Saturday, December 26, 2015

হারায়ে খুঁজি

অনেকদিন স্বপ্ন দেখিনা
অবশ্যম্ভাবী ভাবে রঙিন স্বপ্নও দেখা হয় না তাই
দুঃখ হয়, আকাশকুসুম কল্পনায় বড় আত্মতৃপ্তি লাভ করতাম যে একদিন
অবশ্য শূন্যতা গ্রাস করতো হঠাৎ করে স্বপ্নভঙ্গ হলে
যেন আপ্রাণ আঁকড়ে ধরার চেষ্টা, আর একটু দেখতে দাও স্বপ্নটা
এখনো চাই না জাগরণ, প্রাণপণ লড়াই প্রায়ই হেরে যেতাম,
হতাশাব্যঞ্জক, তবু আজকের মত শূন্যতা নয়।

অথবা হারিয়ে যাচ্ছে সব স্মৃতি থেকে
অ্যামনেশিয়ার করালগ্রাসে পতিত হলাম নিজের অজান্তেই
হয়তো জানতাম, কিন্তু তাও হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকূপে
স্বপ্ন আর জাগরণের মাঝে যে দুঃসময় সেই খাদে ঝাঁপ দিতে হবে উদ্ধার করতে সেই অমূল্যরতন
কিন্তু সেই পথ এখনো অজানা, হয়তো কোন গুপ্ত সঙ্কেত
একদিন আসবে আমার কাছে, কিন্তু ধন্দ হয়
একবার সেই পথে যাত্রা করলে ফিরতে পারব কি?

নতুনত্বের প্রতি আকর্ষণ কিন্তু এখনো দূর্বার
নতুন স্বপ্ন, নতুন দর্জা, নতুন শূন্যতা
তবু অতীতকে পরিত্যাগ করতে এখনো এখনো সাহস পাই না, কিছুটা রক্ষণশীল বলেই,
লড়াই টা তাই লড়ব কি লড়ব না, সামনের সিঁড়িতে পা দেব কি দেব না,
চিন্তাজগতে ঘুরতে ঘুরতেই দেখি কখন ধাপটা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গিয়েছে, প্রস্তুতিপর্বেই
তারও যে প্রতিস্থাপন আসবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত
তবে সেই অচেনা পথে ঝাঁপিয়ে পড়ব তখন এমন প্রত্যয়প্রাপ্ত হইনি এই মুহূর্তেও।

Friday, December 25, 2015

মেরি ক্রিসমাস

বড় ছোট না, এমনি আরেকটা দিন। স্মৃতিমেদুর হওয়ার সুযোগ যে এই দিন নিয়ে জীবনে এমনও নয়, বস্তুত এই দিনটা মাঝে বহুদিন তেমনভাবে খেয়ালই করা হয়নি শুভ'র। তবে আজ বুঝি সমাপ্তি ঘটবে এই একঘেয়েমির। সত্যি শুভ চায় আজকের দিনটা যেন হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড়, সময়কালের গণ্ডী অতিক্রম করে এই সন্ধ্যাতেই ডুবে থাকুক সে ও অন্তরা। ছোট ছোট ধাপে শুরু হয়ে আজ পালা একটা বড় পদক্ষেপের। যীশুবাবা পার করেগা বলে মারের সাগর পারি দিয়েই ফেলল শুভ।

মেট্রো থেকে নেমে এশিয়াটিক সোসাইটি পেরিয়ে যেতে যেতে যেন এক অচেনা জায়গায় পা ফেলবার উপক্রম। ক্রিসমাস কার্নিভালে তার এই প্রথম আসা, অবশ্য উপলক্ষ অন্য। ক্রিশ্চান স্কুলে পড়াশোনা করেছে ১২ ক্লাস অবধি, তবে বারতি কোন উৎসাহ নেই এই অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে। আর বাজারের দ্বারা চালিত হওয়া বা আনন্দজোয়ারে ভেসে যাওয়া, কোন কিছুতেই তেমন রুচি নেই তেমন। সে ঘরকুনো বাঙ্গালী, কালী থেকে কার্নিভাল সব কিছুকেই দূর থেকে নিরীক্ষণ করাকেই শ্রেয় বলে মনে করে এসেছে এতকালের একাকীত্বের জীবনে। তাই ঈষৎ উত্তেজনা এবং অনুকম্পার মাঝেই হেঁটে চলেছে ম্যাগ্নোলিয়া ছাড়িয়ে অজস্র ভীরের মাঝে প্রিয় দুটি চোখ খুঁজে নিতে। খুব ছোট বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে চার্চে যাওয়ার সঙ্গে অবশ্য প্রচুর তফাৎ, তখন প্রতিটা পদক্ষেপেই ছিল প্রত্যয়, নিবিড় আশ্রয়ের মধ্যে থাকার কারণেই।

প্রায় তিনমাস হতে চলল আলাপ নেহাতই কাকতালীয় ভাবে ফেসবুকের একটি সাহিত্যের গ্রুপে আনন্দমেলার আলাপচারিতায়। তারপর অতীতের সরণী বেয়ে কখনো কাকাবাবু, কখনো মিতিনমাসীর হাত ধরে সমুদ্রসৈকতে শিহরিত  বা পাহাড়চূড়ায় আতঙ্কিত হওয়া। সাহিত্যরস গ্রহণ হিসাবে হয়তো তেমন বুদ্ধিজীবী শ্রেণীতে পড়ার দাবী করতে পারে না তারা, কিন্তু হৃদয়রসের দিক দিয়ে সেই শূন্যতা ভরাট করে দিয়েছিল তাদের ঐকান্তিক আবেগ। সাহিত্য থেকে গান, সিনেমা, ছবি দেওয়া নেওয়া, কারণ ছাড়াই এরপর কেটে যেতে থাকতো সময়। নিজের অজান্তেই কত স্বপ্নজাল বুনে ফেলা, প্রশ্রয়হীন এমনও বলা চলে না।
চারিদিকে অজস্র টুপির মাঝে তিন চারবার ফিরে এলো শুভ, ক্রমেই অধৈর্য হয়ে পড়ছে সে। ক্যারম টুর্নামেন্টে পাড়ার নাম ডুবিয়ে সেই কল্যাণী থেকে হাজির হয়েছে আজ সে কত আশা নিয়ে, সত্যি বল ভুল করল শুভ। অনলাইন ফ্রেন্ডশিপ কেবল ওই অবাস্তবের দুনিয়াতেই রাখা উচিৎ সীমাবদ্ধ, কত পোড়খাওয়া দাদা, বন্ধুদের মুখে শুনে এসেছে চিরকাল। কিন্তু সে তো অন্তরাকে অন্যরকম ভেবেছিল। হ্যাঁ খুব বেশী কিছু নিজেদের বিষয়ে কেউই জানেনা তারা। এবং অজানাই রাখতে চেয়েছিল শুধু এই দিনটার জন্য দুজনেই। ফোন নাম্বার না, কোন কিছুই না, আজ মনে হচ্ছে সব ভুল। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ, তবু আজ ব্লক বাটনটা টিপতে হাত কাঁপল না শুভ। ফিরে চলল তিন মাসের স্মৃতিটা ভিড়ের মাঝে ফেলে রেখে দিয়ে। তখন অন্তরা ক্রিসমাসের কেকের অর্ডার ঘরে ঘরে পৌঁছতে ব্যস্ত, মা'কে হাসপাতালে ভর্তি করে এসে। টাকাগুলো জোগাড় করে জমা দিতে হবে শীঘ্র, ডাক্তারের কড়া নির্দেশ অপরেশন আজকেই হওয়া চাই।

যেন ব্যঙ্গ করেই বেজে চলেছে পিছনে "উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস, অ্যান্ড আ হ্যাপি নিউ ইয়ার"।

Wednesday, December 23, 2015

পাপবোধ

অন্তঃসারশূন্যতার কামনায় একা যাই চিলেকোঠা ঘরে,
সোঁদা গন্ধ চেপে ধরে টুঁটিখানা তবু বসি মেঝের উপরে।
প্রাণহীন কত স্মৃতি জমে আছে, একদিন ছিল যা আত্মজ, 
আরো কিছু জমবে আজ, প্রাত্যহিক অবক্ষয় হয় যেন রোজও।
মনচক্ষে উঁকি দেয় এই ফাঁকে অজানা সে কত ভৈরবী,
নিজেকে জাগাতে ফের আজও আঁকি তোমাদের এলোমেলো ছবি।
মুক্তি দিই, তাও কেন তারা খোঁজে ফের কোন আয়েশি আশ্রয়
ক্ষুদ্র এই জীবনে সে এইটুকু বুঝে ফেলে - পৃথিবী নির্দয়।
বোধন হল না তবু বিসর্জনের পালা আসে ফিরে ফিরে
যদিও বা বাধা হই, তবুও তো উঁকি দেয় অতন্দ্র তিমিরে
বাধ্য হই, ক্লান্ত হই, সজ্ঞানেই ঘটে যায় কত শত জেনা
অন্ধকার কুঠুরিতে যার কথা কেউ বুঝি জানতে পারবেনা।

Monday, December 14, 2015

অনাম্নী

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বর্ণময় গতিশীল তাও তো ফ্যাকাসে
কলরোল, বহুভোগ, অগুনতির মনোযোগ, তবুও একা সে
অন্তহীন সমাহার, সবে আছে অধিকার, অপ্রাপ্য দীনতা
শুধু বুঝি তারই ফাঁকে নিশ্চুপ আওয়াজে ডাকে লুপ্ত স্বাধীনতা।

হারিয়েছে হয়তো আরো বেরঙিন চশমায় যা আছে লুকোনো
সমস্ত তারুণ্য বুঝি ব্লিচিংয়েতে ধৌত হয়ে সজোরে নিংড়নো 
নর্দমায় বয়ে গেল সে অশেষ সম্পদ, শুধে চেয়ে থাকা
যেমন অস্থির কালে কালো মেঘে উড়ে যায় দূরের বলাকা

তেমনি আকাশ ছিল অন্ধকার বলরুমে উদ্দামের মাঝে
যদিও সেটার নাম অন্য কিছু আমাদের ঘুমন্ত সমাজে।

Thursday, December 10, 2015

ভাল ছেলে

আমি আসলে কেবল ভাল হতে চেয়েছিলাম
কিন্তু ভাল হওয়া অত সহজ নয়
ভাল হতে চাইলেও কিন্তু অনেকখানি খারাপ হতে হয়
সহজ ইকুয়েশন, কিন্তু আরও বেশী সহজ করতে গিয়েই বুঝি জটিল হয়ে গেল জীবনবৃত্তি।

সব কিছু নিখুঁত হবে, নিশ্ছিদ্র নৈতিকতা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি
এই নৈতিকতার বেড়াজাল, আর আকুলিবিকুলি করতে থাকা অনৈতিক মন
চোখের সামনে ধরে থাকা আইডিয়ালগুলো আবার করতে চায় বিভ্রান্ত
সোশ্যাল কন্ডিশনিং এইভাবেই বিষিয়ে দিয়েছে স্বন্তন্ত্র চিন্তার প্রয়াসী মস্তিষ্ককে।

আর আছে দৈবত্বের লোভ, শ্রেষ্ঠত্বের এই অনুভূতি হার মানায় অফুরন্ত জহরতকে
তাই রচে যাই কখনো বা ভিক্টিমহুডের গাঁথা, সকলকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে
আনন্দ, আত্মতৃপ্তি, জয়, সব কিছুই মিশে থাকে সেই মর্মস্পর্শী উপাখ্যানে
শুধু সত্যিটা ছাড়া, কারণ তাকে স্পর্শ করতে চাইলেও যে একটু খারাপ হতে হবে।

Tuesday, December 8, 2015

শুদ্ধির কাব্য

যখন চারপাশ দেখি, অবিন্যস্ত
দিগভ্রান্ত, হাতড়াই দিগ্বিদিক
অন্ধকার আরো গাঢ় বুঝি
চলে গেল কিছু যা প্রান্তিক।
রয়ে গেল কিছু চিন্তারাজি
অফুরন্ত সময়কাল কাটে
অজান্তেই অচেনা নমাজি
ধাক্কা দিল সহসা সপাটে।
এইভাবেই বুঝি কিছু শুরু
সংজ্ঞাহীন, ধিকিধিকি জ্বলে
সে আগুনে শুদ্ধ হই কিছু
আর কিছু ভস্ম সে অনলে।

Saturday, December 5, 2015

দ্বিচারিতা

সংগ্রাম শুধু অস্তিত্বের, নীতির প্রশ্ন নরকে
কিছু স্বপ্ন সে চোরাবালিতেই ডুবে মরে এক পলকে
রয়ে যায় শুধু স্মৃতিচিহ্নের ফলক ক্ষুদ্র আলেয়া
কিছু কাস্তের দর বাড়াতেই রক্তেতে শান দেওয়া ।

তর্কের নীতি একমাত্রিক, রাস্তায় হাঁটা দস্তুর
বিপরীতগামী পথ মারালেই ওড়ে খিস্তির মাস্তুল
আবেগ পেয়েছে বুর্জোয়া ছাপ ট্রটস্কাইটের জাঙিয়া,
কিছু কাস্তের দর বাড়াতেই রক্তেতে শান দেওয়া ।

অবিশ্রান্ত স্রোতের মিছিল, বিশ্রাম নেই জনতার 
যতদিন আছে সামনে ও পিছে উৎস আসল ক্ষমতার 
অভ্যাসগত হয়ে গেছে বুঝি, আপনি জাগায় সমীহা 
মাঝে শুধু চলে জঙ ছাড়াতেই  রক্তেতে শান দেওয়া । 

Wednesday, December 2, 2015

সাধ্যাতীত

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কবিতার সাধ্যের অতীত, সবকিছু ছেড়ে তাই অসীম অনন্তপথ ধরি। আসলেতে বল্গাহীন, তবু আজ ফিরেছে সম্বিৎ, স্পর্শসুখ ছিল কিছু অব্যক্ত, অস্পষ্ট, অশরীরী।

আজ সেই পারি বেয়ে বুঝি কোন অনুশোচনা নেই, প্রত্যেক কণায় কিছু রয়ে গেছে রঙের মিশ্রণ;
কাটাকুটি খেলা শেষে শূন্যস্থান পুরি বাস্তবেই ,
তবু কেন নতমুখে ছুঁল কোন উষ্ণ প্রস্রবণ?
তীব্রতার ঊর্ধ্বে উঠে সোনাঝরা শুকনো মাটি ছুঁয়ে পৌঁছে গেছি দূর গাঁয়ে, যেইখানে রক্তজবা ফোটে- অনুভূতি কিছু থাক ভালোবাসা শোণিতেতে নুয়ে আর থাক কিছুখানি লিখে রাখা অক্ষয় তুলোটে।

Wednesday, November 25, 2015

ক্ষুদ্র ইচ্ছা

অসম্ভবের স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবেতে মুখ লুকোই অনেক লোকে বলবে জানি ছন্দে আমি মন্দ নই তবুও, সেসব স্পর্শ পেয়েও, ছাড়ছি আশা পত্রপাঠ খুচরো খেলো জীবনে ডুব, অর্থনীতি, বাজারহাট। 

নিঃস্পৃহতা? যদিও তা নয় উদ্যমেরও অভাব নেই

তবুও বুঝি সময়স্রোতে ভাসতে গিয়ে হারাই খেই কল্পনাতে আমিও রাজা স্বপ্ন আমার দুই মুঠোয় ভাঙলে পরে যদিও দেখি কিচ্ছুটি নেই হাত দুটোয়।

তবুও কেন একটি ডাকেই আবার সারা দেয় হৃদয় অপ্রাকৃত সময়কালেও এই কি অশেষ প্রাপ্তি নয়? ক্ষুদ্র হাসি ক্ষুদ্র আশা এইটুকুনিই চাই কতক এই খুশিতেই ভর করে ফের দিলেম পারি স্বপ্নলোক।


Tuesday, October 20, 2015

সুদূরপাড়ি

অতীত অন্বেষণে
চিনতে পারি না নিজেকেই আজ,
কোথায় ভুলিয়ে এনেছ সমাজ ভেবে পাই না সে মানে।
প্রকৃতি করেছে আড়ি 
বসন্ত গেছে তপ্ত চুলায়
শরতের ঘাস লুটায় ধুলায় ঝরা সময়ের টানে।
সখীর হৃদয় খানা
পরে আছে বুঝি সুখের আশায়
অপলক স্বর যদিও শাসায় বাস্তবতার ভানে।
মৃত্যু এখন সাথী
উপত্যকায় শকুনের পাল
তাজা রক্তের পরেছে আকাল আপাতত এইখানে।

Wednesday, October 14, 2015

মহালয়া

আশ্বিন, শারদপ্রাত, এলোমেলো দৌড়ে কাশবন 
আনন্দ হাতড়াতে আজ ভরসা সে অতীত রোমন্থন 
এখন ঝাপসা লাগে আতস কাঁচের সাহায্যেও 
তাই ফিরি সেই দিনে ফিরবে না যা আর মোটেও। 

হয়তো ভবিষ্যতে এইদিন হবে সুখকর 
তখন ফিরব এই বর্তমানে আজ যা ধূসর 
আপাতত তোলা থাক সেই দুঃস্বপ্নের খোঁজে 
চাবি যার আশাকরি কোনদিন মিলবে না সহজে। 

তবুও প্রতীক্ষা করি বাৎসরিক নির্ঘণ্ট মেনেই 
তবুও থমকাইনা আজও পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্বেই  
এখনো হতাশা আসে বিদায়বেলার মেঠো সুরে 
কেবল আনন্দটাই রয়ে গেল কোন সে সুদূরে। 

Wednesday, October 7, 2015

তর্পণ

আজ সকাল থেকে শুয়ে আছি ছাদে-- 
বিস্তীর্ণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি উদাসীনভাবে-- 
অনেকদিনের অভ্যাস অনভ্যাসে পরিণত করতে চাই না বলেই শুয়ে থাকা-- 
আকাশ পাল্টে যাচ্ছে। 

আকাশ বদলে যাচ্ছে -- 

আগে ছেয়ে থাকতো পাখিতে-- 
আমার যদিও পছন্দ ছিল চিল শকুন-- 
মৃত্যুকে বরাবর ভালবাসি বলে কিনা জানিনা। 

আজকাল আর তাদের দেখতে পাইনা-- 

মৃত্যু বুঝি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে-- 
মৃত্যুও আজ আমার কাছে মৃত।
সেই মৃত্যুর স্মৃতিতেই আজ তর্পণ করলাম পিতৃপক্ষ বলে।

Tuesday, September 29, 2015

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

বাঙ্গালার তন্ত্রসাধনার ঐতিহ্য চলে আসছে বহুযুগ ধরে, সাংখ্যদর্শনের হাত ধরে বৌদ্ধধর্মের(বজ্রযান) মাধ্যমে বাঙ্গালীর তন্ত্রসাধনার উৎপত্তি। সেই তন্ত্রসাধনার ক্রিয়াকলাপ কিন্তু ছিল সকলের অগোচরে, কেবলমাত্র এর সাধকদের মধ্যেই এর নিয়মাবলী চর্চিত হতো। সেই তন্ত্রসাধনাকে প্রথম পুস্তক আকারে এমন বৃহৎপরিসরে প্রথম নিয়ে আসেন পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তিনি এই রচনা করেছিলেন সংস্কৃতে, এবং মূলত তা নিয়মাবলী হিসাবেই রচিত তন্ত্রসাধনার অনুসারীদের জন্যই, কিন্তু সেই রচনার ঐতিহ্য এখনো প্রবাহমান। আমাদের বর্তমান কালীপূজার রূপ দান করেছিলেন পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মহাশয়, দক্ষিণাকালিকার পূজাপদ্ধতির প্রবর্তন করে। সে সময় তার কাণ্ডকারখানাকে উপহাস করে আগমবাগীশী কাণ্ড বলা হতো, কিন্তু তাই হয়ে উঠেছে আমাদের পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

কৃষ্ণানন্দের জন্ম বারেন্দ্র শ্রেণীভুক্ত কাশ্যপ গোত্রীয় মণ্ডলজানীর মৈত্র বংশে। তাঁর লীলার সময় বেশিভাগ মানুষের মতে পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে। অনেকে অবশ্য তাঁকে সাধক রামপ্রসাদ সেনের গুরু হিসাবে বর্ণনা করেন, কিন্তু দুইজনের পূজাপদ্ধতির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট তফাৎ ধরা পরে, যথা রামপ্রসাদ বাঙ্গালা ভাষায়, সকলের সামনে তাঁর ভক্তিকে প্রকট করেছেন কিন্তু উল্টোদিকে কৃষ্ণানন্দ ছিলেন তাঁর পূজার ব্যাপারে অত্যন্ত গোপনীয়তা মেনে চলার পক্ষে। একজন গুরু শিষ্যের মধ্যে সাধারণত এতোটা বৈপরীত্য প্রথম থেকেই বিরাজমান হয় না। তাই অধিকাংশ মানুষের মত অনুযায়ী তাঁকে আমরা শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক হিসাবেই দেখছি।

মহাপ্রভুর মত কৃষ্ণানন্দেরও বাস ছিল শ্রীধাম নবদ্বীপেই। সেইখানকার আগমেশ্বরী-তলা হল এই তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিতের লীলাক্ষেত্র। এই শক্তিসাধকের জন্ম কিন্তু এক বৈষ্ণব পরিবারেই, তাঁদের পারিবারিক দেবতা রাধাবল্লভ প্রায় ৮০০ বৎসরের পুরনো। শোনা যায় শ্রীচৈতন্য, রঘুনাথ শিরোমণি এবং কৃষ্ণানন্দ এক গুরুর কাছে অধ্যয়ন করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে কৃষ্ণের ভজনা থেকে শ্রীচৈতন্যকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানোর পর কৃষ্ণানন্দের সাথে শ্রীচৈতন্যের মনোমালিন্য হয়, এবং দুইজনের পথ পৃথক হয়। কৃষ্ণানন্দ শক্তিসাধনায় সিদ্ধিলাভ করে কালিকামূর্তির রূপ প্রদান করেন, ইতিপূর্বে কালীপূজা হতো ঘটে।

কৃষ্ণানন্দের ভাই সহস্রাক্ষ(মতান্তরে মাধবাচার্য্য) ছিলেন বৈষ্ণব, এবং সেই নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিল বিরোধ। একবার তাঁদের গৃহে এক কাঁদি মর্তমান কলা হওয়ার পর দুই ভাই মনে মনে ঠিক করেছিলেন তাঁদের স্বীয় ইষ্টদেবতাকে সেই ফল ভোগ হিসাবে দেবেন। ফল পাকার সময় কৃষ্ণানন্দ উপস্থিত না থাকার কারণে তাঁর ভাই সেই ফল নিয়ে তাঁর ঠাকুরঘরে রেখে আসেন পরেরদিন ভোগের জন্য। কৃষ্ণানন্দ ফিরে এসে সে কথা জানার পর সেই ঠাকুরঘরে যান সবার অগোচরে কলা নিয়ে আসতে। সেই সময় তিনি দেখেন মা নিজে হাতে গোপালকে সেই ভোগ খাইয়ে দিচ্ছেন। সেই সময় থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে তাঁদের স্বীয় মত অনুযায়ী পূজা অর্চনার কারণে ঘটিত বিবাদভঞ্জন হয়। এটি একটি সুপ্রচলিত গল্প, কিন্তু এর মাধ্যমে শাক্ত এবং বৈষ্ণব মতের মধ্যে যে মেলবন্ধন, যা আমরা পরিবর্তীকালেও এই বাঙ্গালার বুকে শাক্তসাধনার অঙ্গ হিসাবে পাই তা আবার প্রতিফলিত হয়।

তাঁর 'তন্ত্রসার' গ্রন্থ যা তাঁকে সর্বাধিক পরিচিতি প্রদান করেছে তা তন্ত্রশাস্ত্রের সকল ক্রিয়াকে একত্রে সংকলিত করেছে। এর পূর্বে এমন স্বয়ং সর্বস্ব কোন গ্রন্থ ছিল না। এই প্রসঙ্গে আর একটি কিংবদন্তীর কথা উল্লেখযোগ্য যা হল আদ্যাশক্তির রূপ সম্পর্কিত। সেই সময়ে আদ্যাশক্তির কোন মূর্তি ছিল না, তিনি স্বপ্নে কৃষ্ণানন্দকে দেখা দিয়ে বলেন তাঁর মূর্তি প্রকাশ করতে সকালে উঠে প্রথম দেখা মূর্তি অনুসারে। সকালে উঠে কৃষ্ণানন্দ প্রথম দেখলেন এক গোপরমণীকে যিনি লজ্জায় জিভ বের করে ফেলেন। সেই অনুসারেই আদ্যাশক্তির মূর্তি সৃষ্টি করেন কৃষ্ণানন্দ। প্রতিদিন দক্ষিণাকালীর মূর্তি নিজের হাতে গড়ে পূজা করতেন কৃষ্ণানন্দ। একদিন সকালে তাঁকে বিসর্জন দিতে যাওয়ার সময় তা দেখেন একজন কাজী এবং নিকটস্থ ভূস্বামীকে সে কথা জানান। এরপরে সেই ভূস্বামী এসে কৃষ্ণানন্দের কাছ থেকে আশীর্বাদ চান দুই হাতে, এবং সেই আশীর্বাদ করার সময় উনি সেই মূর্তি দেখেন এবং এই বিষয়ে জানতে চান। তখন কৃষ্ণানন্দ তাঁর স্বপ্নবিবরণ এবং তন্ত্রসার গ্রন্থের কথা প্রকাশ করেন। তখন রাজা সেই পূজাকে বৃহদাকারে সম্পন্ন করেন এবং কৃষ্ণানন্দকে আগমবাগীশ উপাধি প্রদান করেন। সেই থেকে কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অদ্যাবধি শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কৃষ্ণানন্দের পুত্রের সাথে বিবাহ হয় সাধক জটীয়া যাদুর কন্যার। তাঁর উত্তরপুরুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কৃষ্ণমঙ্গল বিদ্যাবাগীশ, রামতোষণ বিদ্যালঙ্কার, রামলোভন বিদ্যাভূষণ ইত্যাদি। রামতোষণ হাতিবাগানের চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন, এবং খড়দহের বিশ্বাস বংশের প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাসের অর্থানুকূল্যে তন্ত্রের আর এক বিখ্যাত গ্রন্থ 'প্রাণতোষিণী মহাতন্ত্র' প্রকাশ করেন। 

Wednesday, September 16, 2015

অপ্রাপ্তির হিসেবনিকেশ

তখন আমি অনেক কম বয়সী
তখন সাধ জেগেছিল চুম্বনের
সমস্ত ভূমণ্ডল, পৃথিবী সব কিছু অগ্রাহ্য করে
শুধু চুম্বন চলতে থাকবে, ওষ্ঠ থেকে ওষ্ঠের মধ্যেই সঙ্কুচিত হবে সর্বস্ব
কিন্তু পাইনি
চেষ্টাও যে করেছি এমন নয়
হয়তো প্রথম যৌনতার হাতেখড়ি
ঔচিত্য যে যুদ্ধে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয়
কোন দুষ্ট সরস্বতীর কাছে সুবিচার চাই
সে শিক্ষার অপূর্ণতা, দোষ যে আমারই তাই প্রতিকার সেও তো আমার
তাই এই ফলশ্রুতি
তাই বুঝি এই অবক্ষয়
উচিৎ অনুচিতের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে গেছি
চুম্বন রয়ে গেছে অন্ধকূপে
ওষ্ঠাধার রয়ে গেছে অসিক্ত
আমার নিজের ইচ্ছায় সে শুষ্কতাকে বরণ করেছি সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে
নিজস্ব সিদ্ধান্ত
তবু আজ বড় অনুশোচনা হয়

Sunday, September 6, 2015

স্বপ্ন ফেরীর দেশে

আলস্যে আজ দিচ্ছি পারি ঘুমের ঘোরে
ভাসছি বিনা ক্লান্তিতে নীল মেঘের উপর
বেড-টি তো সে জুড়িয়ে গেল সাতসকালে
ফিরছি যখন নাম না জানা অচিনপুরে ।
কয়েক যোজন সেই খেয়ালী রাস্তা ধরে
ধুলোর মাঝে ফটফটিয়ে ফেলছি চটি
বৃষ্টি বেবাক করুণ সূরে বলছে বুঝি
ধুলোই নাহয় আজকে দেদার উড়ুক ওরে।
প্রাত্যহিকী পারির শেষে অন্ত্যমিলে
ভাঙবে আবার স্তব্ধতা সেই উগ্র ডাকে
সাবধানী ঢিল সেই তো আবার পড়বে এসে
করবে আবার দোদুল্যমান ঘুমের ঝিলে।
যদিও সে রোজ এমনি ডাকে কাজের দিনে
আজকে নাহয় জিতুক কিছু অন্য ভাবেই,
গড়ুক কিছু নতুন স্মৃতি, দেওয়াল ভেঙ্গে,
ব্যস্ততাহীন ঘুমের সে দেশ প্রদক্ষিণে ।

Wednesday, August 26, 2015

ছাত্ররাজনৈতিক অভিজ্ঞতা

ছাত্র রাজনীতির সাথে সেভাবে কোনদিন যুক্ত ছিলাম না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিকরণের পক্ষে কোনদিন ছিলাম না। তাই হয়তো সারা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির যে কদর্য রূপ আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে এসেছে এবং আসছে তা হয়তো অবচেতনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে অনেকাংশে।
কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করার জায়গা নেই যে বিভিন্ন সময়ই কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অন্যায় অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অসংগঠিত ছাত্রেরা হৃদয়ভরা আবেগ, দুচোখ ভরা স্বপ্ন এবং ঋজু মেরুদণ্ড সত্ত্বেও উড়ে যায় খড়কুটোর মত। আমার ভেতরের কোন এক অজানা প্রতিষ্ঠানবিরোধী সত্ত্বা তাই ছাত্ররাজনীতিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে পারে না।
ছাত্ররাজনীতির যে দিকটা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিত করে তোলে এবং যা হয়তো অনেককেই এর থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য করে তা হল এর বিশৃঙ্খলা। এছাড়া নীতিহীনতা, খবরদারী ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই। সংগঠন বৃদ্ধির তাগিদে এমন মানুষকে সঙ্গে আনা যারা হয়তো আদর্শের দিক দিয়ে এর ধারে কাছে নেই, অথবা বলপূর্বক মানুষকে সংগঠনে যুক্ত করা।

আজ অনেকদিন বাদে একসাথে দুইটি ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটলো নিজের অজান্তেই। একটি এস এফ আই, অন্যটি ডি এস ও। অতীতে তাদের অনেক সংঘর্ষ(হয়তো একপক্ষের মদতে) সম্পর্কে  আমরা জ্ঞাত হয়েছি, তবে আজ তেমন কিছু চোখে পড়ল না। কিন্তু তাদের পথচলতি মানুষের সামনে নিজেদের উপস্থাপনের ভঙ্গি নিঃসন্দেহে একটা তফাৎ স্পষ্ট করে দিল।

মহাত্মা গান্ধী রোডে আটকে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে বাস ছেড়ে নেমে এলাম পথে, গন্তব্য কলেজ স্ট্রিট। দেখি অগণিত ছাত্র, কলেজ, স্কুল বা তাও নয়, বিপ্লবের সংলাপ সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত করতে করতে এগিয়ে চলেছে এমন কোন নতুন দিনের স্বপ্নের কথা জানাতে যা ইতিপূর্বে তাদের রাত্রিকে আলোকিত করেছে কিনা সন্দেহ। ভবিষ্যতের কথাও তথৈবচ। এবং খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রাপ্তির ভাণ্ডারে থাকছে পথচলতি মানুষের হয়রানিজাত শাপশাপান্ত।

সেই মিছিলের জ্বালায় সেঁধিয়ে গেলাম আনন্দের শোরুমে, উদ্দেশ্য অবশ্যই বিনামূল্যে একটু হাওয়া খেয়ে নেওয়া। খানিকক্ষণ বাদে কানে ভাসতে থাকল গীটার সহযোগে কিছু গান যা, অস্বীকার করব না, বেশ শ্রুতিমধুর ঠেকছিল। এগিয়ে গেলাম উৎসসন্ধানে ঔৎসুক্যের সাথে। দেখলাম একটা সুসংগঠিত কর্মসূচি। গানের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতাও যেন কোন এক শৃঙ্খলার ইঙ্গিত বহণ করে।
গানের ভক্ত আমি এমনিতেও, আবার মোহিত হলাম যেন বেশ কিছু চেনা, কিছু অচেনা সুর কথার সাথে পরিচিত হয়ে। চলে এলাম, তাদের কর্মসূচির দাবীদাওয়ার কথা না জেনেই, তবু তার মাঝে কেন জানি মনে হল উপস্থিত অনেকেই কিন্তু সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যা খুব জরুরী অন্তত আমার মতে। টিভির মাধ্যমে চেনা এক মুখ দেখলাম সেখানে, ঝালমুড়ির ঠোঙা হাতে বোধকরি। আলোড়ন ফেলেছিলেন তিনি আচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করে। এই ঝালমুড়ির কথা কেন প্রাসঙ্গিক জানি, কিন্তু কেন জানিনা এসব কিছু জিনিস বোধকরি অবচেতনেই কোন বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠে।
কর্মসূচির সব কিছুই হয়তো সংগঠিত হওয়ার ফলস্বরূপ। পুরো বক্তব্য হয়তো নিছক কিছু দৃশ্য এবং তৎসম্পর্কিত নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে, যাতে অবশ্যম্ভাবী ভাবে মিশে আছে কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ, এবং মিশে আছে হয়তো রাজনৈতিক অজ্ঞতা এবং অপরিপক্কতা। অনেকে বলবেন হয়তো এতেও আছে কোন শ্রেণিগত বিশ্লেষণ, তবে অধিকাংশ জনের মতামত তো এই ধরণের ছুটকো আপাত অসার কিছু ঘটলাবলীর ভিত্তিতেই তৈরি হয়।

Monday, August 24, 2015

অদৃষ্ট


ভ্রূক্ষেপ নেই কিছুতেই। 
তবু যন্ত্রণা শুধু এই, 
অবসরহীন জীবনযাপনে যদি ওঠে ঝড় দুর্বার, 
সহসা আঘাতে বিশ্বের সাথে
কালরাত্রীর কঠিন কড়াতে হয় বিশ্বাস চুরমার।

আলোড়ন মাঝে স্থিতধী
আমি তো কখনো সে নহি
দ্বন্দ্বের ফের পরিবর্তনে গিয়েছি জীবনে পিষ্টে 
এখন আমার সময় থামার
আলো করি ফের পশুর খামার, লেখা যা ছিল অদৃষ্টে।

হয়তো আমার বিনির্মাণেই
অস্থির কাল রয়ে গেছে সেই
অসাবধানতা অবলম্বনে আচম্বিতেই স্তব্ধ, 
তবুও সহজে মেনে নেওয়া সাজে
এই বিশ্বাসটুকু সাথে নিয়ে আজে, আসলে সবই প্রারব্ধ।



Saturday, August 22, 2015

যুক্তির বয়ান

যুক্তি দিয়ে তর্কাতর্কি তাতেই ছিলাম ব্যস্ত 
সময় গেল অতর্কিতে অজানা কোন প্রান্তে
যুক্তিরাজির সমস্ত দায় আমার পরেই ন্যস্ত
সঙ্গী করে তাকেই কেবল হারিয়েছি বনান্তে।

নিঃস্ব এখন রয়েছে সাথে কেবল কিছু যুক্তি
খুঁজতে যে চাই অন্য কিছু, করেছি যার সৎকার
এখন বুঝি সে হতাশাই করতে চাই দ্বিরুক্তি
নিজের কাছে নিতেই হবে নিজের হাতের দায়ভার।

ভালবাসার কাঙালি আজ, অবশেষেই অস্থির
কী বা আশা তবুও করা শুকনো স্বীকারোক্তি
আসলে এ শুধুই বিলাপ, করছি না ফের তদ্বির
শেষের কথা বলে খালাশ ছিল এতোই শক্তি। 



Wednesday, August 12, 2015

আটপৌরে

আটপৌরে ভাবনা কেবল,
এক ফোঁটাও সে অতীন্দ্রিয়ের কল্পনা নেই
তবুও বুঝি খোলামকুচির 
নোটের তরে কাগজ কালি গচ্চা যাবেই।

আটপৌরের দল ভারী সেই
তবুও যেন তাদের কথা ভীষণ রেয়ার
তাই তো লিখি তাদের কথা
নইলে সে সব গল্পগুলো কে বলে আর।

ছন্দবয়ান মকশো করে,
অসংলগ্ন কথার তোরে বৃথাই ভ্রমণ
মগজ যতই আশকারা দিক
সংগোপনে উলটো পথে যাচ্ছিল মন।

নিজেই বুঝি দুভাগ হলাম
অবশ্য তা মন্দ কি আর, ডবল রোলে
কত লোকেই সারা জীবন
কাটিয়ে দিল, এটারই আজ বাজার বলে।

Monday, August 3, 2015

ইয়াকুব

ইয়াকুব মালিক-- হয়তো বা কিছু মানুষের কাছে ছিল স্মৃতির গভীরে, কিছু মানুষের কাছে সততই মগজের ক্যানভাসে ভেসে ওঠা একটা নাম। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ কিন্তু আদপে একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা হতে পারে, কেউ হয়তো তার আপনজন, কেউ তার আপনজনের হত্যাকারী হিসাবে মনে রাখে ইয়াকুবকে। এদের ছেড়ে দিলেও ভারতের অসংখ্য জনসাধারণের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল ইয়াকুব ভারতের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ঘটনার আইনি পরিণতির রূপ হিসাবে।
ফাঁসির আদেশ তাকে নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত সবাই শুনিয়েছে বেশ কিছুদিন যাবৎ, এমন কি রাষ্ট্রপতি ক্ষমাভিক্ষার অর্র্জি ফিরিয়েছেন তাও কিছুদিন হল।  অবশেষে সেই শেষ সময় কাছাকাছি আসার সাথে সাথে আবার বেশ কিছু চর্চা শুরু হল, যা হয়তো আগেও হয়েছে কিছু কম মাত্রায়। এমনিতে ভারতে ইদানিংকালে মৃত্যদন্ড খুব বেশি কার্যকর হয়নি, যাও বা হয়েছে তাও খুব চুপচাপ অনেকের অজ্ঞাতসারে। কিন্তু এই ঘটনাটি হয়ে উঠল বহুলচর্চিত একটি বিষয়।
মৃত্যুদন্ডের উপযোগিতা নিয়ে অনেকদিন যাবৎ আলাপ আলোচনা চলছেই, প্রায় প্রতিটি মৃত্যুদন্ডের সময় আবার তা মাথাচাড়া দেয়।  স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে বিভিন্ন দেশের কথা যারা এই প্রথা বর্জন করেছে। কিন্তু সেই অর্থে এই বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়না, বা হলেও তা থেকে যায় সাধারণ নাগরিকের কাছে অজানা। ভারতের ক্ষেত্র আলাদা করে পর্যালোচনা করে, বিশেষ করে সীমান্তপারের সম্পর্ক, এবং জঙ্গি হামলার ইতিহাস পর্যালোচনা করে, বা ভারতের ভূমন্ডলে এই শাস্তির মনস্তাত্ত্বিক ফল অপরাধপ্রবণতার উপর কেমন প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার এখনো অভাব রয়ে গেছে।
অবশ্য অনেকে আছেন যারা এই মৃত্যুদন্ডের বিরোধিতা না করেও ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার পক্ষে। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হল ইয়াকুবের আত্মসমর্পণ। তার সপক্ষে তারা ভারতের প্রাক্তন গোয়েন্দা বি রমনের ২০০৭ সালে রচিত একটি প্রবন্ধ উল্লেখ করছেন। সমস্যা হল তিনিও দাবি করেছেন যে ইয়াকুব একদা আত্মসমর্পণ করার বাসনা নিয়ে নেপাল এলেও আইনজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সে বাসনা ত্যাগ করে ফের পারি দিচ্ছিলেন করাচীতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার এবং তার পরিবারের ভারতীয় পাসপোর্টের কারণে তিনি ধরা পরে যান। তিনি অবশ্য অনেক প্রামান্য নথী নিয়ে রেখেছিলেন নিজের কাছে, যা পরে তদন্তে সাহায্য করে।  কিন্তু যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণের বাসনা ত্যাগ করেই ফেলেছিলেন তখন কাজেই সেই যুক্তিতে ফাঁসির বিরোধিতা টেকে না।
দ্বিতীয় বক্তব্য হল তদন্তে সাহায্যের। এ কথা অনস্বীকার্য যে ইয়াকুব তদন্তকারীদের অনেক সাহায্য করেছিলেন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই। কিন্তু যেমন একজন ডুবন্ত মানুষ শেষ কাঠের টুকরো আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করে তেমনই ছিল হয়তো ইয়াকুবের এই চেষ্টা। নিজের শাস্তি কমানোর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা ছাড়া আর কোন উপায়ান্তর তার ছিল কিনা সেটাও ভেবে দেখার মতো ব্যাপার।
এছাড়া অনেকে এই যুক্তি উপস্থাপন করছেন যে তার সহযোগী অনেকে এই মামলায় যাবজ্জীবন বা তার থেকেও কম শাস্তি পেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজে হাতে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। কিন্তু ভারতের আদালত চিরকাল মূল চক্রান্তকারীদের সাজার ব্যাপারে বেশি কঠোর থেকেছে সৈনিকদের থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রমান যে কথা বলছে তা হল এই সমস্ত কিছুর পিছনে অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে অস্ত্রের যোগান, সব হয়েছে ইয়াকুবের হাত ধরে, যে অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে ইয়াকুব।
ইয়াকুব শেষ পর্যন্ত বলে এসেছে সে নির্দোষ, কিন্তু আদালত কাজ করে প্রমানের উপর ভিত্তি করে। ইয়াকুবের তার ভাইয়ের ব্যবসায় সাহায্য থেকে শুরু করে নিজের গাড়ি তাদের ব্যবহারের জন্য দিয়েছে কোন ইতস্ততা ছাড়াই। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে সে আসল ঘটনা সম্পর্কে ছিল সম্পুর্ন অজ্ঞ, এবং তার অজান্তেই সমস্ত কিছু ঘটে গেছে তার মাধ্যমে তাহলেও কিন্তু এর জন্য দোষ দেওয়া চলে না ভারতের আদালতকে, বরং দোষ বর্তায় তার নিজের ভাই টাইগার মেমনের উপরেই, এবং কিছু অংশে ইয়াকুবের নিজের উপরেও।  এবং সে কথা সে বুঝতে পেরেছিল বলেই হয়তো সে আত্মসমর্পণের সংকল্প ত্যাগ করেছিল। 

Sunday, July 19, 2015

বিদায়গীতি

আশাকরি একদিন সমস্ত দ্বন্দ্বের ঘটে যাবে অন্তিম আহুতি
অনন্ত চিতায় নয়, নিভে যাবে শেষ শিখা, ছাই শুধু, অকিঞ্চিৎকর 
মুক্তি পাবে একই সাথে, তিলে তিলে জমে ওঠা, অপালিত ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি 
এ কথা আমার নয়, প্রতীকস্বরূপ শুধু অগণিত প্রেমিক প্রবর ।  

হয়তো চেয়েছে সেও একইভাবে মৃদুস্বরে মুক্তির উন্মুক্ত আকাশ
বিস্তৃত ক্যানভাসে অফুরন্ত রঙখেলা, তুলিকার বেপরোয়া টান
তবু কোন প্রতিশ্রুতি, তারই তরে বয়ে চলা হ্রস্ব দীর্ঘশ্বাস
অস্পষ্ট সে কার্নিশ
, তবুও তো প্রতিরোধে, বাধা পেল প্রত্যয়ী উড়ান।


কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী, ভবিষ্যৎ অজানা নয়, হয়তো বা প্রতি তরফেই   
খেদোক্তির তাই বুঝি শব্দ আজ প্রশমিত ভদ্রতার রাখতে কিছু রেশ। 
সে তো অপ্রাসঙ্গিক, মৃত্যু হয়েছে যার, চিরতরে, ইতিপূর্বেই 
তবু কিছু অনুভূতি মিশেছে যা পঞ্চভূতে, সেটুকুই করব আয়েশ।

Monday, June 1, 2015

রহমানিয়া, এক আশা নিরাশার উপাখ্যান

সঙ্গীতের প্রতি বহুদিন যাবৎ আকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য খুব বেশি  মেলেনি এই জীবনে। যে কটিও বা, হয় কোন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বা রবীন্দ্রসঙ্গীত মূলত। অল্প কিছু একক বা সম্মিলিত প্রচেষ্টা যা আস্বাদন করার সৌভাগ্য হয়েছে তা নেহাত মন্দ লাগেনি, তবে তার কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা চলে না এ আর রহমানের, অন্তত নাম বা খ্যাতির দিক দিয়ে। অন্য মাপকাঠির প্রসঙ্গ ক্রমশ প্রকাশ্য।

এই দূরদেশেও অবশ্য রহমানের শ্রোতার কোন ঘাটতি নেই, যা পরিষ্কার হল টিকিট ক্রয় করার সময় তার চাহিদা দেখে। অবশ্য এই খ্যাতি কতটা স্লামডগ মিলিয়নেয়রজাত তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হল ৩০ মে'র জন্য। হাজার হোক শিকাগো শহরে ভারতীয়দের আনাগোনা তো সর্বজনবিদিত, এবং সেই ১৮৯৩ সাল থেকেই যে তাদের হুজুগেপনার অন্ত নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই রহমানসাহেব যে মাছি তাড়াবেন না একথা সকলের গোচরেই ছিল।

রহমানের গানের দ্বারা বিন্দুমাত্র উদ্বেলিত নয় এমন ভারতীয় মেলা ভার। শুধুমাত্র দেশপ্রেমের টানে যে তার পরিবেশনা দেখতে  ১০০ ২০০ মেইল দূর থেকে দর্শক ছুটে আসবে এমন কথা তার ঘোর নিন্দুকেও বলবে না। বিশেষ করে তার সঙ্গীতজীবনের প্রথম ভাগের গানের কথা ভাবলে নিঃসন্দেহে অধিকাংশ ভারতীয় আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। সেই কারণেই হয়তো আমার এবং বন্ধুজনের মধ্যে। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উপস্থিত হল সেই মুহূর্ত, যা ইতিপূর্বেই অনেকের মনে হয়ে উঠেছিল উজ্জ্বল। মঞ্চে এলেন তিনি সপার্ষদ, যার মধ্যে কেউ যে তেমন পরিচিত মুখ এমন নয়।  অবশ্য দর্শক সেসবের প্রত্যাশীও ছিল না যা তাদের হাবেভাবেই বেশ স্পষ্ট ছিল।

 শুরু করলেন তিনি আমাদের সেই নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে - রোজা, বোম্বে, সাথিয়া, তাল ইত্যাদি এবং আমরাও হারিয়ে গেলাম সেই তালের সাথী হয়ে।  একই সাথে বাহবা দিতে হবে তাদের পেশাদারিত্বের, রহমানের পাশাপাশি আর যার নাম করব তিনি হলেন যোনিতা গান্ধী, এক অনাবাসী ভারতীয় গায়িকা। অবশ্য গানের মধ্যে কখনো প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ ছিল না যে তিনি আদপে ভারতীয় নন। অনুষ্ঠান যে বেশ সুষ্টভাবে পরিকল্পিত তা নিয়ে সংশয় নেই।  তবু যেন অভাব রয়ে গেল কিছু। 

গানের ক্ষেত্রে অনেকেই সুরের মূর্ছনাকে অনেক উপরে স্থান দেন কথার মাধুর্যের থেকে, অস্বীকার করব না যে আমিও তাই দিয়ে থাকি। তবু কেন জানি না অসংখ্য তামিল তেলুগু গানের মাঝখানে কেমন যেন অতীষ্ট হয়ে উঠছিলাম থেকে থেকেই। প্রথমে তাও এমন গান যা আমার পূর্বপরিচিত, অর্থাৎ কিছু হিন্দি গানের তামিল সংস্করণ দিয়ে শুরু হয়েছিল এই পথ চলার, যা আপাত অজানা হলেও মন্দ লাগছিল না নেহাত। ক্রমশ অজানার গলিতে আরো অনুপ্রবেশ, এবং শুরু হল অস্বস্তির। নিজের আত্মিক বা পরিচিত ভাষার গুরুত্ব যেন আরো বেশী করে অনুভব করলাম আবার। সেই কারণেই হয়তো সামান্যতম সুযোগ পেলেই বাংলার কাছে ছুটে যেতে চাই বারবার। 'আমি বাংলায় হাসি, বাংলায় ভাষী বাংলায় জেগে রই'। এছাড়া এ কথা না মেনেও উপায় নেই যে সে গানের সুর এমন কিছু আহামরিও ছিল না যা করে রাখে মন্ত্রমুগ্ধ। তদুপরি এই ছাত্রবৃত্তির সামান্য সঞ্চয় থেকে যেটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম তাতে রহমান না পারার মাচার গেনুদা এ তফাৎ করা সম্ভব ছিল না বললেই চলে। কাজেই হতাশা বিরক্তি ইত্যাদি, এবং তা যে কেবল আমার নয় তা স্পষ্ট হল আমার সামনের সারির এক দর্শকের ফোনের দিকে নজর দিয়ে। সময় কাটানোর ফাঁকে তাকিয়ে দেখি তিনি লিখে পাঠিয়েছেন কাউকে 'উই আর অ্যাট দ্য এ আর রহমান শো। ইউ আর রাইট, ইট সাকস' স্পষ্টভাবে স্বল্পকথায় মত ব্যক্ত।



Wednesday, May 27, 2015

আরো খানিক

জীবন কি কোনদিন পূর্ণ হবে?
জীবনের পূর্ণতাপ্রাপ্তির সম্ভাবনায় নির্নিমেষ হেঁটে চলা
যদিও এ চলার পথ এখনো রয়েছে অজানা, চিরদিনই থাকবে,
তাই এই চলায় কোন ক্লান্তি নেই।
যখন আর চলতে চাইবে না, মনে হবে এসেছি কাঙ্খিত লক্ষ্যে,
তখন খোঁজার শেষ, কিন্তু একই সাথে জীবনের ইতি।
আমি তাই খুঁজে যেতে চাই,
অনন্তকাল ধরে, অনন্ত জিজ্ঞাসা যার উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারো
অন্তত আমার পরিচিতের মধ্যে, সেই ভেবেই প্রশ্ন সাজানো, হয়তো দ্বিচারিতা
তবু অনন্তের পথে থাকা
ফ্রিকশনের বাধাগুলো এভাবেই মুছে নিয়ে চলা, নিজস্ব গতিতে
আসলে যা কেবল বাঁচার আকুতি।
ইতি চাইনি কোনদিন, ক্লান্তি পাইনি কোনদিন
অতীতের ইতিহাসে ভবিষ্যৎ বর্তমান সবকিছু এক করে দিয়ে
নিজের দর্শন সৃষ্টি, অজস্র ভুলচুক থাকবে জানি, তোমাদেরও আছে
আমাদের উপলব্ধি হয়নি আজও
দুই একটা উপলব্ধিতেও ভুলভ্রান্তি তবু রয়ে যাবে
অতএব ভ্রান্তযুক্তি শিরোধার্য, আরো কিছু হাঁটি।


Monday, May 25, 2015

বিপত্তি

রাতবিরেতে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে প্রবাসী,
আগামীকাল কর্মীসভায় মিলছে না কো দোভাষী,
জাপানি যে স্পিকার ছিল খুইয়েছে সে কিমোনো,
মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে ঘুচলো বুঝি জীবনও।

মনের দুখে পাড়ার মোড়ে করতে গেল মাংসাহার
পোড়ারমুখো দোকানি কয় আজকে হনুর জন্মবার ।
উঠন্ত সে মুলোর গতিক চেনায় বলে পত্তনে,
বুঝেছি সে চিরটাকাল পাল্য বাম সমর্থনে ।

সন্ধ্যাবেলা ফুচকা খেতে গিয়ে আবার বিপত্তি
মিষ্টি তেঁতুল জলের চোটে হাসপাতালে সে ভর্তি
গুজ্জু ব্যাটা দেশটাকে হায় করেই দিল গো-বলয়
হাসপাতালে তাকে এখন ফাফড়া লোচো গিলতে হয়।






Friday, May 15, 2015

শেষ অপেক্ষা

আমার অঙ্গন আজ দগ্ধ হবে তোমাদের প্রেরিত শিখায়
জানি তার আঁচ থেকে তুমি সেই ঠিকই আজ ফের রক্ষা পাবে
আমার কলমখানা স্তব্ধ আজ, রুদ্ধ কণ্ঠস্বরটুকু হায়
বিকৃত হয়েছে সব, তোমাদের গোলামিতে মৃত্যুপথে যাবে।

লেলিহান শিখাটুকু বয়ে এনে ছুঁড়ে দেবে আমার কুটিরে
চোখের পলকে সব ছাই হয়ে গেল তবু হাতখানা বাঁধা
যখন গর্জন চাই তখন আশ্রয় খুঁজি মানুষের ভীরে
যা আমার প্রাপ্য ছিল তার ক্ষুদ্র অংশ পেতে পায়ে ধরে সাধা ।

নন্দিত হয়েছ তুমি, নিন্দিত হওয়ার ছিল, অস্বচ্ছ দৃষ্টিতে
আমিও সে বন্দনায় অংশ নিয়ে আপ্লুত, নান্দনিক রূপে
সমগ্র দেশের থেকে সুচাগ্র মেদিনী আজ আশ্রয় ভিটে
নিক্ষিপ্ত হবার শেষ অপেক্ষা সে,  নিঃস্ব হয়ে, অন্ধকার কূপে ।




Sunday, May 10, 2015

রবিগুরুর চর্চা

হে নূতন দেখা দিক আরবার, জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। কিন্তু আক্ষেপ এই যে এই শুভক্ষণের পুনরাবৃত্তি আমাদের জীবনে সহজলভ্য নয়। তোমায় নতুন করে পাব বলে সেই যে একবার হারালাম, সেই বুঝিয়ে হারিয়েই ফেললাম চকিতে। বিরহে বিলীন হওয়াই বোধকরি আমাদের বিধিতে, তাকে মধুরাতে মধুর করার মত, সেই বাঁধন কাটার মত শক্তিমান বুঝি রয়ে গেল কেবল কবিতার খাতাতেই। 
কবিগুরুর সিঁড়ি বেয়ে চলার শুরু সেই 'শিশু'কালেই। তখন সে ছিল আমার সহজপাঠের কবিগুরু, আমার কুমোরপাড়ার কবিগুরু। তখন জোড়াদিঘির মাঠ পেরিয়ে যেতাম ক্ষণেক্ষণেই, টগবগিয়ে রাঙা ঘোড়া ছুটিয়ে, তাই ছিল আমার আনন্দরাজি।
স্কুলে বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করতে হত, এবং প্রথমেই বলতে হত কবির নাম। 'লিখেছেন কবি ...', যে কেন হঠাৎ 'লিখেছেন কবিগুরু' সে প্রশ্ন সেই ছোট্ট মনেই বারবার ঘুরে ফিরে আসতো। কিছু প্রশ্নের উত্তর বোধহয় সময় আমাদের দেয়।
তারপর শুরু হল বোধহয় কিঞ্চিৎ মানঅভিমানের পালা, জানি না সে নবীন পান্থের মনে বিরহবেদনার সঞ্চারণ তুমিই করেছিল, যার জন্য হয়তো সে তখন অপ্রস্তুত ছিল। মৃত্যুকে সহজে মেনে নিতে তখন অসম্মত ছিল সে। তাই পৃথিবীকে কেবল সুন্দর হিসাবে কল্পনার বাসনায় ডুরে ঠেলে রাখা তোমার গল্পগুচ্ছকে। এবং তুমিও তোমার বন্ধনহীন গ্রন্থির দ্বারা সহজেই আমায় ছেড়ে দিলে, মনের বাঁধনে জড়িয়ে রেখেও। ভাল করেই জানতে যে আমি ফিরব, ফের আসতে হবেই।
সেই ফিরে আসা কি প্রকৃতির জানি না, কিন্তু প্রেমভাবনার স্বরূপ যা জেনেছি, সে ভাবনা বোধহয় কোন চলতি হাওয়ায় ভেসে কোনদিন অনুধাবন করতে পারতাম বলে বিশ্বাস হয়না। জানি না তোমায় মানুষ কত ভাবে কত আঙ্গিকে দেখে, কিন্তু আমার কাছে এই এক ভাব, যা এখনো রয়ে গেল মনের মণিকোঠায়। 

রবীন্দ্রচর্চা করিনি তেমনভাবে, ঠাকুরপুজো তো দূরে থাক। তবু পাকা ফলারের সুবন্দোবস্ত চিরকালই পেয়েছি তোমার কলের কাছে গেলে। এখনো সমৃদ্ধ হতে থাকি নিজের অগোচরেই। এই অধমের তোমার সাথে দূরত্বের ব্যবস্থা যত অচলায়তনই করুক না কেন, সমস্ত বাঁধ ভেঙ্গে যেন তুমি বেরিয়ে এসেছ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়। তোমাই চাইনি হয়তো আকুল হয়ে কোনদিনই, তবু পেয়েছি কারণ তুমি তো 'না চাহিলে যারে পাওয়া যায়'। যতবার সেই ধনকে আমি পেয়েছি আঁধার রাতে, যেন নিজের মধ্যে থেকেই কত অনুভূতি তুমি বের করে এনেছ আমার চোখের সামনে। তুমি বলেছিলে 'আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবেনা', সেখানে আমিই বা কি করে তোমায় জানার ধৃষ্টতা দেখাতে পারি। 
বিরহের গীত এত আনন্দধারা বওয়াতে পারে এই ভুবনে সে উপলব্ধিও তো তোমা হতেই লব্ধ। তাই এতো সহজে হাজার দুঃখের মাঝেও এই দুনিয়ার মারের সাগর পারি দেওয়ার সাহস জোগাড় করতে পারি । তোমার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হলে নিজেকে ধনয় মনে করতাম হয়তো, তবে সে তো কেবল মৃন্ময় রূপ। যদি চিন্ময়ের সামান্য কিছু ছোঁয়া মিলে থাকে তাহলে তার কাছে সে চোখের দেখা সামান্যই । যদিও মন মাঝে মাঝে বেয়াদব হয়ে অন্য দাবী করে । তোমার দেখা জানি এ জীবনে পাব না, তাতে হতাশা বা দুঃখের জায়গা রাখি না, সেখানেই থাক ইতি। আজকে হয়তো সবাই আবাহনের সুর শুনবে, কিন্তু তোমার কাছে যেটুকু শিক্ষা পেয়েছি তাতে এইদিনও সেই একই ভাবে বলব 'হে বন্ধু বিদায়'।

Friday, May 8, 2015

নাট্যচর্চা

জীবনের রঙ্গমঞ্চে অনেকদিনের অভিনয়ের অভ্যাস, সেই অভিনয় করায় যে স্বতস্ফুর্ততা দেখিয়ে আসি এতদিনের অভ্যাসের পর তা কখনো মেকি রঙ্গমঞ্চে দেখাতে পারব বলে মনে হয়না, তবে অনেকে পারেন। মঞ্চস্থ নাটক দেখবার উদ্দেশ্য অবশ্য এমনটা এ কথা আমি দাবী করছি না।  বস্তুত সবকিছুই যে কোন একরকমের মঞ্চ সে কথা আদৌ মনে থাকে বা আর কতক্ষণ। আমরা তো সেই পাইকারী হারে আপেক্ষিকতাকেই বেশি মূল্য দিয়ে এসেছি বংশগত বা সমাজগত ভাবে। আর তাই মাঝে মাঝে বুঝি সেই সংস্কৃতির চরকায় তেল দিতেই ঘুরে আসি এদিক সেদিক, রুচিকে আর একটু পরিশুদ্ধ করতে।
কাল গেলাম অপেরা শুনতে। হঠাৎ চলে গেলাম, যাব যাব করে যাওয়া হয় না, শেষ অঙ্কে কষ্টে ল্যাদ কাটিয়ে এতদিনে গেছি, এই ধরণের কোন ব্যাপারই না। খুব তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল মনের মধ্যে, এরকম কথাও বলতে পারি না। তবু চলে গেলাম, ঠিক যেমন করে দেখতে গিয়েছিলাম কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের 'মেয়েটি', তা প্রায় বছর পাঁচেক আগে । নাটক তার আগেও দেখেছি, কিন্তু সেই নাটকটা যেন নতুন করে নাটকের সাথে আমার সম্পর্কের সূচনা ঘটায়। তেমন অবশ্য ঘটালো না 'দ্য বুক অফ মরমন', তবু একটা ঘটনা।
সুসজ্জিত মঞ্চ, ব্রডওয়ে থিয়েটার, দারুন আলোকসজ্জা, এদেশে নাট্যচর্চার রূপ নিঃসন্দেহে বেশ উন্নত। মাঁচা বেঁধে দিন আনি দিন খাই অবস্থার সাথে তার তুলনা চলে না। সেই মোহন রূপে কে রয় ভুলে। পানীয়ের সুব্যবস্থা, আরামদায়ক আরামকেদারা, অজস্র গ্যালারী, ড্রেস সার্কেল, এবং নিশ্চিতভাবে সেসবের জন্য যথেষ্ট পরিমান পকেট হালকা করতে হবে। আমি অবশ্য যেটুকু না দিলেই নয় তার বাইরে হাঁটবার তেমন সাহস দেখাতে পারিনি, রক্তের গুণ যাবে কোথায়।
নাটক বা গীতিনাট্য যাই বলি, তাদের পেশাদারিত্ব অবশ্যই সন্দেহাতীত, দক্ষ অভিনেতা সে নিয়েও সন্দেহ নেই। সেই গুণাবলীর কারণেই হলিউডের দৌরাত্ম্যের মধ্যেও নিজেদের স্থান ধরে রাখতে সক্ষম এদেশের মঞ্চ। এছাড়া অবশ্যই সংলাপ, সঙ্গীত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাদের প্রতিভা অতুলনীয়। দর্শক আসন মূলত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত দর্শকে পরিপূর্ণ। তাদের মনোরঞ্জন করার ক্ষেত্র খুব সুন্দর ভাবে প্রস্তুত ছিল সমগ্র নাটিকা জুড়ে। কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও একটা ব্যাপার যেন আমাকে আমার মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকল, তা হল সাহসিকতা।
আমি এদেশে রয়েছি কেবল এক নিঃসঙ্গ দ্বীপ হিসাবে, তাই মতামত ব্যক্ত করাও হয়তো নির্বুদ্ধিতা, কোন সমালোচনা হয়তো হঠকারী সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যে বর্তমান সময়ের মধ্যে আমি বিচরণ করছি এবং তারা বিচরণ করছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে। ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি নির্মোহ চিন্তা থেকে উদ্ভূত এমন দাবীও আমি রাখছি না, এবং আপোষহীন অবস্থান হয়তো কেবল রোমান্টিকতাই, তাতে কোন উন্নতিসাধনের লেশমাত্র স্ফুলিঙ্গ লুকায়িত নেই, এই জাতীয় দাবীর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নাহলে তার যৌক্তিকতা উপেক্ষা করতে পারি না । তবু হয়তো, কিছুটা 'অবাঞ্ছিত' জাতীয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গির 'কুফল' স্বরূপ, এই প্রচেষ্টার মধ্যেও শোধনবাদিতার চিহ্নই বেশী দৃশ্যমান হয় তার কাছে, ভারতের সমতুল্য প্রচেষ্টাগুলোর চেয়ে অনেকাংশে বেশী। নিঃসন্দেহে ধর্মীয় অনুভূতি অনেক সহজে আহত হয় আমাদের দেশে, এই জাতীয় অতিসাধারণিকৃত বক্তব্যের জোয়ারে ভেসে যেতে আমি আমি অরাজি। যীশু এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত নতুন যুগের সন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে আমি নিতান্ত অজ্ঞ, কিন্তু তাদের বক্তব্যের অযৌক্তিকতার কথা তুলে ধরা হয়েছিল সুচারু ভাবে। সেই উপস্থাপনা ছিল নান্দনিক, এবং হাস্যরসে পরিপূর্ণ। কিছু ভণ্ড ইমারৎ খসে পড়ার দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষ করতে করতে উৎফুল্ল হয়ে উঠছিলাম আনন্দে, কিন্তু সেই চিরাচরিত মীমাংসাসূত্র।
ভাবছিলাম আমাদের দেশের কথা, সেখানে ধর্মানুভূতি আহত হয়ে থাকে মাঝে মাঝেই, কিন্তু ব্যাঙ্গাত্মক নির্দেশনার ক্ষেত্রে কি আমরা অনেক বেশী সহনশীল নই? কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোন আপোষে আসার কি কোন প্রয়োজন থাকে? বিভিন্ন প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ হয় না এমন নয়, কিন্তু নিছক হাস্যরস পরিবেশনার ক্ষেত্রে কি সত্যি কোন প্রয়োজন থাকে শেষ মুহূর্তে ধর্মীয় গ্রন্থকে কেবল রূপক হিসাবে দেখানোর? এক অর্থে হাস্যরসের ভিত্তি কি তাতে আহত হয়না খানিকটা? জানি না, জানার অনেক কিছু আছে, সংস্কৃতিকে চেনার আছে, মানুষের মনস্তত্ত্ব, তার অস্তিত্বসঙ্কট, তার অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, এবং সেই থেকে উদ্ভূত রফাসূত্রের খোঁজ। সত্যি আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।





Saturday, April 25, 2015

ব্যর্থ প্রতিষেধক

দু লাইন লিখি আর দু লাইন ভাবি 
নানান চিন্তা এদিক সেদিক হাত বাড়িয়ে যায় 
কেউ দেয় আমন্ত্রণ কেউ  করে দাবী 
সব কটাকে লাথ ঝেড়ে সেই বসেছি মাচায় 

কোন ফাঁদ বিপদের কোন ফাঁদ ঝুঁকি 
তালগোলেতে কেউ বুঝি আজ বসল চড়ে শিরে 
অমলিন হৃদিকোষে কাটে আঁকিবুঁকি 
চাপ নিইনা ধুয়ে আবার শুকবো রোদ্দুরে 

মসৃণ ব্ল্যাকবোর্ড দু একটা ক্ষত 
এতই সহজ হাল ফেরাবে রঙিন চকের দাগে?  
আলকাতরার আছে প্রলেপ অক্ষত 
প্রতিষেধক নেওয়াই আছে অনেক আগে ভাগে । 

ইতিউতি চেয়ে থাকি সন্দেহ বাতিক 
অবুঝ হাওয়া হঠাৎ যেন অন্য পথে বায় 
আবহাওয়া প্রতিকূল? সান্নিপাতিক? 
কাগজওয়ালাও দু একদিন যে বারান্দা ফস্কায়। 



Wednesday, April 22, 2015

হারালাম

দু সপ্তাহ, অল্প কদিন, হিসেব কষে কর গুনি চোদ্দটা
তার মধ্যেই কেমন জানি হয়ে গিয়েছি নিতান্ত কাটখোট্টা
খুঁজছি হাঁড়ি সুকুমারের, করতে বুঝি নিজেকে  আধসিদ্ধ
যতই যা হোক রয়েছি তবু আগের মতই আজও অপাপবিদ্ধ।

অতন্দ্র এ বাস্তবতা, উপেক্ষা আর করার বুঝি দিন শেষ
চোখ যদিও খোলাই ছিল, এখন হল চিন্তাধারার উন্মেষ
তবুও কেন লুকোচুরি খেলছে আমার অনুভূতি, সূক্ষ্ম
অজান্তে আজ হলাম বুঝি, আবেগঘন থেকে হঠাৎ রুক্ষ।

কি খোয়ালাম! খোলামকুচি পেলাম কেবল অসঙ্গ লভ্যাংশ
যুক্তি দিয়ে আবেগ মাপি, তবুও তো ফল রইল অমিমাংস
খেলার মাঠে কাঙ্ক্ষিত আজ রইল কোন সুস্থিত ভারসাম্য
ফিরতে যদি অতীতে হয়, তবুও সে আজ অঙ্কে বেশী কাম্য।






Tuesday, April 14, 2015

পয়লা বৈশাখ

অনলাইনের মারফতই হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, 'এপ্রিলের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি পহেলা বৈশাখ এলো কাছে'। তবে আনন্দে দুই হাত তুলে নাচার পরিস্থিতি, পরিবেশ বা মানসিকতা কোনটাই যেন খুঁজে পাচ্ছি না কিছুদিন যাবৎ। বেদনার্ত হওয়ার মতও তেমন কারণ খুঁজে পাই না অবশ্য। শুধুই যা পড়ে আছে তা হল অচেতনতা, এবং সেই সাথে সাথে নিঃস্পৃহতা। কিন্তু সত্যি কি তাই পারি, বারে বারে সে জানান দিয়ে ফিরে আসে আবার আমার কাছে, তার আনন্দের ডালি হাতে। প্রবাস যাপনে সবাই আঁকড়ে ধরে আরো বেশী করে নিজের সংস্কৃতিকে, কিন্তু সম্পূর্ণ নিজের একার প্রচেষ্টায় তা করতে হলে বোধ করি আর হয়ে ওঠে না। এ হল আরেক সংস্কৃতির আধিপত্য, ল্যাদ। পয়লা বৈশাখ তার সাথে অসম লড়াইয়ে নেমেছে ঠিক, অনেক রক্ত ঝরেছে, কিন্তু নিঃশেষ হয়নি। আমাদের দেশের বিবিধ সংস্কৃতির বিভিন্ন উৎসব, কিন্তু তার মাঝে আমার আপনার চেয়ে আপন সেই ধারার কথা যেন আমাদের বেশী মনে হয়।

বাঙালীর 'বারো মাসে তেরো পার্বণ', এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে মনে হয় তা একশো তিরিশ ছাড়িয়েছে। আনন্দ উপভোগ করতে কে না চায়। সারা পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন আনন্দানুষ্ঠানের ঘনঘটা বৎসরভর, পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের আদানপ্রদানের মাঝেই হয়তো সব মিলেমিশে একাকার হবে। আমাদের সকলের মনের অবস্থা সেই 'থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে/  কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে ' । সেই যুগান্তরের শেষে কি থাকবে কি থাকবে তা আন্দাজ করা বৃথা, কিন্তু উৎসবপ্রিয় বাঙালী তার এই চরিত্র যে হারাবে না এমন আশা করা কিছুমাত্র বাতুলতা বলে মনে হয় না।  

পয়লা বৈশাখের যে স্মৃতি অন্তরে খচিত আছে তা হল উদ্দীপনার। চৈত্র সংক্রান্তির ছাতুর থেকে উত্তরণ হালখাতার সন্দেশের মাধ্যমে। সেই থেকে মনে মনে নির্ধারণ করে নিয়েছিলাম গণেশের নধরকান্তি দেহের অন্তর্নিহিত কারণ। টেনিদার সময়ের সে কুট্টিমামাও নেই, সে নস্য কোম্পানিও নেই, কিন্তু সে ভীমনাগ বা সে দ্বারিক এখনো আমাদের মোহিত করে থাকে আজও পয়লা বৈশাখের দিনে। সেই সাথে বাঞ্ছারাম বা বলরাম মল্লিক, কেউই কম জান না। এই সাবেকিয়ানার সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধনই তো এখনো ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা জাগায়। পান্তা ইলিশের গল্প এপারে এসে এখনো তেমন বাজার গরম করতে পেরেছে বলে শুনিনি, তবে অদূর ভবিষ্যতে তাও হবে বলেই বিশ্বাস। 

বাঙালী অবশ্য বিশ্বনাগরিক, এবং বিশ্বায়নের যুগে নববর্ষ হিসাবে পয়লা জানুয়ারি ক্রমশ জায়গা দখল করছে। নববর্ষ উদযাপনের চেয়ে নিউ ইয়ারে রেজোলিউশন নিতেই আজকাল আমরা আগ্রহী বেশি। পহেলা বৈশাখ ছাড়া অন্য খুব কম দিনই আমরা বঙ্গাব্দ অনুদারে জানি, আনন্দঘন আবেশের মাঝে হয়তো একটু বিষাদের ছোঁয়া। যুগ যুগ ধরে মানুষের একই আঙ্গিকে উৎসব উদযাপন করবে এমন আশা রাখাও যুক্তিযুক্ত নয়। সেই কারণে কিছু পরিবর্তন আসবেই জীবনযাত্রায়। সেই সাথে হয়তো কিছু হারাবে, কিছু মিলবে, কিন্তু নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে না। তাই বিশ্বাস রাখি বিবিধের মাঝে মিলনেরই। সেই মিলনের মাঝেই আমরা আমাদের পরিচয়, নিজস্বতা নিয়ে স্বতন্ত্র অথচ কূপমণ্ডূক না হয়েই বাঁঁচব। 

Tuesday, April 7, 2015

বর্ষার খোঁজ

এমনটাই চেয়েছিলাম অনেকদিন ধরে,
বৃষ্টি হবে টাপুরটুপুর আটপৌরে ছাঁটে,
দুপুরবেলা হারিয়ে যাক শিশিরস্নাত ভোরে,
স্মৃতির ছবি আটকে থাকা বিষণ্ণ মলাটে।

নেড়েচেড়ে দেখব ফের, নতুন সময়ের
নতুন কোন বর্ষা এলে, নতুন কোন মেঘ,
নতুন, সেটা বুঝতেই স্মৃতির এলবামের
খোঁজ লাগাব, জাগাতে সে ঘুমন্ত আবেগ।

অঝোরধারার অপেক্ষায় প্রতীক্ষার দিন
ধৈর্য নিয়ে টানাটানি, সময়, ঝরে যায়
শুষ্ক আর নগ্ন সাজ, যদিও সমীচিন,
উপেক্ষাই কৌশল স্থৈর্য পরীক্ষায়।


Wednesday, April 1, 2015

প্রেমাভিনয়

এখন সময় ঝলসে যাওয়ার
ভাবার সময় না
জোর করে সে আর যাই হোক
প্রেমখানা হয় না।

খোঁয়াড় ভরা পঙ্গপালে
সবাই খোঁজে প্রেম
তুইও দেখি যোগ দিয়েছিস
ভেবে নতুন গেম।

মন ভোলানোর কায়দা কানুন
ভালোই শিখেছিস
সময় পেলেই প্রেম-ছোপানো
পত্র লিখে দিস।

ভোলার ভবী অনেক পাবি
ভুলবি নিজেও ঠিক
ভুলবি এসব মোহের খেলা
শুধুই দানবিক।

এরপরে শেষ, ব্যর্থ হলে
মানবতার দোষ?
খেলার ফলে পিছিয়ে গেলেই
তীব্র অসন্তোষ।

আসলে তোর শরীর দাবী
মোটেও হৃদয় না
জোর করে সে আর যাই হোক
প্রেমখানা হয় না।

Thursday, March 26, 2015

র‍্যান্ডমনেস এবং দৈবতা

সম্ভাবনা তত্ত্ব একটি জটিল গাণিতিক বিষয় যা আধুনিক যুগে, এবং অতীতেও, গবেষণার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গণিতমহলে পরিগনিত। গণিতজ্ঞ সমাজে ফিল্ডস পুরষ্কারে সমাদৃত হওয়া বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় রাখে। এমনকি অনেকে এই পুরষ্কারকে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত পুরষ্কার নোবেলের সাথে তুলনা করেন, এবং সেই তুলনায় ফিল্ডসকে উপরের শ্রেণীতে রাখেন অনেকে, এবং তা এই কারণে যে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে হলে গণিতজ্ঞদের চল্লিশ বৎসরের কম বয়সী হতে হয়। সেই ফিল্ডস পুরষ্কারের ক্ষেত্রে পূর্বে বহুদিন ব্রাত্য থাকলেও বর্তমানে সম্ভাবনা তত্ত্ব সমাদৃত হয়েছে, অর্থাৎ গণিতজ্ঞদের মহলে জাতে উঠেছে। নিন্দুকেরা অবশ্য অনেকে একে গণিতের স্বখাতসলিলে ডুবে মরা হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু এরকম ঘটনা একটি বলিষ্ঠ বৈপ্লবিক পদক্ষেপের সাথে সাথে অনভিপ্রেত উপজাত হিসাবে  গণ্য করাই যেতে পারে ।

 কিন্তু এই উপক্রমণিকা ঠিক আমার লেখার মূল বিষয়টা তুলে ধরে না, এ কেবল সম্ভাবনা তত্ত্বের গুরুত্ববর্ধনকারী কিছু বক্তব্য। আর আমার বক্তব্য বা জিজ্ঞাসা সম্ভাবনাতত্ত্বের ভিত্তির কিছু বিষয় নিয়ে। সম্ভাবনাতত্ত্বের উপাখ্যানকালে একটি বহুলচর্চিত উদাহরণ হল মুদ্রা শিরসঁচালন(coin toss) এবং পাশা চালাচালি। এই দুই ক্ষেত্রে এবং এছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনার সমস্ত গণনা এই অনুমানের উপর নির্ভরশীল, যে সমস্ত সম্ভাবনা সমানভাবে সম্ভবপর(equally likely)।  অবশ্যই এ ক্ষেত্রে আমাদের যদি পূর্বধারণা অনুসারে বস্তুগুলি নিটাল(unbiased) হয়, অর্থাৎ পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, তবেই এই সমভাবের সম্ভাবনা কার্যকারী হবে। এই ক্ষেত্রে বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপিত করা গেলেও আরো বিভিন্ন জটিল পরিসরে তা সবসময় সম্ভব নয়। কিন্তু সমস্ত ক্ষেত্রেই যে বিষয় আমাদের গণনার মূল ভিত্তি তা হল  র‍্যান্ডমনেস  বা যাকে আমরা বাংলায় বলছি দৈবতা।

আমাদের পৃথিবীতে অবশ্য সত্যিকারের দৈবতাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। তাই হয়তো আমরা এর নাম দিয়েছি দৈবতা।  পৃথিবী নির্ণেয়, সেখানে দৈবতাকে প্রত্যক্ষ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, এবং প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আমরা যা পাব তা হল কৃত্রিম-দৈবতা। দৈবতা অনেক অংশেই আমাদের কল্পনাপ্রসূত, কিন্তু তাই বলেই কি উপেক্ষনীয়?  ধরা যাক একটি মুদ্রা  শিরসঁচালন করা হল, এবার তার ফল কি হবে তা আমাদের অজানা।  কিন্তু আমরা যদি এই শিরসঁচালনের পদ্ধতি, হাওয়ার গতিবেগ ইত্যাদি সম্বন্ধে নিশ্চিত ধারণা করতে পারি তবে হয়তো এই ফল নির্ণয় করা সম্ভব একটি অপেক্ষকের সাহায্যে। কিন্তু সেসব আমাদের অজানা। অনেকে বলবেন এই কারণে যে দৈবতা কৃত্রিম(pseudo-random), কিন্তু আমি বলব দৈবতা আছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই যদি ঘটনা সম্বন্ধে আমাদের কাছে অতিরিক্ত তথ্য থাকে তাহলে যা হয় তা কেবল নমুনাক্ষেত্রের সংকোচন। একে আমি বলছি শর্তাধীন সম্ভাবনার(conditional probability )  একটি উদাহরণ, যেখানে সমস্ত তথ্য থাকলে সম্ভাবনা ঘনত্ব কেবল  একটি বিন্দুতে ঘনীভূত হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু সে তথ্য আমাদের অজানা, তাই আমরা আমাদের সমগ্র গণনা করি শর্তহীন ভাবে (unconditional probability )। দৈবতার আর এক উদাহরণ ব্যবহৃত হয় প্রায়শই, যা হল ব্রাউনীয় গতি(Brownian motion)। তরল পদার্থের মধ্যে ভাসমান ধূলিকণা অথবা পরাগের বিচলনকে আমরা ব্রাউনীয় গতি মনে করি। সেখানেও যে কোন কল্পনা বা অনুমানের অস্তিত্ব নেই এমন নয়, কিন্তু তার গতিপথকে সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করার ক্ষমতা আমাদের নেই বলেই আমরা কাজ করি পূর্ণ সম্ভাবনা ক্ষেত্রেই।

এই তো গেল সম্ভাবনাতত্ত্ব বিষয়ক পড়াশোনা করার পিছনে আমার যুক্তি, কিন্তু আর একটি প্রশ্ন মনে থেকেই গেল যা হল র‍্যান্ডমনেসের দৈবতা নামকরণের যৌক্তিক ভিত্তি ও সার্থকতা। দৈব শুনে অনেকে মনে করতে পারেন যে এর মধ্যে দেবতা সম্বন্ধীয় কোন অনুভূতি আছে কিনা। এই প্রসঙ্গে উত্থাপন করি  'দৈবাৎ' শব্দটি, যা বহুল ব্যবহৃত হয় আকস্মিক ঘটনাকে বোঝাতে। 'দৈব' শব্দটি ব্যবহৃত হয় বুদ্ধির অগম্য অর্থেও, যা কিনা সোজা ভাষায় অনির্ণেয় । কিছু ব্যক্তি এই যুক্তি দেখাতে পারেন যে কেন না আমরা 'অনির্ণেয়' শব্দটি ব্যবহার করি দৈবতার বদলে? কিন্তু একটি বিজ্ঞানের বিষয়ের ভিত্তিসূত্র একটি নঞর্থক শব্দদ্বারা নামাঙ্কৃত হওয়া বড়ই দৃষ্টিকটু। তবে 'দৈব' শব্দের সাধারণ ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে কেউ যদি পরিবর্তে  কোন শব্দ করতে পারেন তাহলে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিতভাবে আগ্রহী থাকব। আর তাছাড়া সম্ভাবনার কথা তো কেবল জাগতিক নয়, কারণ জগৎ হল নির্ণেয়, আর আমরা দেখছি মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কারণ আমাদের কারবার অনির্ণেয় নিয়ে। সেক্ষেত্রে দৈবতা নিঃসন্দেহে আমাদের একটি বহির্জাগতিক দৃষ্টিকোণের প্রতি প্রথমেই কিঞ্চিৎ এগিয়ে দেয় না কি?

Tuesday, March 17, 2015

মনোরথ

এক সে আমার মিষ্টভাষী যৌবনে 
বইয়েছিল বাতাস কিছু মূর্ছনা । 
সন্ধ্যা হত প্রাত্যহিকী বর্ষণে,  
জলদ ছিল যদিও কিছু আনমনা ।। 

পাল তুলে পার নৌকা কিছু দূরপথে,  
পালকী আবার তেপান্তরে সঙ্গিহীন । 
প্রেম তবুও সারথি সেই মন-রথের,  
আরশিনগর পড়শী খোঁজে রাত্রিদিন ।। 

ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁ

জাতীয়তাবাদের ভিতকে মজবুত করার জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, এবং এতোটাই যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যে এই খেলাগুলো না থাকলেই বোধহয় ভালো হত । পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর কেউ বলছেন বাঙালী হিসাবে আমাদের সমর্থন করা উচিত বাংলাদেশকে, এবং সেই বক্তব্য রীতিমত খবর হচ্ছে কাঁটাতারের অন্য পারে । এছাড়াও কিছু কিছু বিনোদনমূলক পোস্ট বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, এবং নিছক বিনোদন হিসাবে তা আর থাকছে না । এই ভাষা বনাম নাগরিকত্বের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা খোলাচিঠি ছাড়ছেন এদিক ওদিক । 'মনের মানুষ' কে পথের ভিখারি করার জন্য 'অমর প্রেম' যে যথেষ্ট, তা আবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বুম্বাদা । আমার সমবেদনা রইলো তার প্রতি । 

তবে এতো কিছু সত্ত্বেও উপেক্ষাকেই বেছে নিয়েছি এর দাওয়াই হিসাবে । মাত্রা অনুযায়ী খিল্লিও নেহাৎ মন্দ না । তা সে যতই খেলার মাঠ পরিবর্তন নিয়ে জলঘোলা করুন বা বাংলাদেশী প্রশিক্ষকদের পিছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়ার গালগল্প ছাড়ুন । ভারতের চাটুকার শেখ হাসিনার অন্তর্ঘাত করার নির্দেশ এবং নবীন মুক্তিযোদ্ধা মাশরাফির তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা, বা চাপ কাটানোর জন্য যৌনতায় ভাসিয়ে দেওয়ার নিদান, যা নাকি ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা দিয়েছেন বর্তমান ক্রিকেটারদের, সব কিছুই নিয়েছি খেলার ছলে, কারণ আসলে তো এসব কেবল একটা খেলা, তেমন গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু নয় । এছাড়া এটাও আশা করেছিলাম যে নিশ্চয় এমন অনেক মানুষ সে দেশেও পাব, যারা 'মওকা মওকা' ইত্যাদি ভিডিওকে নেবেন কেবল একটি পানীয়ের কোম্পানির বদামি হিসাবে, সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের মানসিকতার উদাহরণ হিসাবে না দেগে দিয়ে । 

আমার এক সিনিয়ার খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল গে-লর্ড নামক এক দোকানে । নাহ এই নামের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞান নেই , তবে খাবারের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আছে, এবং সেই কারণেই যাওয়া ।  দিব্যি তরিবৎ করে চলছিল খাওয়া দাওয়া, এই সেই সঙ্গে গাল-গল্প, সেই সময় মওকা বুঝে ঢুকে গেলেন সোহেল ভাই । পুরনো ঢাকার বাসিন্দা সোহেল ভাই কাজ করেন এখানেই । বাংলাভাষায় কথা শুনে চলে এলেন গন্ধে গন্ধে । আমাদের সবার পাতের চিংড়ীর দিকে তাকিয়ে তার বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হল না আমরা কোন পারের মানুষ । তার কথাও খেলা খেলা দিয়ে শুরু, খেলা খেলা দিয়ে শেষ, কিন্তু সবই মজার ছলে । বললেন তিনি 'মওকা মওকা, ঠিক আছে, এখন কিছু বলছি না, মাঠে দেখিয়ে দেব' । আমরাও মেতে উঠলাম খানিকক্ষণ খেলা সম্পর্কিত আলোচনায় । মুশফিক, শাকিব, সৌম্য, মাশরাফি এদের নিয়ে, সমালোচনা হল তামিম ইকবালের । খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকবার অঙ্গীকার হল । এরপর আমাদের একজন তার ক্ষোভ ব্যক্ত করলো মেনুতে গুলাব জামুনের অনুপস্থিতি সম্বন্ধে । তিনি বললেন দেখি কি করা যায় । বাংলাদেশীদের আতিথেয়তার কথা শুনেছি, তার প্রমাণ পেলাম যখন নিজের তরফ থেকে আমাদের জন্য এক বাটী গুলাব জামুন হাতে তিনি উপস্থিত হলেন । আমারাও আকণ্ঠ ধন্যবাদ জানালাম তাঁকে । এবং আমার আস্থা কিছুটা হলেও ফিরল শুভবুদ্ধির প্রতি । তার ব্যপ্তি কতটুকু সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া গেল । 

শেষে শুধু মেজাজ বিগড়ে দিয়ে গেলেন একজন তামিল কর্মী, যিনি তার অপরূপ জ্ঞানভাণ্ডারের দরুন বাংলাভাষায় কথাবার্তা শুনেই আমাদের বাংলাদেশী জ্ঞান করলেন । কূপমণ্ডূকের দল তো আসলে দুই তরফেই আছে । 


Friday, March 13, 2015

পানীয়ঃ প্রয়োজনীয়তা বনাম বিলাসিতা

বাঙালী আঁতেল-মাত্র যে পানীয়ের সাথে নিজেকে একাত্ম করতে ভালবাসে, বা বলা যায় যার দরুন তার আঁতলামির সূচক লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় তা হল চা । সেই ভেলায় আমিও যে কখনো গা ভাসাইনি এমনও নয়, চিরাচরিত বাঙালী মানসিকতা অনুযায়ী আঁতেল হওয়ার শখ কার না জন্মায় । গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসেছিলাম আমিও কয়দিনের জন্য, কয়দিন বললে ভুল হবে, রীতিমত অনেকদিন, অন্তত মানবজীবনের স্থিতিকালের কথা বিচার করলে তাকে কোনরূপেই নগণ্য বলা চলে না । স্কুল জীবনে চা খেতাম না একদমই অবশ্য, এখনো তেমন খাই না । মাঝখানে কেবল পাঁচ বছর খেয়েছিলাম কলেজে পড়ার সময়, অনেকটা দাম্পত্যের মধ্যভাগে অন্য জিভেগজার মতই বলা চলে । যৌবনযাপনের স্রোতে ভেসে এরকম অল্প কিছু ভুলচুক করেনি এমন বাঙালী মেলা ভার, তবে তুল্যমূল্যের বিচারে আমি ক্ষুদ্র পাপী হিসেবেই পরিগনিত হব বলে বোধ হয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের চোখে । এই আধুনিক যুগের সান্ধ্যবাসর উনি চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করলে পরিস্থিতি কি হত সে কথা মানসচক্ষে দেখতে পাওয়া খুব একটা দুষ্কর নয় । 

বনহুগলী চত্বরের প্রায় সমস্ত চায়ের দোকানেই খেয়েছি, বেশিভাগ পরস্মৈপদী । অভিষেক বলে একজন বন্ধু ছিল, তার মাঝে মাঝে চায়ের তেষ্টা পেত । আমি ছিলাম তার চায়ের গেলাসের ইয়ার । সেই সুযোগে বিনামূল্যে চা খেয়ে আসতাম । খুব একটা ভাল লাগতো যে এমন নয়, তাও খেতাম । যেটা তৃপ্তি করে খেতাম সেটা হল তাপসদার দোকানের স্পেশাল চা, সঙ্গে গজা । ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছি তাপসদার দোকানের বেঞ্চিতে । চা নিয়ে বা না নিয়ে, তাপসদা এসে পাখা বন্ধ করে দিয়েছে, আবার হয়তো কোন মহানুভব এসে উপস্থিত হয়েছে হস্টেল থেকে, এক কাপ চা নিয়েছে, এবং আমরা আবার খানিকক্ষণ মলয়বাতাসে ভেসে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। 

চিরায়ত বাঙালী সমাজব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত এই পানীয়ের মূল্যায়ন করার মত ক্ষমতা আমি রাখিনা, নিজেকে তার যোগ্য বলে মনেও করিনা । নব্য সংস্কৃতিতে বিকশিত হওয়া বিশ্বমানবের কাছে হয়তো এই অনুরাগ স্বাভাবিক বলে নাও হতে পারে, কিন্তু দ্বিপ্রহরে স্টারবাক্সের কফির স্রোতের সাথে তুফানতোলা সেই সব যুক্তি অনুধাবন করার মত ক্ষমতা এখনো আমি অর্জন করতে পারিনি বলেই মূল্যায়ন হতে আমি শতহস্ত দূরে, সন্ধ্যাবসরের পানীয় সমভিব্যহারে পরিবেশিত বক্তব্যের কথা তো বাদই দিলাম । নিজের এই অক্ষমতা আমি নতমস্তকে স্বীকার করছি ।  

যুগোপযোগী রসাস্বাদন ব্যতীত বুদ্ধিজীবী পরিমণ্ডলে সুনাম অর্জন করার পথ খুব একটা সুগম নয়, পদে পদে তা বিলক্ষণ টের পেয়ে থাকি, কিন্তু ব্যঘ্রচর্মে আচ্ছাদিত শৃগাল হয়ে যে বেশীদিন সে মহলে টিকতে পারব সে আশা দেখিনা । এবং শ্রীনাথ বহুরূপীর মত লেজ কেটে বিদায় নিতেও মন চায়না । তাই মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয় বলে মনে করে থাকলেও, রণে ভঙ্গ দিলাম, হয়তো যথেষ্ট সংগ্রামী ইতিহাসের শক্তি নেই সাথে বলে । 

সাহচর্য দীর্ঘস্থায়ী না হলেও উপাদেয় ছিল নিঃসন্দেহে, তবে আধুনিক কাফের স্বাচ্ছন্দ্য সেই ভাঙ্গাচোরা কাঠের বেঞ্চিতে খুঁজলে যে তৃপ্তি মিলবে এমন কথা বলতে পারিনা । সত্যি তো, সারা দিনরাত আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে ভাবনা চিন্তার মাধ্যমে দেশোদ্ধারের পর তো এই দেহের প্রয়োজন কিছু নরম গালিচার । এই সরল সত্যটুকু যদি অনুধাবন না করে উঠতে পারেন পাড়ার বিশুদা, তবে কেমন করে তিনি পাল্লা দেবেন স্টারবাক্সের সাথে? সংগ্রামী শ্রেণীর সম্বন্ধে এটুকু সচেতনতা না হলে আর কিসের সে প্রলেতারিয়ত ।  


আমি সামান্য মানুষ, খুব বেশি হলে একটা এলাচ, দু ফোঁটা আদার রস, বিলাসিতা সামান্যই । এই হল মধ্যপন্থা, যদিও তাও সইল না কপালে বেশীদিন । ধরি মাছ না ছুঁই পানি কি আর বেশীদিন চলে, সেই প্রিয়তম মৎস্যের সাথে বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো, অবগাহনভীতি থেকে । হারিয়ে যাব জানি, যেমন গিয়েছে যুগ যুগ ধরে মানুষ, সময়ের সাথে সাথে আত্মপরিচয়কে যথেষ্ট পরিমানে পরিবর্তিত করতে পারেনা বলে বিবর্তনপ্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে । বিলাসিতাই তো ক্রমে একদিন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে, সেই সহজ সত্য যুগ যুগ ধরে অসংখ্য উদাহরণ দেখেও অনুধাবন না করতে পারার যা অক্ষমতা তো কিছু কম অপরাধ নয় । 

Wednesday, March 11, 2015

পাশের জল

আমার কাছে দু হাত দুরেই আমার পাশের জল
অল্প পাপের পরে তাতেই চুবিয়ে ফেলি হাত 
পাপ ভেসে যায় অন্য পারে সেই ভেবে উচ্ছল,  
অন্ধকারটা মন থেকে আজ নাই হল উৎখাত।  

গাত্রদাহ জুড়িয়ে নিতে ডুব দিয়েছি জলে 
আপাততেই বেদম খুশি, ভবিষ্যতকে গুলি 
মারছি আজও, একেই অবিমৃষ্যকারী বলে, 
জেনে বুঝেই তবুও তো সেই মায়ার জালে ভুলি।

জলকে চলে ফের ছুঁয়ে যাই অবাঞ্ছিত বালি
অভিপ্রেত পথ না পেলে কি আর চলে করা
আবার নাহয় ঈপ্সিতকে খুঁজতে যাব কালই
আপাতত এখন চলুক স্বপ্নপ্রাসাদ গড়া ।



Thursday, February 26, 2015

মুক্তমনের বিদায়

আজও তবু রক্ত চাই
দিয়েছি তো বহু যুগ ধরে
অজস্র শতাব্দী জুড়ে সারা বিশ্বে এখানে ওখানে
অবিশ্বাসী মুছে গেছে
একে একে পৃথিবীর বুকে
অবিশ্বাসের পাড়ি তবু চলে স্রোতের উজানে ।

রক্তবীজের ঝাড়
রক্ত দেখে ভয় পেলে চলে ?
কলমে ভরব তাই, লিখে যাব, দ্বিগুণ প্রত্যয়
রক্ত দেব ততদিন
যতদিন শ্বাসরুদ্ধ নয়
মুক্তমনের ক্ষেত, রক্তে আরো উর্বরাই হয় ।


কবিতার সাথে আমি কখনো কোন  কথা লিখিনা । আজ লিখছি কারণ কিছু মানুষকে চোখে আঙ্গুল না দিয়ে বোঝানো যায় না, দিলেও কতটুকু যায় সে সন্দেহ থেকেই যায় । অভিজিৎ রায়ের লেখা যে অনেক পড়েছি এমন নয় । থেকে থেকে যা চোখে পড়েছে, তিতুমীর কে নিয়ে লেখা, হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার নিয়ে লেখা ছাড়াও প্রেমের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ অথবা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কে নিয়ে লেখাও । যে শ্রেণীর মানুষের অভাব আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি, কোন রকম বাছবিচার না করে সত্যকে বলিষ্ঠভাবে পরিবেশন করা ।

বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদের প্রসার এবং প্রসার সম্বন্ধে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিলাম সম্পূর্ণ অজ্ঞ । তসলিমার জীবনকে  দুর্বিষহ করে তোলার যে প্রয়াস বাংলাদেশের মৌলবাদীরা করেছিল, সে কথা জেনেছি অনেক বড় হয়ে ।  হুমায়ূন আজাদের উপর হামলা ইত্যাদির সময়ও তেমন কিছু জানতে পারিনি কোনদিন । প্রথম ভাসা ভাসা আভাস পাই শাহবাগ আন্দোলনের সময় । থাবা বাবার কথা জানতে পারলেও তার লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না সেই অর্থে । আসিফ মহিউদ্দীনের লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি, কিন্তু তাও তাঁর উপর হামলার পরেই । অভিজিৎ রায় আমার দেখা প্রথম বিশ্বাসের বলি, যিনি চোখের সামনে এই ছিলেন এই নেই, শুধুমাত্র তাঁর অবিশ্বাসের কারণে । যুক্তির বিরুদ্ধে এই একটিই তো পন্থা অবলম্বন করে এসেছেন  যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীর নানা মতের নানা ধর্মব্যবসায়ীরা ।

এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশ ভারতকে অনেকে উদারপন্থী বলে থাকেন, কিন্তু কিছুদিন পূর্বের ইতিহাস ঘাঁটলেই তো আমরা দেখতে পাব নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যা । আমরা দেখতে পাব কি ভাবে ভারতীয় যুক্তিবাদী সংস্থার প্রধান সনল এডামারকুকে, কিছু বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার কারণে, নিজের দেশ ছেড়ে ফিনল্যান্ডে কাটাতে হচ্ছে, ধর্ম অবমাননার দায়ে । অতীত ইতিহাস এরকমই আর অজস্র ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে আছে, শুধু আমাদের দেশে নয়, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ।

এই হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি দাবী জানাচ্ছি ফাঁসীর, না এই মৌলবাদী হত্যাকারীদের নয় কেবলমাত্র; এই সমগ্র মৌলবাদের । এই পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে ফেলার দাবী জানাচ্ছি এই চিন্তার, এই মানুষের কণ্ঠরোধ করার ভাবনার, যেই মতবাদের উপর ভিত্তি করে কলমের মাধ্যমে প্রকাশিত সত্যের উপাসক মুক্তমনাদের হত্যার নিদান দেওয়া যায়, তার । এই দাবী কয়জন শাসক মেনে নেবে সারা বিশ্ব জুড়ে সে ব্যাপারে অবশ্য আমি যথেষ্ট সন্দিহান । কাজেই এই গুরুদায়িত্ব পালনের ভাঁড় বর্তায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ওপরেই । 


লড়াই কিন্তু এভাবে থেমে যায় না, যতই হত্যাকারীদের দল আশাবাদী হন না কেন । অভিজিতের প্রতিটি রক্তের কণা থেকে জন্ম নেবে আরো শত সহস্র সত্যবাদী, স্পষ্টবক্তা । সেই রক্ত দিয়েই লিখবে সত্যের কথা । মৃত্যু মানে থেমে যাওয়া নয়, এগিয়ে যাওয়া সত্যকে আরো দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে, কারণ সত্যই হবে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র, যাদের বসবাস মিথ্যার দ্বারা সৃষ্ট মায়ার প্রাসাদে ।
"আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ।"






Wednesday, February 25, 2015

ভালবাসার হালুইকর

হবে না আর এমনি করে পদ্য লেখা,  
ছন্দ দিয়ে,  
কোথায় যেন হারিয়ে গেল, তীব্রতাটা, 
এই তো ছিল,  
যখন ছিলাম মগ্ন, কথায়, সেই সময়ে ।  
এখন বুঝি দায়িত্ব ফের, আবার বোঝা 
চাপল মাথায়, নিপুণভাবে শব্দচয়ের । 
অথবা বা সময় এলো বোধ উদয়ের।  

কেমন করে বাঁধব কিছুই বুঝছি না যে,  
ভরসা খুঁজি 
লোকের মাঝে, যদিও তাদের মনস্তত্ব 
বেদম ঘোলা।   
মিলছে বৃথাই শান্তনা আজ, কেমন করে 
বুঝব কখন সঠিক মাপে, হয়েছে পাক 
ভালবাসার, এতটুকু কম বেশি নয়, 
উনুন থেকে কড়াইখানা তোলার সময়।