Thursday, March 26, 2015

র‍্যান্ডমনেস এবং দৈবতা

সম্ভাবনা তত্ত্ব একটি জটিল গাণিতিক বিষয় যা আধুনিক যুগে, এবং অতীতেও, গবেষণার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গণিতমহলে পরিগনিত। গণিতজ্ঞ সমাজে ফিল্ডস পুরষ্কারে সমাদৃত হওয়া বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় রাখে। এমনকি অনেকে এই পুরষ্কারকে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত পুরষ্কার নোবেলের সাথে তুলনা করেন, এবং সেই তুলনায় ফিল্ডসকে উপরের শ্রেণীতে রাখেন অনেকে, এবং তা এই কারণে যে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে হলে গণিতজ্ঞদের চল্লিশ বৎসরের কম বয়সী হতে হয়। সেই ফিল্ডস পুরষ্কারের ক্ষেত্রে পূর্বে বহুদিন ব্রাত্য থাকলেও বর্তমানে সম্ভাবনা তত্ত্ব সমাদৃত হয়েছে, অর্থাৎ গণিতজ্ঞদের মহলে জাতে উঠেছে। নিন্দুকেরা অবশ্য অনেকে একে গণিতের স্বখাতসলিলে ডুবে মরা হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু এরকম ঘটনা একটি বলিষ্ঠ বৈপ্লবিক পদক্ষেপের সাথে সাথে অনভিপ্রেত উপজাত হিসাবে  গণ্য করাই যেতে পারে ।

 কিন্তু এই উপক্রমণিকা ঠিক আমার লেখার মূল বিষয়টা তুলে ধরে না, এ কেবল সম্ভাবনা তত্ত্বের গুরুত্ববর্ধনকারী কিছু বক্তব্য। আর আমার বক্তব্য বা জিজ্ঞাসা সম্ভাবনাতত্ত্বের ভিত্তির কিছু বিষয় নিয়ে। সম্ভাবনাতত্ত্বের উপাখ্যানকালে একটি বহুলচর্চিত উদাহরণ হল মুদ্রা শিরসঁচালন(coin toss) এবং পাশা চালাচালি। এই দুই ক্ষেত্রে এবং এছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনার সমস্ত গণনা এই অনুমানের উপর নির্ভরশীল, যে সমস্ত সম্ভাবনা সমানভাবে সম্ভবপর(equally likely)।  অবশ্যই এ ক্ষেত্রে আমাদের যদি পূর্বধারণা অনুসারে বস্তুগুলি নিটাল(unbiased) হয়, অর্থাৎ পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, তবেই এই সমভাবের সম্ভাবনা কার্যকারী হবে। এই ক্ষেত্রে বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপিত করা গেলেও আরো বিভিন্ন জটিল পরিসরে তা সবসময় সম্ভব নয়। কিন্তু সমস্ত ক্ষেত্রেই যে বিষয় আমাদের গণনার মূল ভিত্তি তা হল  র‍্যান্ডমনেস  বা যাকে আমরা বাংলায় বলছি দৈবতা।

আমাদের পৃথিবীতে অবশ্য সত্যিকারের দৈবতাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। তাই হয়তো আমরা এর নাম দিয়েছি দৈবতা।  পৃথিবী নির্ণেয়, সেখানে দৈবতাকে প্রত্যক্ষ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, এবং প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আমরা যা পাব তা হল কৃত্রিম-দৈবতা। দৈবতা অনেক অংশেই আমাদের কল্পনাপ্রসূত, কিন্তু তাই বলেই কি উপেক্ষনীয়?  ধরা যাক একটি মুদ্রা  শিরসঁচালন করা হল, এবার তার ফল কি হবে তা আমাদের অজানা।  কিন্তু আমরা যদি এই শিরসঁচালনের পদ্ধতি, হাওয়ার গতিবেগ ইত্যাদি সম্বন্ধে নিশ্চিত ধারণা করতে পারি তবে হয়তো এই ফল নির্ণয় করা সম্ভব একটি অপেক্ষকের সাহায্যে। কিন্তু সেসব আমাদের অজানা। অনেকে বলবেন এই কারণে যে দৈবতা কৃত্রিম(pseudo-random), কিন্তু আমি বলব দৈবতা আছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই যদি ঘটনা সম্বন্ধে আমাদের কাছে অতিরিক্ত তথ্য থাকে তাহলে যা হয় তা কেবল নমুনাক্ষেত্রের সংকোচন। একে আমি বলছি শর্তাধীন সম্ভাবনার(conditional probability )  একটি উদাহরণ, যেখানে সমস্ত তথ্য থাকলে সম্ভাবনা ঘনত্ব কেবল  একটি বিন্দুতে ঘনীভূত হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু সে তথ্য আমাদের অজানা, তাই আমরা আমাদের সমগ্র গণনা করি শর্তহীন ভাবে (unconditional probability )। দৈবতার আর এক উদাহরণ ব্যবহৃত হয় প্রায়শই, যা হল ব্রাউনীয় গতি(Brownian motion)। তরল পদার্থের মধ্যে ভাসমান ধূলিকণা অথবা পরাগের বিচলনকে আমরা ব্রাউনীয় গতি মনে করি। সেখানেও যে কোন কল্পনা বা অনুমানের অস্তিত্ব নেই এমন নয়, কিন্তু তার গতিপথকে সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করার ক্ষমতা আমাদের নেই বলেই আমরা কাজ করি পূর্ণ সম্ভাবনা ক্ষেত্রেই।

এই তো গেল সম্ভাবনাতত্ত্ব বিষয়ক পড়াশোনা করার পিছনে আমার যুক্তি, কিন্তু আর একটি প্রশ্ন মনে থেকেই গেল যা হল র‍্যান্ডমনেসের দৈবতা নামকরণের যৌক্তিক ভিত্তি ও সার্থকতা। দৈব শুনে অনেকে মনে করতে পারেন যে এর মধ্যে দেবতা সম্বন্ধীয় কোন অনুভূতি আছে কিনা। এই প্রসঙ্গে উত্থাপন করি  'দৈবাৎ' শব্দটি, যা বহুল ব্যবহৃত হয় আকস্মিক ঘটনাকে বোঝাতে। 'দৈব' শব্দটি ব্যবহৃত হয় বুদ্ধির অগম্য অর্থেও, যা কিনা সোজা ভাষায় অনির্ণেয় । কিছু ব্যক্তি এই যুক্তি দেখাতে পারেন যে কেন না আমরা 'অনির্ণেয়' শব্দটি ব্যবহার করি দৈবতার বদলে? কিন্তু একটি বিজ্ঞানের বিষয়ের ভিত্তিসূত্র একটি নঞর্থক শব্দদ্বারা নামাঙ্কৃত হওয়া বড়ই দৃষ্টিকটু। তবে 'দৈব' শব্দের সাধারণ ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে কেউ যদি পরিবর্তে  কোন শব্দ করতে পারেন তাহলে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিতভাবে আগ্রহী থাকব। আর তাছাড়া সম্ভাবনার কথা তো কেবল জাগতিক নয়, কারণ জগৎ হল নির্ণেয়, আর আমরা দেখছি মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কারণ আমাদের কারবার অনির্ণেয় নিয়ে। সেক্ষেত্রে দৈবতা নিঃসন্দেহে আমাদের একটি বহির্জাগতিক দৃষ্টিকোণের প্রতি প্রথমেই কিঞ্চিৎ এগিয়ে দেয় না কি?

Tuesday, March 17, 2015

মনোরথ

এক সে আমার মিষ্টভাষী যৌবনে 
বইয়েছিল বাতাস কিছু মূর্ছনা । 
সন্ধ্যা হত প্রাত্যহিকী বর্ষণে,  
জলদ ছিল যদিও কিছু আনমনা ।। 

পাল তুলে পার নৌকা কিছু দূরপথে,  
পালকী আবার তেপান্তরে সঙ্গিহীন । 
প্রেম তবুও সারথি সেই মন-রথের,  
আরশিনগর পড়শী খোঁজে রাত্রিদিন ।। 

ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁ

জাতীয়তাবাদের ভিতকে মজবুত করার জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, এবং এতোটাই যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যে এই খেলাগুলো না থাকলেই বোধহয় ভালো হত । পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর কেউ বলছেন বাঙালী হিসাবে আমাদের সমর্থন করা উচিত বাংলাদেশকে, এবং সেই বক্তব্য রীতিমত খবর হচ্ছে কাঁটাতারের অন্য পারে । এছাড়াও কিছু কিছু বিনোদনমূলক পোস্ট বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, এবং নিছক বিনোদন হিসাবে তা আর থাকছে না । এই ভাষা বনাম নাগরিকত্বের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা খোলাচিঠি ছাড়ছেন এদিক ওদিক । 'মনের মানুষ' কে পথের ভিখারি করার জন্য 'অমর প্রেম' যে যথেষ্ট, তা আবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বুম্বাদা । আমার সমবেদনা রইলো তার প্রতি । 

তবে এতো কিছু সত্ত্বেও উপেক্ষাকেই বেছে নিয়েছি এর দাওয়াই হিসাবে । মাত্রা অনুযায়ী খিল্লিও নেহাৎ মন্দ না । তা সে যতই খেলার মাঠ পরিবর্তন নিয়ে জলঘোলা করুন বা বাংলাদেশী প্রশিক্ষকদের পিছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়ার গালগল্প ছাড়ুন । ভারতের চাটুকার শেখ হাসিনার অন্তর্ঘাত করার নির্দেশ এবং নবীন মুক্তিযোদ্ধা মাশরাফির তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা, বা চাপ কাটানোর জন্য যৌনতায় ভাসিয়ে দেওয়ার নিদান, যা নাকি ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা দিয়েছেন বর্তমান ক্রিকেটারদের, সব কিছুই নিয়েছি খেলার ছলে, কারণ আসলে তো এসব কেবল একটা খেলা, তেমন গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু নয় । এছাড়া এটাও আশা করেছিলাম যে নিশ্চয় এমন অনেক মানুষ সে দেশেও পাব, যারা 'মওকা মওকা' ইত্যাদি ভিডিওকে নেবেন কেবল একটি পানীয়ের কোম্পানির বদামি হিসাবে, সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের মানসিকতার উদাহরণ হিসাবে না দেগে দিয়ে । 

আমার এক সিনিয়ার খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল গে-লর্ড নামক এক দোকানে । নাহ এই নামের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞান নেই , তবে খাবারের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আছে, এবং সেই কারণেই যাওয়া ।  দিব্যি তরিবৎ করে চলছিল খাওয়া দাওয়া, এই সেই সঙ্গে গাল-গল্প, সেই সময় মওকা বুঝে ঢুকে গেলেন সোহেল ভাই । পুরনো ঢাকার বাসিন্দা সোহেল ভাই কাজ করেন এখানেই । বাংলাভাষায় কথা শুনে চলে এলেন গন্ধে গন্ধে । আমাদের সবার পাতের চিংড়ীর দিকে তাকিয়ে তার বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হল না আমরা কোন পারের মানুষ । তার কথাও খেলা খেলা দিয়ে শুরু, খেলা খেলা দিয়ে শেষ, কিন্তু সবই মজার ছলে । বললেন তিনি 'মওকা মওকা, ঠিক আছে, এখন কিছু বলছি না, মাঠে দেখিয়ে দেব' । আমরাও মেতে উঠলাম খানিকক্ষণ খেলা সম্পর্কিত আলোচনায় । মুশফিক, শাকিব, সৌম্য, মাশরাফি এদের নিয়ে, সমালোচনা হল তামিম ইকবালের । খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকবার অঙ্গীকার হল । এরপর আমাদের একজন তার ক্ষোভ ব্যক্ত করলো মেনুতে গুলাব জামুনের অনুপস্থিতি সম্বন্ধে । তিনি বললেন দেখি কি করা যায় । বাংলাদেশীদের আতিথেয়তার কথা শুনেছি, তার প্রমাণ পেলাম যখন নিজের তরফ থেকে আমাদের জন্য এক বাটী গুলাব জামুন হাতে তিনি উপস্থিত হলেন । আমারাও আকণ্ঠ ধন্যবাদ জানালাম তাঁকে । এবং আমার আস্থা কিছুটা হলেও ফিরল শুভবুদ্ধির প্রতি । তার ব্যপ্তি কতটুকু সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া গেল । 

শেষে শুধু মেজাজ বিগড়ে দিয়ে গেলেন একজন তামিল কর্মী, যিনি তার অপরূপ জ্ঞানভাণ্ডারের দরুন বাংলাভাষায় কথাবার্তা শুনেই আমাদের বাংলাদেশী জ্ঞান করলেন । কূপমণ্ডূকের দল তো আসলে দুই তরফেই আছে । 


Friday, March 13, 2015

পানীয়ঃ প্রয়োজনীয়তা বনাম বিলাসিতা

বাঙালী আঁতেল-মাত্র যে পানীয়ের সাথে নিজেকে একাত্ম করতে ভালবাসে, বা বলা যায় যার দরুন তার আঁতলামির সূচক লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় তা হল চা । সেই ভেলায় আমিও যে কখনো গা ভাসাইনি এমনও নয়, চিরাচরিত বাঙালী মানসিকতা অনুযায়ী আঁতেল হওয়ার শখ কার না জন্মায় । গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসেছিলাম আমিও কয়দিনের জন্য, কয়দিন বললে ভুল হবে, রীতিমত অনেকদিন, অন্তত মানবজীবনের স্থিতিকালের কথা বিচার করলে তাকে কোনরূপেই নগণ্য বলা চলে না । স্কুল জীবনে চা খেতাম না একদমই অবশ্য, এখনো তেমন খাই না । মাঝখানে কেবল পাঁচ বছর খেয়েছিলাম কলেজে পড়ার সময়, অনেকটা দাম্পত্যের মধ্যভাগে অন্য জিভেগজার মতই বলা চলে । যৌবনযাপনের স্রোতে ভেসে এরকম অল্প কিছু ভুলচুক করেনি এমন বাঙালী মেলা ভার, তবে তুল্যমূল্যের বিচারে আমি ক্ষুদ্র পাপী হিসেবেই পরিগনিত হব বলে বোধ হয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের চোখে । এই আধুনিক যুগের সান্ধ্যবাসর উনি চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করলে পরিস্থিতি কি হত সে কথা মানসচক্ষে দেখতে পাওয়া খুব একটা দুষ্কর নয় । 

বনহুগলী চত্বরের প্রায় সমস্ত চায়ের দোকানেই খেয়েছি, বেশিভাগ পরস্মৈপদী । অভিষেক বলে একজন বন্ধু ছিল, তার মাঝে মাঝে চায়ের তেষ্টা পেত । আমি ছিলাম তার চায়ের গেলাসের ইয়ার । সেই সুযোগে বিনামূল্যে চা খেয়ে আসতাম । খুব একটা ভাল লাগতো যে এমন নয়, তাও খেতাম । যেটা তৃপ্তি করে খেতাম সেটা হল তাপসদার দোকানের স্পেশাল চা, সঙ্গে গজা । ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছি তাপসদার দোকানের বেঞ্চিতে । চা নিয়ে বা না নিয়ে, তাপসদা এসে পাখা বন্ধ করে দিয়েছে, আবার হয়তো কোন মহানুভব এসে উপস্থিত হয়েছে হস্টেল থেকে, এক কাপ চা নিয়েছে, এবং আমরা আবার খানিকক্ষণ মলয়বাতাসে ভেসে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। 

চিরায়ত বাঙালী সমাজব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত এই পানীয়ের মূল্যায়ন করার মত ক্ষমতা আমি রাখিনা, নিজেকে তার যোগ্য বলে মনেও করিনা । নব্য সংস্কৃতিতে বিকশিত হওয়া বিশ্বমানবের কাছে হয়তো এই অনুরাগ স্বাভাবিক বলে নাও হতে পারে, কিন্তু দ্বিপ্রহরে স্টারবাক্সের কফির স্রোতের সাথে তুফানতোলা সেই সব যুক্তি অনুধাবন করার মত ক্ষমতা এখনো আমি অর্জন করতে পারিনি বলেই মূল্যায়ন হতে আমি শতহস্ত দূরে, সন্ধ্যাবসরের পানীয় সমভিব্যহারে পরিবেশিত বক্তব্যের কথা তো বাদই দিলাম । নিজের এই অক্ষমতা আমি নতমস্তকে স্বীকার করছি ।  

যুগোপযোগী রসাস্বাদন ব্যতীত বুদ্ধিজীবী পরিমণ্ডলে সুনাম অর্জন করার পথ খুব একটা সুগম নয়, পদে পদে তা বিলক্ষণ টের পেয়ে থাকি, কিন্তু ব্যঘ্রচর্মে আচ্ছাদিত শৃগাল হয়ে যে বেশীদিন সে মহলে টিকতে পারব সে আশা দেখিনা । এবং শ্রীনাথ বহুরূপীর মত লেজ কেটে বিদায় নিতেও মন চায়না । তাই মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয় বলে মনে করে থাকলেও, রণে ভঙ্গ দিলাম, হয়তো যথেষ্ট সংগ্রামী ইতিহাসের শক্তি নেই সাথে বলে । 

সাহচর্য দীর্ঘস্থায়ী না হলেও উপাদেয় ছিল নিঃসন্দেহে, তবে আধুনিক কাফের স্বাচ্ছন্দ্য সেই ভাঙ্গাচোরা কাঠের বেঞ্চিতে খুঁজলে যে তৃপ্তি মিলবে এমন কথা বলতে পারিনা । সত্যি তো, সারা দিনরাত আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে ভাবনা চিন্তার মাধ্যমে দেশোদ্ধারের পর তো এই দেহের প্রয়োজন কিছু নরম গালিচার । এই সরল সত্যটুকু যদি অনুধাবন না করে উঠতে পারেন পাড়ার বিশুদা, তবে কেমন করে তিনি পাল্লা দেবেন স্টারবাক্সের সাথে? সংগ্রামী শ্রেণীর সম্বন্ধে এটুকু সচেতনতা না হলে আর কিসের সে প্রলেতারিয়ত ।  


আমি সামান্য মানুষ, খুব বেশি হলে একটা এলাচ, দু ফোঁটা আদার রস, বিলাসিতা সামান্যই । এই হল মধ্যপন্থা, যদিও তাও সইল না কপালে বেশীদিন । ধরি মাছ না ছুঁই পানি কি আর বেশীদিন চলে, সেই প্রিয়তম মৎস্যের সাথে বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো, অবগাহনভীতি থেকে । হারিয়ে যাব জানি, যেমন গিয়েছে যুগ যুগ ধরে মানুষ, সময়ের সাথে সাথে আত্মপরিচয়কে যথেষ্ট পরিমানে পরিবর্তিত করতে পারেনা বলে বিবর্তনপ্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে । বিলাসিতাই তো ক্রমে একদিন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে, সেই সহজ সত্য যুগ যুগ ধরে অসংখ্য উদাহরণ দেখেও অনুধাবন না করতে পারার যা অক্ষমতা তো কিছু কম অপরাধ নয় । 

Wednesday, March 11, 2015

পাশের জল

আমার কাছে দু হাত দুরেই আমার পাশের জল
অল্প পাপের পরে তাতেই চুবিয়ে ফেলি হাত 
পাপ ভেসে যায় অন্য পারে সেই ভেবে উচ্ছল,  
অন্ধকারটা মন থেকে আজ নাই হল উৎখাত।  

গাত্রদাহ জুড়িয়ে নিতে ডুব দিয়েছি জলে 
আপাততেই বেদম খুশি, ভবিষ্যতকে গুলি 
মারছি আজও, একেই অবিমৃষ্যকারী বলে, 
জেনে বুঝেই তবুও তো সেই মায়ার জালে ভুলি।

জলকে চলে ফের ছুঁয়ে যাই অবাঞ্ছিত বালি
অভিপ্রেত পথ না পেলে কি আর চলে করা
আবার নাহয় ঈপ্সিতকে খুঁজতে যাব কালই
আপাতত এখন চলুক স্বপ্নপ্রাসাদ গড়া ।