Thursday, February 5, 2015

বাধ্য-বাধকতা

বাবা একসময় অমরনাথ গিয়েছিলেন । সেখানে শীতের মধ্যে জুতো খুলে বোধহয় কোন মন্দিরে ঢুকতে হয়েছিল । পূজা সংক্রান্ত সব কাজকম্ম সেরে বাইরে এসে দেখেন যে জুতোজোড়া হাওয়া । জুতো ছাড়া তো আর ফেরা সম্ভব নয় তখন অগত্যা উপায়ন্তর না পেয়ে সেখান থেকে আরেক জোড়া জুতো পায়ে দিয়ে উনি চলে এসেছিলেন এই ভেবে যে যেহেতু সবাই একজোড়া জুতো পায়ে গলিয়ে গেছে এবং অতোখানি রাস্তা কেউ একজোড়া জুতো সঙ্গে করে আনবে না কাজেই শেষ পর্যন্ত সবার কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে । এটা এক ধরণের বাধ্যবাধকতা।  

এরকম বিভিন্ন সময় আমরা কিছু বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কিছু কাজকর্ম করে ফেলি যেগুলো হয়ত আপাতদৃষ্টিতে অনৈতিক কিন্তু নৈতিকতার বিচার কি কোন সার্বজনীন মাপকাঠি দিয়ে সম্ভব? ক্ষেত্রবিশেষ অনুযায়ী নৈতিকতার সংজ্ঞা হয় ভিন্ন ভিন্ন। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে যা চুরি কিছু অন্যক্ষেত্রে তা ভেসে থাকার শেষ অন্ধের যষ্টি, কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা কি ভাবে এর বিচার করব।  বিচার করার যোগ্যতাটুকুও কি আমাদের আছে?  একজন চোর যে নিজের জীবনধারণের জন্য চুরিকে নিজের জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে সেও কি তার বিচারবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি এরকম দ্বাবী আমরা সত্যি করতে পারি? এই প্রতিটা ভিন্ন উদাহরণকে এক ছত্রে বেঁধে ফেলার অভ্যাস আমাদের কখনো ঘুচলো না।   

অবশ্য এটা সর্বাঙ্গীন এমন কথা বলা সম্ভব নয় এবং বহুলোকের কাছে হয়তো লোভ প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই জীবনধারণের এই পন্থা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। হয়তো কিছু ঝুঁকি আছে কিন্তু লাভের গুড়ের অঙ্কে সেসবকে তুচ্ছ করার প্রবৃত্তি কি নেই কারো? প্রতিটা প্রশ্নেরই উত্তর সম্মতিসূচক এবং সেই কারণেই কোন একদিকে ঝোঁকা সম্ভব নয় নৈতিকতার প্রশ্নে এই ক্ষেত্রে । কিন্তু তথাকথিত নৈতিকতার মাপকাঠিতে আমরা এখনো সেই চোর ঠ্যাঙ্গানোকেই যেন প্রচ্ছন্ন সমর্থন জুগিয়ে এসেছি । তখন আমরাই হলাম বিচারক আমরাই হলাম কোতোয়াল, একটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কে আমাদের দিয়েছে সে প্রশ্ন বিবেক আমাদের করে না ।  

সবশেষে বলি নৈতিকতার প্রশ্নতেই কি নৈতিক কি অনৈতিক তার বিচার করার আমরা সত্যি কে, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি নিজের বিবেক কে জাগ্রত করার এবং মানবিকতাকে জীবনের একমাত্র সোপান হিসাবে চিহ্নিত করে সেই পথে হাঁটার । প্রতিটি মানুষ যদি এই সহজ পন্থাটা অবলম্বন করতে পারে তাহলে একজনকে অন্যজনের পথের মাঝে এসে দিগভ্রান্তদের নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আর থাকে না । মানুষ নিজেই একমাত্র তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বিচারক কারণ নিজের বিবেকের ডাক সে নিজেই কেবলমাত্র শুনতে পারে । সেই ডাককে যদি সে মাঝেমাঝেই উপেক্ষা না করে তাহলে তার জীবনে অন্য কিছুর প্রয়োজন পরে না । 

1 comment:

  1. Loved the last paragraph. It should be the ultimate realization for a man.

    ReplyDelete