ্চ খুঁজে পাওয়ার মধ্যে হয়তো অনেকেই আশ্চর্য হবেন । আমি নিজের জীবনে বিমানে চড়েছি খুব কম, তবে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতার পূর্বে আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এরকম পরিস্থিতির কথা । হয়তো চিন্তামণির মত চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু বাস্তব সেসব অভাবকে ঘুচিয়ে একদিনে অভিজ্ঞতার  ঘড়া অনেকখানি পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো সেই এক বিমানযাত্রার মাধ্যমেই । শিকাগোতে আসা থেকে বছরে দুই একবার ভাসতে হয় উড়োজাহাজে, তবে সেই সুবাদে নিজেকে বিমানযাত্রার বিশেষজ্ঞ বলে আমি দাবী করি না । হয়তো এমন অভিজ্ঞতা অনেকের রোজনামচার মধ্যে থাকে, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এবং অকল্পনীয়- তাই আকস্মিক এবং আকর্ষক ।

কলকাতা ছাড়া আমার কাছে কোনদিনই খুব সুখকর নয়, এবারো ছিল না, জানুয়ারির ৫ তারিখ । প্রথম শুরুটা অবশ্য মন্দ হল না, যাত্রা কিছুক্ষণের জন্য বিলম্বিত হয়ে যাওয়ার কারণে । আসলে যতটুকু পারা যায়, কাছে থাকা কলকাতার । কিন্তু সব কিছুর শেষ আছে, অথবা হয়ত শেষ নেই -শুধু নতুন করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ।  সেই নতুন করে পেতেই অল্প কদিনের বিচ্ছেদ।  সেসব চিন্তা করতে করতেই দাঁড়ালাম চেক-ইন'এর সারিতে।  অতীতের হিসেব অনুযায়ী  এগুলো ছিল মিনিট কয়েকের অপেক্ষামাত্র, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেখি সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়, আর আমি থেকে যাই সেই একই স্থানে।  প্রথমে ভেবেছিলাম যে বাংলা হয়তো এখন সত্যি বিশ্ববাংলা হয়েছে, তাই সারা বিশ্বকে সামাল দিতে গিয়ে সময় বোধহয় লাগছে একটু বেশি । সেই ভেবে তত গা করিনি, কিন্তু ক্রমে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে লাগলো । শেষ পর্যন্ত যখন দেখি মাত্র ১৫ মিনিট বাকি আর বিমান ছাড়ার, তখন বাধ্য হয়ে অভব্যতার শরণাপন্ন হতে হল । শিক্ষা আমাদের পরিশীলিত এবং পরিমার্জিত করে, কিন্তু বাংলা সম্বন্ধে বাস্তব শিক্ষা আমাদের শেখায় যে কিছু ক্ষেত্রে অভদ্রতার কোন বিকল্প হয়না । এবং বাস্তবিকই দেখলাম বহু সঙ্গীসাথী জুটে গেল, সব এক মায়ের সন্তান এক শিক্ষাতেই বড় হয়েছি তো । বোর্ডিং পাস যখন জোগাড় হল তখন বাকি আর ৫ মিনিট । অনেক কাকুতি-মিনতি করে অভিবাসন ইত্যাদি করে শেষ পর্যন্ত যা হোক যখন পৌঁছলাম ভেতরে,  তখন পিছনে ফেলে আসা সেইসব সহযোদ্ধাদের কথা চলে গেছে স্মৃতির অন্তরালে, যারা যথাযত টিকিট থাকা সত্ত্বেও এই বিমানযাত্রা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল, কেবল এয়ার ইন্ডিয়ার গাফিলতির কারণে । সত্যি আমাদের মস্তিষ্ক কেমন সুবিধাবাদী, ভাবতে অবাক লাগে ।

কিন্তু সেই কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম দিল্লীতে পৌঁছে । উড়োজাহাজে দিব্যি ছিলাম চেয়ার খানি চেপে, ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি যে কলকাতার বাবাজীরা আমার দিল্লী থেকে শিকাগোর ফ্লাইটে চেক-ইন করায় নি । তাদের আশ্বাসবাণী অনুযায়ী দিল্লীতে নেমে বোর্ডিং-পাস চাইতে গিয়ে দেখি ও হরি, আমার নাম যে নেই !! ইতিমধ্যে তাদের অকর্মণ্যতার দরুন সময় গেছে অতিক্রান্ত হয়ে, এবং লাভের গুড় খেতে গিয়ে সেই ফাঁকে তারা নতুন মানুষজনকে জায়গা দিয়ে বিমান করে ফেলেছে ভর্তি । এমতবস্থায় আমি পড়লাম উভয়সঙ্কটে । এক দিকে ভাবি, বাহ ভালোই তো এই সুযোগে, আরো কদিন ছুটি নাহয় ভোগ করেই নিলাম, তো অপরদিক বলে যেতে যখন হবেই, তো মিছে আর বিলম্ব কেন । বিচ্ছেদের দুঃখ তো তবে দুইবার ভোগ করতে হবে । আশার আলো যে কিছু ছিল না এমন নয়, আশ্চর্যজনক ভাবে সেদিন শিকাগোগামী একটি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থার কথা জানালেন এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা । কিন্তু সময় যে দোরগোড়ায়, আমার মালপত্র সমস্ত রয়ে গেছে অন্য বিমানে !! তাদের তা জানাতে অবশ্য তারা বললেন যে সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে, এবং কিছু কিছু আশ্বাস যে তারা মিথ্যে দেয় না সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করলাম । যাত্রীদের সেই বিশাল লাইন, মালপত্রের খোঁজ, সব কিছু নিজেদের দায়িত্বে সম্পন্ন করে, তারা বসলো আমার ত্রাতার আসনে । পুলিশকর্মীদের অনুরোধ করে নাহয় অতিক্রান্ত হওয়া গেল ট্রানজিটের ঝামেলা । কিন্তু তারপরেও তো অনেক পথ, আর সময় প্রায় নেই বললে অত্যুক্তি হবে না । তখন রাস্তা দেখালেন একজন বিমানকর্মী, আমার মালপত্র সমস্ত কাঁধে তুলে নিয়ে, কেবল তাদের নিজেদের জন্য ব্যবহৃত একটি শর্টকাট এর পথে আমাকে নিয়ে গেলেন তিনি । মালপত্র কাঁধে করে তাঁর দৌড়, এবং তার পিছনে আধো অনুকম্পা আবার আধো প্রত্যাশা বুকে করে তাঁর পশ্চাতধাবন, কেমন যেন এক ইউফোরিয়ার মত ছিল আমার কাছে ।

উত্তেজনার বশে যেন আমার দুঃখবিলাসের সময় কোথায় হারিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না । তা ভাল হল না মন্দ সে অবশ্য আমার পক্ষে বলা কঠিন, তবে নিঃসন্দেহে হল এক অনন্য অভিজ্ঞতা । ক্ষণকালের জন্য হলেও নিজেকে যেন ভিআইপি বলে মনে হল, আমার জন্য তাদের এত  উদ্বেগ এবং প্রচেষ্টা দেখে আপ্লুত না হয়েও উপায় ছিল না । অবশ্য নিন্দুকেরা বলবে এসবের তো কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি না তারা নিজেরা নিজেদের কাজে গাফিলতি না করতো প্রথমে । তবে সে গাফিলতির মাধ্যমে যদি এমন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়, যার সমাপ্তি ঘটে মধুরেন সমাপয়েতের মাধ্যমে, তাহলে তো আমরা কেনই বা বলব না 'গাফিলতি আচ্ছে হ্যায়' ।  

(পুনশ্চঃ এই অভিজ্ঞতায় আমার সহযাত্রী ছিল আমার এক বন্ধু । সে না থাকলে হয়তো আমি শেষ পর্যন্ত সেইদিন আর আমার যাওয়া হত না । ) 

Saturday, February 21, 2015

বক ধার্মিক

আমি নাস্তিক
তবে হঠযোগী
আমি বিদ্রোহী, আমি উন্মাদ
আমি তৎসম গুঁজে বাংলা ভাষাকে করে দিতে চাই চুরমার ।

আমি চতুর
তবুও নির্বোধ
আমি হামবাগ, আমি অমানুষ
করি ত্রিকালজয়ীর তত্ত্বাবধানে সংবিধানকে দুরমুশ ।

আমি স্থবির
আমিই অস্থির
আমি বিপ্লবী, তবু দলদাস
আমি বেগার খেটেছি, তবুও তোমার জিততে পারিনি বিশ্বাস ।

আমি নির্মল,
তবে ঘোলাটে
আমি শ্রমিক, তবুও কাপ্তান
আমি যুদ্ধঘোষণা করতে গিয়েও, লাভ ক্ষতি টুকু মাপতাম ।

আমি ভারতীয়
আমি বাঙালী
আমি বৃহৎ, আমিই খণ্ড
আমি বিশ্বমানব সাজতে গিয়েও ঠগ-তপস্বী, ভণ্ড ।



Friday, February 20, 2015

পাগলিনী

তুমি উপভোগ কর নিশীথিনীকে
আমি জ্বলে পুড়ে মরি, পাগলিনী মেয়ে-
তালে ও ছন্দে তার প্রলয়নাচন,
তাইতে রেখেছি বাজি মরণ বাঁচন।

 নিঃস্ব এ ভালবাসা, পথের ধুলায়
ছড়িয়েছি শেষ কণা, সূত্রের দায়
অমরত্বের লোভ কার যে না জাগে
সাধনা তবুও করি, ভুলে গিয়ে তাকে ।

রঙ্গ দেখেছি শুধু , মায়ার ছায়ায়
নিঃস্পৃহ থাকি তাই, শুধু হাসি পায়
শিখেছ কোথায় বল হে ছলনাময়ী
তবু ভালবেসে আজও সব কিছু সই ।

কামনা করিনি তাই, দুঃস্বপ্নেও
হয়তো বা চিরদিন রবে অজ্ঞেয়
করুণাময়ীর ফের মনে আঁকি ছবি
অর্চনা করি, হাতে রক্তকরবী ।




     

Wednesday, February 18, 2015

ইষ্টকের গল্প

ইটেদের সাথে আজ  কারবার বহু বছরের
মাথাটাই হয়ে গেছে থান ইটের মত,
বা হয়ত প্রথম থেকেই ছিল,
তাই কারবারটা করি সমগোত্রীয়ের  সাথে।
 জলজ্যান্ত ইটভাটা মাথায় ;
 দক্ষতার পরিচয়, তৃপ্তিদায়ক নয় তা যদিও।
তাই ভরদুপুরে আজ দুঃখবিলাসের দিন।
যদি ফের হওয়া যেত তুলতুলে নরম ।

এর চেয়ে ভাল ছিল ইটের গাদায় মাথাটা ঠুকে ফেলা
চারদিকে শুধু ইট, নরম মাটির চূড়ান্ত অভাব
আগুনের লেলিহান শিখা সমস্ত পৃথিবীকে করে দগ্ধ
সে মায়ের বুকে তবু শুষে চলি শেষ দুধটুকু
দগ্ধ হয়ে গিয়ে যাকে রেখেছিল পরম যত্নভরে
পোড়ামাটি, পোড়া স্তন তবু ভালবেসে পুষে রাখা
তারই বুকে ফের তাই গা জুড়াই পরম আশ্লেষে
দগ্ধ হয়ে যাই তারই মাঝে, কিন্তু পরম তৃপ্তিতে ।

Thursday, February 12, 2015

হিসেবী

হিসেব কষতে বসেছি আজকে দুরাশায় অতিরিক্ত;
জীবনের যত খরচের ফের বুঝি সব সম্পৃক্ত।
ছোট হিসেবের ক্ষমতা ধরি যে- বেশি অঙ্কেতে ভয় পাই
তবু কপালেতে খাঁড়া ঝোলে দেখি, নিয়ন্ত্রণের বড় দায়।

বেহিসেবী কিছু কথা লিখে ফেলি রসকষহীন খাতাটায়,
এই জীবনের মনিবের কাছে চাকরি টেকানো বড় দায়।
রামপ্রসাদের তবিলদারীটা শুধু থাকে লোকগাথাতে,
বাস্তবে দেখি অন্য হিসাব পাথর ঠুকেছি মাথাতে।

আবেগ আজকে মাথা নুইয়েছে, রিয়ালিটি আজ মহারাজ
এত দম্ভেও হয়নি চূর্ণ,  ভগবান বুঝি ফাঁকিবাজ।
আশা বিশ্বাসে জলাঞ্জলীটা দিয়ে ফেললাম বুঝি তাই
চার্বাক হয়ে ক্ষীর খাই তবে, প্রমোদে বিলাসে গা জুড়াই ।  

Thursday, February 5, 2015

বাধ্য-বাধকতা

বাবা একসময় অমরনাথ গিয়েছিলেন । সেখানে শীতের মধ্যে জুতো খুলে বোধহয় কোন মন্দিরে ঢুকতে হয়েছিল । পূজা সংক্রান্ত সব কাজকম্ম সেরে বাইরে এসে দেখেন যে জুতোজোড়া হাওয়া । জুতো ছাড়া তো আর ফেরা সম্ভব নয় তখন অগত্যা উপায়ন্তর না পেয়ে সেখান থেকে আরেক জোড়া জুতো পায়ে দিয়ে উনি চলে এসেছিলেন এই ভেবে যে যেহেতু সবাই একজোড়া জুতো পায়ে গলিয়ে গেছে এবং অতোখানি রাস্তা কেউ একজোড়া জুতো সঙ্গে করে আনবে না কাজেই শেষ পর্যন্ত সবার কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে । এটা এক ধরণের বাধ্যবাধকতা।  

এরকম বিভিন্ন সময় আমরা কিছু বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কিছু কাজকর্ম করে ফেলি যেগুলো হয়ত আপাতদৃষ্টিতে অনৈতিক কিন্তু নৈতিকতার বিচার কি কোন সার্বজনীন মাপকাঠি দিয়ে সম্ভব? ক্ষেত্রবিশেষ অনুযায়ী নৈতিকতার সংজ্ঞা হয় ভিন্ন ভিন্ন। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে যা চুরি কিছু অন্যক্ষেত্রে তা ভেসে থাকার শেষ অন্ধের যষ্টি, কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা কি ভাবে এর বিচার করব।  বিচার করার যোগ্যতাটুকুও কি আমাদের আছে?  একজন চোর যে নিজের জীবনধারণের জন্য চুরিকে নিজের জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে সেও কি তার বিচারবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি এরকম দ্বাবী আমরা সত্যি করতে পারি? এই প্রতিটা ভিন্ন উদাহরণকে এক ছত্রে বেঁধে ফেলার অভ্যাস আমাদের কখনো ঘুচলো না।   

অবশ্য এটা সর্বাঙ্গীন এমন কথা বলা সম্ভব নয় এবং বহুলোকের কাছে হয়তো লোভ প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই জীবনধারণের এই পন্থা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। হয়তো কিছু ঝুঁকি আছে কিন্তু লাভের গুড়ের অঙ্কে সেসবকে তুচ্ছ করার প্রবৃত্তি কি নেই কারো? প্রতিটা প্রশ্নেরই উত্তর সম্মতিসূচক এবং সেই কারণেই কোন একদিকে ঝোঁকা সম্ভব নয় নৈতিকতার প্রশ্নে এই ক্ষেত্রে । কিন্তু তথাকথিত নৈতিকতার মাপকাঠিতে আমরা এখনো সেই চোর ঠ্যাঙ্গানোকেই যেন প্রচ্ছন্ন সমর্থন জুগিয়ে এসেছি । তখন আমরাই হলাম বিচারক আমরাই হলাম কোতোয়াল, একটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কে আমাদের দিয়েছে সে প্রশ্ন বিবেক আমাদের করে না ।  

সবশেষে বলি নৈতিকতার প্রশ্নতেই কি নৈতিক কি অনৈতিক তার বিচার করার আমরা সত্যি কে, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি নিজের বিবেক কে জাগ্রত করার এবং মানবিকতাকে জীবনের একমাত্র সোপান হিসাবে চিহ্নিত করে সেই পথে হাঁটার । প্রতিটি মানুষ যদি এই সহজ পন্থাটা অবলম্বন করতে পারে তাহলে একজনকে অন্যজনের পথের মাঝে এসে দিগভ্রান্তদের নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আর থাকে না । মানুষ নিজেই একমাত্র তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বিচারক কারণ নিজের বিবেকের ডাক সে নিজেই কেবলমাত্র শুনতে পারে । সেই ডাককে যদি সে মাঝেমাঝেই উপেক্ষা না করে তাহলে তার জীবনে অন্য কিছুর প্রয়োজন পরে না ।