Sunday, January 25, 2015

সরস্বতী ও কষ্টসাধনা

'সরস্বতীর সেবা করি অন্ন যে তাই জুটল না
লক্ষ্মী গেল অন্য পথে দুঃখ যে তাই ঘুচল না'



বোধকরি সত্যি । যদি নাও হওয়ে থাকে তবু যে পরিস্থিতি এবং পরিবেশে বড় হওয়া তাতে মজ্জাগত হয়ে গেছে এই শিক্ষার সাথে অর্থের বিবাদ । এঁদের সহাবস্থান যেন কোন প্রকারেই সম্ভব নয় এরকম একটা চিন্তা মনের মধ্যে ভরে দেওয়া । শুধু শিক্ষাই নয় সঙ্গীতচর্চা ইত্যাদি আছে এই দলে । নিজেকে রিক্ত করে তবে শিক্ষা সঙ্গীত ইত্যাদির চর্চা করা । তার মধ্যে অর্থের অনধিকার চর্চা যেন পুরো সাধনাকে করে দেবে ধূলিসাৎ । কালিদাস, বিদ্যাসাগর ইত্যাদি  সরস্বতীর বরপুত্র হিসাবে প্রচারিত তাঁদের সবার জীবনের দারিদ্র্যের কথা যেন আমরা ইউলোজাইজ করি জাতিগত ভাবে । সাধনার অঙ্গ হিসেবে যেমন সন্ন্যাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংযম এবং কষ্টসাধনার কথা বারবার ঘুরে ফিরে আসে আমাদের বক্তব্য এবং লেখনীতে । এই বিষয়ে আমাদের প্রিয় উক্তি 'কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না ' , কিন্তু কি করলে মেলে সে প্রশ্ন এরথেকে সরাসরি পরিষ্কার নয় । আর কষ্টকে আক্ষরিক অর্থে নিয়েই মানুষ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে । যার যত আত্মত্যাগ তার তত সিদ্ধিলাভ এই হল আমাদের মনস্তত্ব ।

মহাত্মা গান্ধীকে জাতীর জনক হিসাবে শ্রদ্ধা করে অনেকে । তবে ঘুরে ফিরে যেন আসে এমন একটা ধারণা 'কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়া বল আমি ভারতবাসী' । ভাল কথা, কিন্তু তা বলে এমন যেন না হয় যে কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হতে অসম্মত হয়েও যে ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে দাবী করে তার সে দাবীকে আমরা নস্যাৎ করে দিলাম । সরস্বতী প্রীতির মধ্যেও যেন ঢুকে পড়েছে সেইরকম একটা ভাব । অথচ আমাদের দেশের উন্নতিসাধনের জন্য যা দরকার তা হল এই অনন্ত কলহ দমন করে দুই সতীনের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্ক স্থাপন করা । পরম শ্রদ্ধেয় বঙ্কিমবাবু বলে গেছেন সে কথাই । যুগযুগ ধরে সরস্বতীর বরপুত্রেরা সহায়তা লাভ করেছেন লক্ষ্মীর কিন্তু এখন যেন আত্মগরিমা আমাদের এমনি প্রবল যে আমরা অস্পৃশ্যের ন্যায় জ্ঞান করি লক্ষ্মীকে । কিন্তু সমাজের স্বার্থে এবং সমাজের অন্তর্ভুক্ত জনমানুষের স্বার্থে সামঞ্জস্য বিধেয় এবং তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আশু প্রয়োজন । 

No comments:

Post a Comment