Tuesday, March 17, 2015

ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁ

জাতীয়তাবাদের ভিতকে মজবুত করার জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, এবং এতোটাই যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যে এই খেলাগুলো না থাকলেই বোধহয় ভালো হত । পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর কেউ বলছেন বাঙালী হিসাবে আমাদের সমর্থন করা উচিত বাংলাদেশকে, এবং সেই বক্তব্য রীতিমত খবর হচ্ছে কাঁটাতারের অন্য পারে । এছাড়াও কিছু কিছু বিনোদনমূলক পোস্ট বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, এবং নিছক বিনোদন হিসাবে তা আর থাকছে না । এই ভাষা বনাম নাগরিকত্বের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা খোলাচিঠি ছাড়ছেন এদিক ওদিক । 'মনের মানুষ' কে পথের ভিখারি করার জন্য 'অমর প্রেম' যে যথেষ্ট, তা আবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বুম্বাদা । আমার সমবেদনা রইলো তার প্রতি । 

তবে এতো কিছু সত্ত্বেও উপেক্ষাকেই বেছে নিয়েছি এর দাওয়াই হিসাবে । মাত্রা অনুযায়ী খিল্লিও নেহাৎ মন্দ না । তা সে যতই খেলার মাঠ পরিবর্তন নিয়ে জলঘোলা করুন বা বাংলাদেশী প্রশিক্ষকদের পিছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়ার গালগল্প ছাড়ুন । ভারতের চাটুকার শেখ হাসিনার অন্তর্ঘাত করার নির্দেশ এবং নবীন মুক্তিযোদ্ধা মাশরাফির তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা, বা চাপ কাটানোর জন্য যৌনতায় ভাসিয়ে দেওয়ার নিদান, যা নাকি ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা দিয়েছেন বর্তমান ক্রিকেটারদের, সব কিছুই নিয়েছি খেলার ছলে, কারণ আসলে তো এসব কেবল একটা খেলা, তেমন গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু নয় । এছাড়া এটাও আশা করেছিলাম যে নিশ্চয় এমন অনেক মানুষ সে দেশেও পাব, যারা 'মওকা মওকা' ইত্যাদি ভিডিওকে নেবেন কেবল একটি পানীয়ের কোম্পানির বদামি হিসাবে, সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের মানসিকতার উদাহরণ হিসাবে না দেগে দিয়ে । 

আমার এক সিনিয়ার খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল গে-লর্ড নামক এক দোকানে । নাহ এই নামের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞান নেই , তবে খাবারের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আছে, এবং সেই কারণেই যাওয়া ।  দিব্যি তরিবৎ করে চলছিল খাওয়া দাওয়া, এই সেই সঙ্গে গাল-গল্প, সেই সময় মওকা বুঝে ঢুকে গেলেন সোহেল ভাই । পুরনো ঢাকার বাসিন্দা সোহেল ভাই কাজ করেন এখানেই । বাংলাভাষায় কথা শুনে চলে এলেন গন্ধে গন্ধে । আমাদের সবার পাতের চিংড়ীর দিকে তাকিয়ে তার বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হল না আমরা কোন পারের মানুষ । তার কথাও খেলা খেলা দিয়ে শুরু, খেলা খেলা দিয়ে শেষ, কিন্তু সবই মজার ছলে । বললেন তিনি 'মওকা মওকা, ঠিক আছে, এখন কিছু বলছি না, মাঠে দেখিয়ে দেব' । আমরাও মেতে উঠলাম খানিকক্ষণ খেলা সম্পর্কিত আলোচনায় । মুশফিক, শাকিব, সৌম্য, মাশরাফি এদের নিয়ে, সমালোচনা হল তামিম ইকবালের । খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকবার অঙ্গীকার হল । এরপর আমাদের একজন তার ক্ষোভ ব্যক্ত করলো মেনুতে গুলাব জামুনের অনুপস্থিতি সম্বন্ধে । তিনি বললেন দেখি কি করা যায় । বাংলাদেশীদের আতিথেয়তার কথা শুনেছি, তার প্রমাণ পেলাম যখন নিজের তরফ থেকে আমাদের জন্য এক বাটী গুলাব জামুন হাতে তিনি উপস্থিত হলেন । আমারাও আকণ্ঠ ধন্যবাদ জানালাম তাঁকে । এবং আমার আস্থা কিছুটা হলেও ফিরল শুভবুদ্ধির প্রতি । তার ব্যপ্তি কতটুকু সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া গেল । 

শেষে শুধু মেজাজ বিগড়ে দিয়ে গেলেন একজন তামিল কর্মী, যিনি তার অপরূপ জ্ঞানভাণ্ডারের দরুন বাংলাভাষায় কথাবার্তা শুনেই আমাদের বাংলাদেশী জ্ঞান করলেন । কূপমণ্ডূকের দল তো আসলে দুই তরফেই আছে । 


No comments:

Post a Comment