Thursday, September 11, 2014

প্রথম কথা

চিরকাল ছন্দ সহযোগে লেখালেখি করে এসেছি। কিন্তু প্রায়ই ইচ্ছে হয় নিজের কথা একটু অন্য ভাবে বলতে, মানে একদম আগাপাছতলা না ভেবে সোজা গড়গড় করে উগড়ে দিতে। এটা সেই প্রথম প্রচেষ্টা । বলতে হয় আমার প্রথম কথা । শুনেছি আমি ৩ মাস বয়সে প্রথম কথা বলি। আমার মুখনির্গত সেই প্রথম বাণী ছিল একটা খুবই যুগ-অনুপযোগী শব্দ 'কাপ' । অবশ্য শব্দটা ছোট হলেও নেহাত এলেবেলে নয়। অনেক মধ্যবয়স্ক লোককেও দেখেছি কাপ বলতে গিয়ে নাকানি চোবানি খেতে। সত্যি বলতে কি আমার একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ আছে এই কাপ বলা নিয়ে, যা হয়তো থেকে থেকেই প্রচ্ছন্নতার গণ্ডি অতিক্রম করে চলে যায় নির্লজ্জতার মধ্যগগনে। সে যাই হউক কনে বউ'এর মত লাজে রাঙা হওয়া আমার পক্ষে কখনই সহজ কম্ম নয়। আর আমি সেই প্রচেষ্টাও করছি না। তাই বলে এমন ভাববেন না সে আমি কেবল সহজ কর্ম করে বেড়াই। আমি সহজ কঠিন কোন কম্মই করি না। অনেক বিদগ্ধজন বলেছেন নিষ্কাম কর্ম করার কথা, ছোটবেলায় শুনেছিলাম তো; তখন ঠিক বুঝতে পারিনি। তাই নিজের মত ভেবে নিয়ে আকাম করে বেড়াই। ওই গুঙ্গা বলে না কেঁদে উঠে গদগদ হয়ে কাপ বলে ওঠা তারই একটা অঙ্গবিশেষ ।

প্রথম কথা বলার জন্য লেখা, কিন্তু কিয়মাশ্চর্যম, শুধু প্রথম কথা তো বলছি না। আরো কত কি, হয়তো বা অবান্তর, কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দিয়েছি। আসলে স্পষ্ট করে তবে বলেই ফেলি, প্রথম কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই নিজের পরিচয়, নিজের ভাবনা, নিজের অস্তিত্ব, নিজের নিজস্বতা।(অবশ্য অনেকের কাছে হয়তো আগেই স্পষ্ট ছিল আমার এই বক্তব্য।) কাজেই শুধুমাত্র কাপে থেমে গেলে পরিচয়পুরাণ অসম্পূর্ণই থেকে যায়, তাহলে একথাও বলা হয়না যে জ্ঞানের পরিধি আর একটু বিস্তৃত হলে আমি হয়তো অন্য কোন শব্দবন্ধ প্রকাশে আরো বেশী সচেষ্ট হতাম। আর শুধু নিজেকেই বা বলা কেন, শুনেছি সেই সময় আমার চা-পিপাসু মা এক পেয়ালা চা হাতে এসেছিলেন আমার সকাশে এবং আমিও উৎসাহের আতিশয্যে আমার আমার বাক্যলহরীকে গোপন রাখতে পারিনি। ছোটরা পারে না, আমিও তো তখন ছোটই ছিলাম। এখন ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই, আমি কে আর সেই আমি নই, সবই আজ নতুন নতুন লাগে। ফিরে আসি নিজের কথায়, ফিরে আসি নিজের ভালবাসার কথায়, নিজের ভাষার কথায়, নিজের মাটির কথায়। মা এবং মানুষ কেও আমি ভালবাসি কিন্তু একই সাথে উচ্চারণ করতে চাই না, কারণ চাই না পাঠকের আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ, বা তার অভাব, সম্বন্ধে কোন ভ্রান্ত ধারণা হয়ে যাক। প্রতি বছর এমন এক দিন আসে যেদিন আপাতত নিকত ভবিষ্যতের কিছুদিনের জন্য আমার নাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। সেদিন যেন আমার মন হাহাকার করে ওঠে এই কথা বলে আমি তোমার কাছেই ফিরে আসব। এই মাটিতে, এই কনক্রিটের দেওয়ালে, এই ইটে, এই বালিতে পাথরে সবেতেই মিশে আছে আমার বাবা- আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকছে। আজ সেই দিন। আমি সেখানেই ফিরে আসব, সেই ডাককে উপেক্ষা করব এমন নরাধাম যেন আমি কখনও না হই। ওই গঙ্গার জলে মিশে আছে আমার ঈশ্বর বন্দনার প্রথম পাঠ, আমার ভারতের দিবাকর যে আমার স্পর্শে একদিন পুনরায় জেগে উঠবে। কত কথা ভেবেছিলাম বিমানবন্দর আসার পথে, এখন যেন সব কিছু হারিয়ে গেছে, রয়ে গেছে শুধু হতাসা শুধু অন্ধকার। কিন্তু তাকে পুনরায় খুঁজে পেতে ফিরে সে আমাকে আসতেই হবে।

No comments:

Post a Comment