Friday, December 25, 2015

মেরি ক্রিসমাস

বড় ছোট না, এমনি আরেকটা দিন। স্মৃতিমেদুর হওয়ার সুযোগ যে এই দিন নিয়ে জীবনে এমনও নয়, বস্তুত এই দিনটা মাঝে বহুদিন তেমনভাবে খেয়ালই করা হয়নি শুভ'র। তবে আজ বুঝি সমাপ্তি ঘটবে এই একঘেয়েমির। সত্যি শুভ চায় আজকের দিনটা যেন হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড়, সময়কালের গণ্ডী অতিক্রম করে এই সন্ধ্যাতেই ডুবে থাকুক সে ও অন্তরা। ছোট ছোট ধাপে শুরু হয়ে আজ পালা একটা বড় পদক্ষেপের। যীশুবাবা পার করেগা বলে মারের সাগর পারি দিয়েই ফেলল শুভ।

মেট্রো থেকে নেমে এশিয়াটিক সোসাইটি পেরিয়ে যেতে যেতে যেন এক অচেনা জায়গায় পা ফেলবার উপক্রম। ক্রিসমাস কার্নিভালে তার এই প্রথম আসা, অবশ্য উপলক্ষ অন্য। ক্রিশ্চান স্কুলে পড়াশোনা করেছে ১২ ক্লাস অবধি, তবে বারতি কোন উৎসাহ নেই এই অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে। আর বাজারের দ্বারা চালিত হওয়া বা আনন্দজোয়ারে ভেসে যাওয়া, কোন কিছুতেই তেমন রুচি নেই তেমন। সে ঘরকুনো বাঙ্গালী, কালী থেকে কার্নিভাল সব কিছুকেই দূর থেকে নিরীক্ষণ করাকেই শ্রেয় বলে মনে করে এসেছে এতকালের একাকীত্বের জীবনে। তাই ঈষৎ উত্তেজনা এবং অনুকম্পার মাঝেই হেঁটে চলেছে ম্যাগ্নোলিয়া ছাড়িয়ে অজস্র ভীরের মাঝে প্রিয় দুটি চোখ খুঁজে নিতে। খুব ছোট বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে চার্চে যাওয়ার সঙ্গে অবশ্য প্রচুর তফাৎ, তখন প্রতিটা পদক্ষেপেই ছিল প্রত্যয়, নিবিড় আশ্রয়ের মধ্যে থাকার কারণেই।

প্রায় তিনমাস হতে চলল আলাপ নেহাতই কাকতালীয় ভাবে ফেসবুকের একটি সাহিত্যের গ্রুপে আনন্দমেলার আলাপচারিতায়। তারপর অতীতের সরণী বেয়ে কখনো কাকাবাবু, কখনো মিতিনমাসীর হাত ধরে সমুদ্রসৈকতে শিহরিত  বা পাহাড়চূড়ায় আতঙ্কিত হওয়া। সাহিত্যরস গ্রহণ হিসাবে হয়তো তেমন বুদ্ধিজীবী শ্রেণীতে পড়ার দাবী করতে পারে না তারা, কিন্তু হৃদয়রসের দিক দিয়ে সেই শূন্যতা ভরাট করে দিয়েছিল তাদের ঐকান্তিক আবেগ। সাহিত্য থেকে গান, সিনেমা, ছবি দেওয়া নেওয়া, কারণ ছাড়াই এরপর কেটে যেতে থাকতো সময়। নিজের অজান্তেই কত স্বপ্নজাল বুনে ফেলা, প্রশ্রয়হীন এমনও বলা চলে না।
চারিদিকে অজস্র টুপির মাঝে তিন চারবার ফিরে এলো শুভ, ক্রমেই অধৈর্য হয়ে পড়ছে সে। ক্যারম টুর্নামেন্টে পাড়ার নাম ডুবিয়ে সেই কল্যাণী থেকে হাজির হয়েছে আজ সে কত আশা নিয়ে, সত্যি বল ভুল করল শুভ। অনলাইন ফ্রেন্ডশিপ কেবল ওই অবাস্তবের দুনিয়াতেই রাখা উচিৎ সীমাবদ্ধ, কত পোড়খাওয়া দাদা, বন্ধুদের মুখে শুনে এসেছে চিরকাল। কিন্তু সে তো অন্তরাকে অন্যরকম ভেবেছিল। হ্যাঁ খুব বেশী কিছু নিজেদের বিষয়ে কেউই জানেনা তারা। এবং অজানাই রাখতে চেয়েছিল শুধু এই দিনটার জন্য দুজনেই। ফোন নাম্বার না, কোন কিছুই না, আজ মনে হচ্ছে সব ভুল। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ, তবু আজ ব্লক বাটনটা টিপতে হাত কাঁপল না শুভ। ফিরে চলল তিন মাসের স্মৃতিটা ভিড়ের মাঝে ফেলে রেখে দিয়ে। তখন অন্তরা ক্রিসমাসের কেকের অর্ডার ঘরে ঘরে পৌঁছতে ব্যস্ত, মা'কে হাসপাতালে ভর্তি করে এসে। টাকাগুলো জোগাড় করে জমা দিতে হবে শীঘ্র, ডাক্তারের কড়া নির্দেশ অপরেশন আজকেই হওয়া চাই।

যেন ব্যঙ্গ করেই বেজে চলেছে পিছনে "উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস, অ্যান্ড আ হ্যাপি নিউ ইয়ার"।

No comments:

Post a Comment