Thursday, February 26, 2015

মুক্তমনের বিদায়

আজও তবু রক্ত চাই
দিয়েছি তো বহু যুগ ধরে
অজস্র শতাব্দী জুড়ে সারা বিশ্বে এখানে ওখানে
অবিশ্বাসী মুছে গেছে
একে একে পৃথিবীর বুকে
অবিশ্বাসের পাড়ি তবু চলে স্রোতের উজানে ।

রক্তবীজের ঝাড়
রক্ত দেখে ভয় পেলে চলে ?
কলমে ভরব তাই, লিখে যাব, দ্বিগুণ প্রত্যয়
রক্ত দেব ততদিন
যতদিন শ্বাসরুদ্ধ নয়
মুক্তমনের ক্ষেত, রক্তে আরো উর্বরাই হয় ।


কবিতার সাথে আমি কখনো কোন  কথা লিখিনা । আজ লিখছি কারণ কিছু মানুষকে চোখে আঙ্গুল না দিয়ে বোঝানো যায় না, দিলেও কতটুকু যায় সে সন্দেহ থেকেই যায় । অভিজিৎ রায়ের লেখা যে অনেক পড়েছি এমন নয় । থেকে থেকে যা চোখে পড়েছে, তিতুমীর কে নিয়ে লেখা, হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার নিয়ে লেখা ছাড়াও প্রেমের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ অথবা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কে নিয়ে লেখাও । যে শ্রেণীর মানুষের অভাব আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি, কোন রকম বাছবিচার না করে সত্যকে বলিষ্ঠভাবে পরিবেশন করা ।

বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদের প্রসার এবং প্রসার সম্বন্ধে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিলাম সম্পূর্ণ অজ্ঞ । তসলিমার জীবনকে  দুর্বিষহ করে তোলার যে প্রয়াস বাংলাদেশের মৌলবাদীরা করেছিল, সে কথা জেনেছি অনেক বড় হয়ে ।  হুমায়ূন আজাদের উপর হামলা ইত্যাদির সময়ও তেমন কিছু জানতে পারিনি কোনদিন । প্রথম ভাসা ভাসা আভাস পাই শাহবাগ আন্দোলনের সময় । থাবা বাবার কথা জানতে পারলেও তার লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না সেই অর্থে । আসিফ মহিউদ্দীনের লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি, কিন্তু তাও তাঁর উপর হামলার পরেই । অভিজিৎ রায় আমার দেখা প্রথম বিশ্বাসের বলি, যিনি চোখের সামনে এই ছিলেন এই নেই, শুধুমাত্র তাঁর অবিশ্বাসের কারণে । যুক্তির বিরুদ্ধে এই একটিই তো পন্থা অবলম্বন করে এসেছেন  যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীর নানা মতের নানা ধর্মব্যবসায়ীরা ।

এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশ ভারতকে অনেকে উদারপন্থী বলে থাকেন, কিন্তু কিছুদিন পূর্বের ইতিহাস ঘাঁটলেই তো আমরা দেখতে পাব নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যা । আমরা দেখতে পাব কি ভাবে ভারতীয় যুক্তিবাদী সংস্থার প্রধান সনল এডামারকুকে, কিছু বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার কারণে, নিজের দেশ ছেড়ে ফিনল্যান্ডে কাটাতে হচ্ছে, ধর্ম অবমাননার দায়ে । অতীত ইতিহাস এরকমই আর অজস্র ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে আছে, শুধু আমাদের দেশে নয়, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ।

এই হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি দাবী জানাচ্ছি ফাঁসীর, না এই মৌলবাদী হত্যাকারীদের নয় কেবলমাত্র; এই সমগ্র মৌলবাদের । এই পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে ফেলার দাবী জানাচ্ছি এই চিন্তার, এই মানুষের কণ্ঠরোধ করার ভাবনার, যেই মতবাদের উপর ভিত্তি করে কলমের মাধ্যমে প্রকাশিত সত্যের উপাসক মুক্তমনাদের হত্যার নিদান দেওয়া যায়, তার । এই দাবী কয়জন শাসক মেনে নেবে সারা বিশ্ব জুড়ে সে ব্যাপারে অবশ্য আমি যথেষ্ট সন্দিহান । কাজেই এই গুরুদায়িত্ব পালনের ভাঁড় বর্তায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ওপরেই । 


লড়াই কিন্তু এভাবে থেমে যায় না, যতই হত্যাকারীদের দল আশাবাদী হন না কেন । অভিজিতের প্রতিটি রক্তের কণা থেকে জন্ম নেবে আরো শত সহস্র সত্যবাদী, স্পষ্টবক্তা । সেই রক্ত দিয়েই লিখবে সত্যের কথা । মৃত্যু মানে থেমে যাওয়া নয়, এগিয়ে যাওয়া সত্যকে আরো দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে, কারণ সত্যই হবে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র, যাদের বসবাস মিথ্যার দ্বারা সৃষ্ট মায়ার প্রাসাদে ।
"আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ।"






No comments:

Post a Comment