Tuesday, April 14, 2015

পয়লা বৈশাখ

অনলাইনের মারফতই হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, 'এপ্রিলের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি পহেলা বৈশাখ এলো কাছে'। তবে আনন্দে দুই হাত তুলে নাচার পরিস্থিতি, পরিবেশ বা মানসিকতা কোনটাই যেন খুঁজে পাচ্ছি না কিছুদিন যাবৎ। বেদনার্ত হওয়ার মতও তেমন কারণ খুঁজে পাই না অবশ্য। শুধুই যা পড়ে আছে তা হল অচেতনতা, এবং সেই সাথে সাথে নিঃস্পৃহতা। কিন্তু সত্যি কি তাই পারি, বারে বারে সে জানান দিয়ে ফিরে আসে আবার আমার কাছে, তার আনন্দের ডালি হাতে। প্রবাস যাপনে সবাই আঁকড়ে ধরে আরো বেশী করে নিজের সংস্কৃতিকে, কিন্তু সম্পূর্ণ নিজের একার প্রচেষ্টায় তা করতে হলে বোধ করি আর হয়ে ওঠে না। এ হল আরেক সংস্কৃতির আধিপত্য, ল্যাদ। পয়লা বৈশাখ তার সাথে অসম লড়াইয়ে নেমেছে ঠিক, অনেক রক্ত ঝরেছে, কিন্তু নিঃশেষ হয়নি। আমাদের দেশের বিবিধ সংস্কৃতির বিভিন্ন উৎসব, কিন্তু তার মাঝে আমার আপনার চেয়ে আপন সেই ধারার কথা যেন আমাদের বেশী মনে হয়।

বাঙালীর 'বারো মাসে তেরো পার্বণ', এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে মনে হয় তা একশো তিরিশ ছাড়িয়েছে। আনন্দ উপভোগ করতে কে না চায়। সারা পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন আনন্দানুষ্ঠানের ঘনঘটা বৎসরভর, পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের আদানপ্রদানের মাঝেই হয়তো সব মিলেমিশে একাকার হবে। আমাদের সকলের মনের অবস্থা সেই 'থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে/  কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে ' । সেই যুগান্তরের শেষে কি থাকবে কি থাকবে তা আন্দাজ করা বৃথা, কিন্তু উৎসবপ্রিয় বাঙালী তার এই চরিত্র যে হারাবে না এমন আশা করা কিছুমাত্র বাতুলতা বলে মনে হয় না।  

পয়লা বৈশাখের যে স্মৃতি অন্তরে খচিত আছে তা হল উদ্দীপনার। চৈত্র সংক্রান্তির ছাতুর থেকে উত্তরণ হালখাতার সন্দেশের মাধ্যমে। সেই থেকে মনে মনে নির্ধারণ করে নিয়েছিলাম গণেশের নধরকান্তি দেহের অন্তর্নিহিত কারণ। টেনিদার সময়ের সে কুট্টিমামাও নেই, সে নস্য কোম্পানিও নেই, কিন্তু সে ভীমনাগ বা সে দ্বারিক এখনো আমাদের মোহিত করে থাকে আজও পয়লা বৈশাখের দিনে। সেই সাথে বাঞ্ছারাম বা বলরাম মল্লিক, কেউই কম জান না। এই সাবেকিয়ানার সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধনই তো এখনো ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা জাগায়। পান্তা ইলিশের গল্প এপারে এসে এখনো তেমন বাজার গরম করতে পেরেছে বলে শুনিনি, তবে অদূর ভবিষ্যতে তাও হবে বলেই বিশ্বাস। 

বাঙালী অবশ্য বিশ্বনাগরিক, এবং বিশ্বায়নের যুগে নববর্ষ হিসাবে পয়লা জানুয়ারি ক্রমশ জায়গা দখল করছে। নববর্ষ উদযাপনের চেয়ে নিউ ইয়ারে রেজোলিউশন নিতেই আজকাল আমরা আগ্রহী বেশি। পহেলা বৈশাখ ছাড়া অন্য খুব কম দিনই আমরা বঙ্গাব্দ অনুদারে জানি, আনন্দঘন আবেশের মাঝে হয়তো একটু বিষাদের ছোঁয়া। যুগ যুগ ধরে মানুষের একই আঙ্গিকে উৎসব উদযাপন করবে এমন আশা রাখাও যুক্তিযুক্ত নয়। সেই কারণে কিছু পরিবর্তন আসবেই জীবনযাত্রায়। সেই সাথে হয়তো কিছু হারাবে, কিছু মিলবে, কিন্তু নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে না। তাই বিশ্বাস রাখি বিবিধের মাঝে মিলনেরই। সেই মিলনের মাঝেই আমরা আমাদের পরিচয়, নিজস্বতা নিয়ে স্বতন্ত্র অথচ কূপমণ্ডূক না হয়েই বাঁঁচব। 

No comments:

Post a Comment